আ.লীগ নেতা টিপু হত্যার প্রতিবেদন পেছাল

আগের সংবাদ

মাদকের বিরুদ্ধে ‘নতুন যুদ্ধ’ : তালিকায় ৯৩ শীর্ষ মাদক কারবারি, এক লাখ মাদকাসক্ত, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রস্তুত অ্যাপ

পরের সংবাদ

৩ মাসেই ইউক্রেন যুদ্ধের সেনাপতি বদল পুতিনের : সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া রুশ সেনারা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : তিন মাসের মধ্যেই আবার ইউক্রেন যুদ্ধের সেনাপতি বদল করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনকে সরিয়ে দায়িত্বে আনা হলো জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভকে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এই ঘোষণা দিয়েছেন। গত কয়েক মাসের যুদ্ধে একাধিক ব্যর্থতার কারণেই সুরোভিকিনকে সরিয়ে দেয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়ার বেসরকারি সামরিক প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন পূর্ব ইউক্রেনের খনি শহর সোলেদারে পুরোটা তার বাহিনী দখল করে নিয়েছে এবং তীব্র লড়াইয়ে প্রায় ৫০০ ইউক্রেনীয় সেনা হত্যা করেছে- এমন দাবি করার মধ্যেই রাশিয়া এই সেনাপতি বদলের নির্দেশ দেয়। এর মাধ্যমে এতদিন ইউক্রেন অভিযানের দায়িত্বে থাকা জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনের অবনমন ঘটল। তিনি এখন গেরাসিমভের অধীনে অপর ২ জেনারেল ওলেগ সালিউকভ ও অ্যালেকসেই কিমের পাশাপাশি কাজ করবেন।
৬৮ বছরের গেরাসিমভ ২০১২ সাল থেকে রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ পদে রয়েছেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী যুগে রুশ সেনায় তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। পুতিনের আস্থাভাজন এই সেনা অফিসার ‘দক্ষ পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে পরিচিত।
সুরোভিকিন অক্টোবরে নিয়োগ পাওয়ার কয়েকদিন পর রুশ বাহিনী তাদের যুদ্ধ কৌশলে বড় পরিবর্তন আনে। ইউক্রেনের অবকাঠামোর ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। যার ফলে দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বিঘিœত হয়।
সুরোভিকিন তার স্বল্প মেয়াদে সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। তবে নভেম্বরে খেরসন থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে পুতিনের বিরাগভাজন হন তিনি। চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান সাফল্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নেয়া।
কিছু বিশ্লেষকের মতে চেচনিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধের বীর যোদ্ধা সুরোভিকিনকে বেশ কয়েকটি ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে এবং তাকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে। এ ধরনের সবচেয়ে বড় ভুলের মধ্যে আছে ইংরেজি নববর্ষের প্রথম ঘণ্টায় মাকিভকা শহরের একটি সেনা ব্যারাকে ইউক্রেনের হামলায় ৮৯ রুশ যোদ্ধার মৃত্যুর ঘটনা। রাশিয়ার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, জেনারেল সুরোভিকিনকে প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল ‘সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখার মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা এবং রুশ বাহিনীকে ব্যবস্থাপনার মান ও কার্যকারিতা উন্নত করা।’
সামরিক বিশ্লেষক রব লি টুইটারে লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের ইউনিফাইড কমান্ডার হিসেবে, সুরোভিকিন খুব শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন, এবং পুতিনের সঙ্গে কথা বলার সময় সম্ভবত প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং গেরাসিমভকে উপেক্ষা করছিলেন।’ সোলেদারে লড়াই অব্যাহত থাকার মধ্যেই গত বুধবার এই নেতৃত্ব পরিবর্তনের ঘোষণা আসে।
রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপ সোলেদার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিতে চাইছে। গত মঙ্গলবার রাতে, গ্রুপের নেতা, ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বলেছেন যে তার বাহিনী সোলেদারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যা প্রিগোজিনের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ক্রেমলিন সোলেদারে রুশ বাহিনীর বিজয় দাবি করা থেকে বিরত থাকে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, তাড়াহুড়ো করার দরকার নাই। সরকারি বক্তব্যের অপেক্ষায় থাকুন। সেখানে ইতিবাচক অগ্রগতি ঘটছে।
পরে প্রিগোজিন বুধবার সন্ধ্যায় তার দাবির পুনরাবৃত্তি করেন। টেলিগ্রামে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে, তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন যে তার ভাড়াটে সৈন্যরা প্রায় ৫০০ ইউক্রেনপন্থি সৈন্যকে হত্যা করেছে। তিনি লিখেছেন, ‘পুরো শহর ইউক্রেনীয় সৈন্যদের লাশে ছেয়ে গেছে।’
সোলেদারের আশেপাশের সা¤প্রতিক ঘটনাগুলোকে ঘিরে রাশিয়ার সরকারি ব্যাখ্যাগুলো দেশটির সামরিক নেতৃত্বের বিভাজনের দিকটিকে ইঙ্গিত করে, বিশেষ করে ওয়াগনার গ্রুপ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে সেটিই ফুটে ওঠে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য সোলেদারের পতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। জেলেনস্কি বুধবার তার রাতের ভাষণে বলেন, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং এর প্রচারকারীরা সোলেদারে সাফল্য অর্জনের ভান করছে। তবে সোলেদারে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ : ইউক্রেন ও রুশ সেনাদের মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে ডনবাস প্রদেশের সোলেদার শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারাত্মক লড়াই চলছে। খবরে বলা হচ্ছে, তীব্র লড়াইয়ে অসংখ্য প্রাণহানি হয়েছে। হামলা, পাল্টা-হামলায় লবণ খনি সমৃদ্ধ শহরটির অধিকাংশ বাড়িঘর ধসে পড়েছে।
রুশ সেনারা সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাশের বাখমুট শহর দখল সহজ হবে। সোলেদার থেকে বাখমুটে সহজে কামান হামলা চালানো যাবে। এছাড়া সোলেদারে রয়েছে লবণ খনির অসংখ্য সুড়ঙ্গ। সেসব সুড়ঙ্গে নিরাপদে সেনা ও অস্ত্র মজুদ করা যাবে। তবে সুড়ঙ্গটি ঠিক কতটা বিস্তৃত এবং এগুলো দিয়ে ঠিক কতটা দূর যাওয়া যাবে সেটি নিশ্চিত নয়।
সোলেদারের খনিগুলোতে রয়েছে দামি লবণ এবং জিপসাম। ফলে যে পক্ষের নিয়ন্ত্রণে খনিগুলো থাকবে সে পক্ষই সেগুলো বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লাভ করতে পারবে।
আরেকটি বিষয় হলো- রাশিয়া এখন একটি ‘প্রতীকী’ জয় চাচ্ছে। গত কয়েক মাসে ইউক্রেনের সেনাদের তীব্র হামলার জেরে বেশ কয়েকটি স্থান থেকে পিছু হটতে হয়েছে রুশ বাহিনী। এখন তাদের একটি প্রতীকী জয় প্রয়োজন।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপসহ রাশিয়ার আধা-স্বায়ত্তশাসিত বেশ কয়েকটি বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে উচ্চ পারদর্শিতা দেখিয়েছে। এতে রাশিয়ার মূল সামরিক বাহিনীর অদক্ষতা দৃশ্যমান হয়েছে, যে অভিযান কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ করার প্রত্যাশা ছিল মস্কোর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়