রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় এমপিরা : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের ক্ষমতায় আসার প্রত্যয়

আগের সংবাদ

বরিশালে ড্রেজিং করা বালু ফের নদীতে, খোয়া যাচ্ছে টাকা!

পরের সংবাদ

বিবিসির ৮১ বছরের শ্রেষ্ঠ অবদান ১৯৭১ ডেসপাচ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১১ অক্টোবর ১৯৪১ বিবিসি বাংলার যাত্রা শুরু। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের উদ্বোধন হয় ১৯ ডিসেম্বর ১৯৩২। এ পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড সার্ভিস বহু ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে, খরচ সামাল দিতে না পারায় আবার বন্ধও করে দিয়েছে। এমনকি বাংলাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে অনেক আগেই।
শেষ পর্যন্ত ৮১ বছর সক্রিয় থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ বাংলা ভাষায় সর্বশেষ সম্প্রচার করে বিবিসি বাংলা বন্ধ হয়ে গেল। বাংলাদেশের জন্য বিবিসির শ্রেষ্ঠ অবদান ১৯৭১ ডেসপাচ। জাতীয় জীবনের সংকটে সত্যটা জানার জন্য আমরা রেডিওর নব ঘুরাব, কিন্তু বিবিসি বাংলাকে আর পাব না। আফসোস থেকেই যাবে। বিবিসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ওয়ার্ল্ড সার্ভিস থেকে ভাষান্তরিত ১৯৭১-এর কয়েকটি ডেসপাচ উপস্থাপন করা হচ্ছে।

ঢাকা থেকে ডেসপাচ
৮ ডিসেম্বর ১৯৭১
পাকিস্তানে যে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানে তা তেমন প্রচারিত না হওয়ায় সেখানকার প্রতিক্রিয়া তেমন জানা সম্ভব হয়নি।
একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, দ্বৈত ভূমিকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী জুলফিকার আলী ভুট্টোই হবেন সরকারের নির্ভরযোগ্য নেতা। যদিও নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে, তার বয়স ৭৮ বছর এবং যদিও তিনি বয়সের তুলনায় দুর্বল নন, স্পষ্টত ভুট্টো সাহেবের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বেশি।
ভারতের ব্যাপারে ভুট্টো সাহেব বরাবরই সমঝোতাহীন অনমনীয় ভূমিকা পালন করে এসেছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রেক্ষাপট থেকে দেখলে তিনি নিঃসন্দেহে উৎসাহিত হবেন যে, পাকিস্তান কাশ্মিরের অনেকটাই অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে। সন্দেহ নেই, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রকৃত অবস্থা তাকে অবহিত করা হয়েছে। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা এখন মাস তিনেক ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো নির্দিষ্ট আলোচনাবৃত্তের সার কথাটিই বিবেচনা করছেন- এখান থেকে হাজার মাইল দূরের পূর্ব পাকিস্তানকে যুদ্ধের সময় ভারতের হাত থেকে রক্ষার কঠিন চেষ্টা না করে এবং পশ্চিমাংশে সমপরিমাণ সীমান্ত বৃদ্ধির দর-কষাকষি করা উত্তম এটিরই তাত্ত্বিক রূপ দিতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই যুক্তিটি কার্যকর হতে পারে যদি বিশ্বের চাপে বৈরিতার অবসান ঘটে, যেমনটি ঘটেছিল ১৯৬৫-এর যুদ্ধে। কিন্তু এবার এ পর্যন্ত অস্ত্রবিরতি নিশ্চিত করার পর উদ্বেগ ব্যর্থ হয়েছে।
এখনো পূর্ব পাকিস্তানের ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে। এটা বরং আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আজই শনিবার ভোরে আদমজী পাটকলের শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় ভারতীয় বোমারু বিমান থেকে চারটি বোমা বর্ষিত হয়, একটির বিস্ফোরণ ঘটেনি। অপর তিনটি ৬০০ বর্গ গজেরও বেশি এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে। শ্রমিকদের নিতান্ত সাধারণ বাসস্থান উড়িয়ে দেয়াসহ বোমাবর্ষণে আনুমানিক ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে এবং ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে আছে আরো প্রায় আড়াইশ জন। ধ্বংসাবশেষ খালি হাতে সরিয়ে শ্রমিকরা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
(এই ডেসপাচটি পাঠিয়েছেন জন ওসম্যান)
দিল্লি থেকে ডেসপাচ
১১ ডিসেম্বর ১৯৭১
কলকাতা থেকে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই (প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া) এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও জানিয়েছে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ রয়্যাল কানাডিয়ান এয়ারফোর্সের একটি এবং রয়্যাল এয়ারফোর্সের (ব্রিটেন) একটি হারকিউলিস উড়োজাহাজ ঢাকা এয়ারপোর্টে অবতরণ করতে দেয়নি, ফলে তা কলকাতায় ফিরে এসেছে। রয়্যাল এয়ারফোর্সের ৩টি এবং কানাডিয়ান এয়ারফোর্সের একটি- চারটি উড়োজাহাজের এই দুটোর বিদেশি নাগরিক প্রত্যাহার করে আনার জন্য সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভারতীয় বিমানবাহিনী মোট ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিল। ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা এবং লন্ডন সময় শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা। বিদেশিদের তুলে নেয়ার অনুমতি পাকিস্তান দিয়েছিল। নয়াদিল্লি থেকে জন ওসম্যান জানিয়েছেন, এখন মনে হচ্ছে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।
ঢাকা থেকে পূর্বপরিকল্পিত প্রায় ৫০০ বিদেশিকে উদ্বাসনের (ইভাকুয়েশন) জন্য জাতিসংঘের পরিচিতি নিয়ে আগত কানাডিয়ান উড়োজাহাজকে প্রথম ঢাকা অবতরণ করতে না দিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়; তারপর রয়্যাল এয়ারফোর্সের একটি বিমানকেও একইভাবে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আমি বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি, উড়োজাহাজ দুটো অবতরণ করতে না দেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জাহাজ দুটো শত্রæদেশ ভারত থেকে উড়ে এসেছে। এদিকে ভারতও এসব উড়োজাহাজের কলকাতা হয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছে, যেন উড়োজাহাজের পুরো ফ্লাইট প্ল্যান জানতে পারে এবং জাহাজগুলো মানবিক কারণ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করে দুর্যোগ এড়ানো যায়।
ভারতের এই চাহিদার পরিবর্তন ঘটবে কি না, এখনই তার পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না- একই সঙ্গে পাকিস্তানও আসলে কী চাচ্ছে, তাও বলা যাচ্ছে না, হয়তো বিদেশিদের জিম্মি করে রেখে সরাসরি ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা- যাতে রাষ্ট্রগুলো জাতিসংঘে ও অন্যত্র তাদের সমর্থন জানায়। এ ধরনের সম্ভাবনা অমানবিক এবং পাকিস্তান এটাই চাচ্ছে তা মনে করারও কোনো কারণ নেই। ভারতের দিক থেকে তাদের চাহিদা আরো নমনীয় করে আনলে সমস্যার সমাধান সহজ হতো। কানাডিয়ান উড়োজাহাজ ব্যাংকক হয়ে এবং রয়্যাল এয়ারফোর্সের উড়োজাহাজ সিঙ্গাপুর হয়ে আসতে পারত যদি ভারতের অন্যান্য চাহিদা ও শর্ত আগেই মেটানো যেত।
এই পরিস্থিতিতে আমরা কেবল অপেক্ষা করে দেখতে পারি, কূটনৈতিক উদ্যোগ যেন এই অচলাবস্থা নিরসনে কার্যকর হয়।
আমার এই সংবাদ যখন প্রেরিতে হচ্ছে, ভারতীয়দের দেয়া নিরাপদ সময়ও পার হয়ে যাচ্ছে।
(দিল্লি থেকে এই ডেসপাচটি পাঠিয়েছেন জন ওসম্যান)

ঢাকা থেকে ডেসপাচ
১১ ডিসেম্বর ১৯৭১
ঢাকার রাস্তায় এখন ঠেলাগাড়িতে মালামাল ভরে সপরিবার স্থানান্তরের দৃশ্য বেশি দেখা যাচ্ছে- যেসব এলাকা ভারতীয় বিমান আক্রমণের শিকার হয়েছে বা যেসব এলাকার আকাশপথে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং নদী-তীরবর্তী নারায়ণগঞ্জ এলাকা যেখানকার লোকজন মনে করছে, জলপথে ভারতীয় বাহিনীর আগমন ও আক্রমণ ঘটতে পারে, তারাই নিজ এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে চলে যাচ্ছে।
বিমান আক্রমণের সময় ঢাকার লোকজন তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার জেনারেল নিয়াজিকে ঢাকায় দেখা গেছে। তাকে নিয়ে যে গুজব রটেছিল- তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে গেছেন, তিনি দেখা দেয়ায় এই গুজবের অবসান ঘটল।
(দিল্লি থেকে এই ডেসপাচটি পাঠিয়েছেন রোনাল্ড রবসন)

নয়াদিল্লি থেকে ডেসপাচ
১০ ডিসেম্বর ১৯৭১
নয়াদিল্লি থেকে জন ওসম্যান জানাচ্ছেন, অল ইন্ডিয়া রেডিও বলেছে, ভারতীয় বাহিনী কার্যত ঢাকা শহর ঘিরে ফেলেছে এবং বাইরের পৃথিবী থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
মেঘনা নদীর পূর্বতীরে তিনটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর দাপ্তরিক ঘোষণা অনুযায়ী ভারতীয় দখলে চলে যাওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ঢাকার সব তোরণ খুলে গেছে বলেই এখান থেকে মনে হচ্ছে। শহর তিনটি হচ্ছে চাঁদপুর নদীবন্দর, দাউদকান্দি ও আশুগঞ্জ।
তিনটির মধ্যে ঢাকায় প্রবেশের সবচেয়ে সহজপথ আশুগঞ্জ হয়ে কিন্তু আশুগঞ্জ থেকে পশ্চিমতীরের সঙ্গে সংযোজক সেতুটি পিছু হটতে থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী উড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দুটি স্থান থেকে ঢাকামুখী রাস্তায় কয়েকটি নদী পাড়ি দেয়ার দরকার হবে- নদীর এই বাধাকে ভারতীয় কমান্ডাররা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষাব্যুহ বলে বর্ণনা করেছেন। কাজেই এখনই সব শেষ হয়ে যায়নি।
অল ইন্ডিয়া রেডিও জানিয়েছে, ঢাকা কঠিনভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে এবং পাকিস্তানিরা সম্ভবত শহরের সীমানায় শেষ প্রতিরক্ষামূলক কোনো পরিকল্পনা করতে চলেছে। এদিকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বর্ণনায় তিন বাহিনীর সাফল্যের বন্যা বয়ে যাচ্ছে এবং কমান্ডাররাও সরাসরি কথা বলছেন- তাদের বর্ণনায় বাড়াবাড়ি প্রমাণিত হলে এটি ভালো পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবে না। যেমন- পশ্চিম রণাঙ্গনের এয়ার অফিসার কমান্ডার যিনি একজন এয়ার মার্শাল এবং প্রকৌশলী দাবি করছেন পশ্চিমে পাকিস্তান এয়ারফোর্সের এক-চতুর্থাংশ তারা ধ্বংস করে ফেলেছেন, আবার পূর্ব রণাঙ্গনে দুদিন ধরে দাবি করা হচ্ছে, এখানে পাকিস্তান এয়ারফোর্স সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
আসামের রাজধানী শিলং থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টে জানা যায়, ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জে নৌপরিবহন যানের ওপর বোমাবর্ষণ করেছে। এতে ইস্টার্ন কমান্ডে কর্মরত সেনাদের অবশিষ্টাংশ তুলে নেয়া হচ্ছিল। এতে বলা হয়েছে, জাহাজ থেকে শুরু করে বজরা পর্যন্ত প্রায় একশ নৌযান ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এসব নৌযানে করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ- এসব স্থান দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু ভারতীয় সম্প্রচার এবং লিফলেট বারবার বলে যাচ্ছে এতে কোনো আশা নেই। এর মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনী দাবি করেছে, গভীর সমুদ্রে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, যখন-তখন করাচি ও অন্যান্য পাকিস্তানি বন্দরে আক্রমণ চালাচ্ছে। এখান থেকে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, তাতে জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে যে, পাকিস্তানের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন হয়ে পড়েছে।
(এই ডেসপাচটি জন ওসম্যানের পাঠানো)

রাওয়ালপিন্ডি থেকে ডেসপাচ
১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১

পাকিস্তানের জনগণ যখন উদগ্রীব হয়ে জাতিসংঘের শান্তি উদ্যোগে অগ্রগতি দেখতে চাচ্ছে, তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন রাজধানী ঢাকার প্রতিরক্ষায় ব্যর্থতার পর কী ঘটতে যাচ্ছে। রাওয়ালপিন্ডি থেকে জানাচ্ছেন হ্যারল্ড ব্রিলে :
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র যখন অত্যন্ত কার্যকরভাবে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের প্রতিরক্ষার কথা বলছেন, তখন পূর্বাঞ্চলের পাকিস্তানি সৈন্যরা নিজেদের ব্যাপক পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিস্তারিত বলতে রাজি হয়নি। একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, এটাই তো শত্রæরা জানতে চাইবে, তবে পথ খুঁজে পেতে তাদের অনেক কষ্ট হবে এবং অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটবে। সেনাবাহিনী নিজেদের ভাষায় পাকিস্তানের এলিট, তারা শেষ সৈন্যটি জীবিত থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণার পরদিন ঢাকার রাস্তায় স্টেলিনমাড ডে উদযাপনের প্রস্তুতির কথা বলছেন। ভারতীয় প্যারাট্রুপারদের হেলিকপ্টার থেকে অবতরণ এবং বারবার পাকিস্তানি ব্যুহ ভেদ ভারতীয়দের কার্যত অবাধে পূর্ব পাকিস্তানের আকাশে রণনৈপুণ্য দেখিয়ে যাচ্ছে, যেখানে পাকিস্তানিরা বলছে, আকাশপথে আগত শত্রæদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া এবং তাদের অগ্রগতি রহিত হয়েছে। পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর সামান্য যা ছিল বেশ আগেই তার কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেছে।
কোথাও অপারেশন চালানোর মতো শক্তি অবশিষ্ট আর নেই। পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি যত ডাহা বাস্তবই হোক না কেন, পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মনোবলে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, কোনো দুর্বলতার চিহ্ন দেখা যায়নি। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে ভারতীয় সৈন্যদের ভয়ংকর নাস্তানাবুদ এবং বহু হতাহতের বানোয়াট সংবাদ পাকিস্তানি বীরত্বগাথা প্রকাশ করে চলেছে। এই হচ্ছে এখন পশ্চিম পাকিস্তানের মানসিকতার ধরন- ঢাকার পতনের সম্ভাবনা নিয়ে আদৌ ভাবছে না- ঘটে গেলে কেমন আঘাতটা তাও পরিমাপ করা যাচ্ছে না।
(হ্যারল্ড ব্রিলের ডেসপাচ)

ঢাকা থেকে ডেসপাচ
১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

একজন ভারতীয় জেনারেলের জিপের সামনে থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানীর দিকে এগিয়ে আসা একটি ট্যাংকে চড়ে আমি বিজয়ী ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে পতিত ঢাকা শহরে প্রবেশ করেছি। ভারতীয় বাহিনীর দিকে ফুল ছুড়ে দিয়ে, হাত মিলিয়ে, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী অমর হোক সেøাগান দিয়ে তাদের অভিবাদন জানাতে শহরের বিপুলসংখ্যক জনতার বিস্ফোরণ লক্ষ করা গেছে।
ক্র্যাক ৩৭ ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মিশ্র ভারতীয় ভিআইপিদের আগমনে তাদের বরণ করতে অন্যদের সঙ্গে মিলিত হলেন। ভিআইপিদের মধ্যে রয়েছেন পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরা; দশটি হেলিকপ্টারের বহরের আগমন ঘটে।
ক্রমবর্ধমান আনন্দ এবং হই-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে জেনারেলের নেতৃত্বে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর স্থানীয় প্রধানদের একটি মিছিল শহরের কেন্দ্রে রেসকোর্সের দিকে এগিয়ে যায়, সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ দলিল স্বাক্ষরিত হয়। মার্চে সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তার বিখ্যাত স্বাধীনতার ভাষণটি যেখানে প্রদান করেন, সেখানেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠিত হলো। এখানে বাঙালিদের রাতে উৎসব মøান করে দিল একটি অভাব- শেখ মুজিবের অনুপস্থিতি।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়