রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় এমপিরা : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের ক্ষমতায় আসার প্রত্যয়

আগের সংবাদ

বরিশালে ড্রেজিং করা বালু ফের নদীতে, খোয়া যাচ্ছে টাকা!

পরের সংবাদ

ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ : বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের উন্নয়নে নতুন পরিকল্পনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হাসান গোর্কি, রংপুর থেকে : রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটির কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নেয়া হয়েছে নতুন করে উন্নয়ন পরিকল্পনা। খুব শিগগিরই এই উন্নয়ন কার্যক্রম সবার দৃষ্টিগোচর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্পে থাকবে নারীদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প, ধাত্রী বিদ্যা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত নারী সমাজ গড়ে তোলা। আধুনিক ডিজিটাল লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরির বিশেষত্ব হচ্ছে দেশবিদেশের নারীদের লেখা এবং নারীদের সম্পর্কিত বিভিন্ন বই এখানে পাওয়া যাবে। বিদ্যমান ভবন সংস্কারের পাশাপাশি নির্মিত হবে একাধিক নতুন অবকাঠামো। গড়ে তোলা হবে বেগম রোকেয়ার সংগ্রহশালা।

এছাড়া প্রাচীন নির্দেশনার প্রমাণ স্বরূপ বেগম রোকেয়ার আঁতুর ঘর, মসজিদ খিলান এবং কবরস্থান নান্দনিক রূপ দেয়ার পাশাপাশি বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের বিখ্যাত গান, কবিতা এবং উপন্যাস চিত্রায়ন করা হবে। সব কিছুর লক্ষ্য হচ্ছে এলাকাটিকে পর্যটকবান্ধব রূপ দেয়া। থাকবে মুক্তমঞ্চ। যেখানে প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হবে নানা অনুষ্ঠান। এছাড়াও পরিকল্পনায় আছে চিত্রাঙ্কন এবং গানসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং সংকটময় সময়ে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে জন্ম গ্রহণ করেন বেগম রোকেয়া। মিঠাপুকুর তথা রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রাবন্দে তিন একর ১৫ শতক জমির ওপর বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করাসহ ২০০১ সালের পহেলা জুলাই উদ্বোধন করেছিলেন। প্রথমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্মৃতিকেন্দ্রটি পরিচালিত হলেও ২০০৪ সালের ৪ অক্টোবর স্মৃতিকেন্দ্রটির দায়িত্ব নেয় বাংলা একাডেমি।
স্মৃতিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল বেগম রোকেয়ার জীবন কর্ম সম্পর্কে গবেষণা, তার গ্রন্থাবলির অনুবাদ, প্রচার ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান। ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়। একই সালের ১৭ মার্চ অলিখিতভাবে স্মৃতিকেন্দ্রটিতে বিকেএমইর শ্রমিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়। শুরু হয় পোশাক শ্রমিক তৈরির প্রশিক্ষণ। এর উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন সেনা প্রধান মঈন উ আহমেদ।
তবে স্মৃতিকেন্দ্রটির মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত করে সেখানে পোশাক শ্রমিক তৈরির প্রশিক্ষণ বন্ধ এবং বিকেএমইকে উচ্ছেদ করার জন্য হিউম্যান রাইট্স এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ এবং পায়রাবন্দ স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল গত ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে একটি রিট করেন। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেগম রোকেয়ার স্মৃতিকেন্দ্রের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং শ্রমিক তৈরির কারখানা বন্ধের আদেশ দিলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ২০১২ সালের পহেলা মে বিকেএমইকে বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে ৮ জন লোকবল নিয়ে স্মৃতি কেন্দ্রের কার্যক্রম বলতে পাঠাগার চালু আছে।
বাংলা একাডেমির প্রশাসন মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র উন্নয়নে বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আর এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো বেগম রোকেয়া প্রান্তিক নারীদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছেন তা বাস্তাবায়ন এবং এলাকায় ব্যাপক পর্যটকের আগমন নিশ্চিত করা। এতে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্প পরিকল্পনার শতকরা ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে বাংলা একাডেমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর জন্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে এ কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র চালু এবং সচল রাখতে যারা নিরলসভাবে কাজ করছেন তাদের অন্যতম একজন স্থানীয় বাসিন্দা রাজু আহমেদ বলেন, আশা করছি প্রকল্পটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি পূরণ হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়