পদ্মা সেতু : মোটরসাইকেল চলাচল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য টাইগ্রেসরা

পরের সংবাদ

ইজতেমার প্রথম পর্ব : মোনাজাতে বিশ্ব শান্তি ও কল্যাণ কামনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

টঙ্গী প্রতিনিধি : বিশ্ব মানবতার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা গতকাল রবিবার শেষ হয়েছে। মোনাজাতের সময় সমগ্র ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। আমিন আমিন আল্লাহুমা আমিন, ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর ও আশপাশের এলাকা। ধনি-গরিব, নেতাকর্মী নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশা-গোষ্ঠীর মানুষ আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সবাই মহান আলাহর দরবারে নিজেকে সমর্পন করে নিজ নিজ গুণা মাফের জন্য আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলীগ জামাতের বাংলাদেশের মুরব্বি কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. যোবায়ের আহম্মেদ।
সকাল ১০টায় মোনাজাত শুরু হয়ে ১০টা ২০মিনিট পর্যন্ত চলে। এ মোনাজাতে দেশী-বিদেশি কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নেন। মোনাজাতের সময় লাখো মুসল্লি দু’হাত তুলে আমিন-আমিন বলে মহান আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করেন। মোনাজাতে অংশ নিতে বাদ ফজর থেকে লাখ লাখ মুসল্লি চারদিক থেকে ইজতেমার ময়দান অভিমুখে আসতে থাকেন। যে যেভাবে পেরেছেন মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় টঙ্গী হয়ে ওঠে সব পথের মোহনা। দোয়ায় হে আল্লাহ, হক্ক ওয়ালাদের রহমত করেন। হে আল্লাহ, যারা রোগে আক্রান্তদের শেফা দান করেন। হে আল্লাহ, বিশ্ব ইজতেমাকে কবুল করেন। হে আল্লাহ, আমাদের দোয়া কবুল করেন ইত্যাদি গভীর আকুতি-মিনতিপূর্ণ ভাষায় মোনাজাত করা হয়। আগামী শুক্রবার থেকে মাওলানা সাদপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্বের সমাপনী দোয়া অনুষ্ঠিত হবে ২২ জানয়ারি রোববার।
আবেগঘন আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতে গিয়ে মাওলানা মো. যোবায়ের কান্নায় ভেঙে পরেন। এ সময় উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লির মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। মোনাজাত চলাকালে দক্ষিণে বিমানবন্দর, উত্তরে গাজীপুর বোর্ডবাজার পূর্বে পূবাইলের মাঝু খান এবং পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত অন্তত প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মুঠোফোন, রেডিও এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি স¤প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি মোনাজাতে অংশ নেন। স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৯৬টি দেশ থেকে ১১ হাজার ২৮৬ জন বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা জানায় ৬৩টি দেশের ৫,৩৮৪ জন তাবলীগ অনুসারী বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। আখেরি মোনাজাতকে ঘিরে গোটা বাংলাদেশর নজর ছিল টঙ্গীতে। রাজধানী ঢাকাও ছিল ফাঁকা। মোনাজাতে শরিক হওয়ার জন্য দিনটি সরকারের ঐচ্ছিক ছুটি ছিল এ এলাকায়।
মুসল্লিদের বাঁধভাঙা জোয়ার : গতকাল শনিবার টঙ্গী হয়ে উঠেছিল সব পথের মোহনা। আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা টঙ্গী অভিমুখে আসতে থাকেন শুক্রবার থেকে। বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা ছাড়াও কেবলমাত্র আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা বাস, ট্রাক, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চ ও ট্রলারে করে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন। টঙ্গী ও রাজধানী ঢাকার সরকারি বেসরকারি অফিস, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বত্রই ছিল পূর্ণ ছুটির আমেজ। শনিবার সকাল থেকে টঙ্গীমুখী সব প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় দীর্ঘ পথ হেটে টঙ্গী পৌঁছতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। কয়েক লাখ মানুষ রাতেই ইজতেমার মাঠ কিংবা আশপাশের বাসা-বাড়ী, ভবন, ভবনের ছাদে এমনকি গাছতলায় অবস্থান নেন। শনিবার ভোররাত থেকে যানবাহন শূন্য সড়ক-মহাসড়ক ও নদীপথে টুপি পাঞ্জাবি পরা মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার শুরু হয়। চারিদিকে যত দূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ । সকাল সাতটার মধ্যে গোটা এলাকা জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত হয়।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মুনাজাতে আগের তুলনায় নারীদের অংশ গ্রহণ বেড়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সি নারীকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে টঙ্গী পৌঁছে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। মোনাজাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইজতেমার চারপাশে প্রায় ৩ কি.মি. এলাকাজুড়ে মহাসড়ক ও শাখা সড়কগুলোতে মাইক বসানো হয়।
ফিরতি যাত্রায় বিড়ম্বনা: আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পর এক সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ ফিরতে শুরু করলে সর্বত্র মহাজটের সৃষ্টি হয়। টঙ্গী স্টেশনে ফিরতি যাত্রীদের জন্য অপেক্ষমাণ ট্রেনগুলোতে উঠতে মানুষের জীবনবাজির লড়াই ছিল উদ্বেগজনক। ট্রেনের ভিতরে জায়গা না পেয়ে ছাদে ও দরজা-জানালায় ঝুলে শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে দেখা যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক,কালীগঞ্জ ও আশুলিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ফিরতি মুসল্লিদের বিড়ম্বনা ও কষ্টের সীমা ছিল না।
ময়লা আবর্জনার ভাগার : ইজতেমা ময়দানের চারপাশে মুসল্লিদের ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট খাবার, ময়লা-আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছে। নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার না করায় এগুলো জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ভিক্ষুকদের আনাগোনা : ইজতেমা ময়দানের চারপাশে ছিল ভিক্ষুকদের আনাগোনা। তাদের পঙ্গু, অর্ধনগ্ন ও বিকৃত চেহারায় অনেককে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়।
ইজতেমায় হকারদের উৎপাত : প্রতি বছর ইজতেমা ময়দানের বেশ দূরত্ব বজায় রেখে হকাররা তাদের বিভিন্ন মালামালের পসরা সাজিয়ে বসত। কিন্তু এ বছর খোদ ময়দানের ভেতরেই তাদের শীতের টুপি, পাঞ্জাবি-পায়জানা, মধু, আতর-তাসবিহ-টুপি ও মেছওয়াকসহ নানা ধরনের পণ্যের দোকান সাজিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। এতে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের যাতায়াতে বেশ কষ্ট হয়।

এদিকে, ইজতেমা ময়দানে মোট ৯ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে জানাজা শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তাস্তর করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুসল্লিদের আসতে এবং ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারের প্রতি ইজতেমা আয়োজক কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়