আ.লীগ নেতা টিপু হত্যার প্রতিবেদন পেছাল

আগের সংবাদ

মাদকের বিরুদ্ধে ‘নতুন যুদ্ধ’ : তালিকায় ৯৩ শীর্ষ মাদক কারবারি, এক লাখ মাদকাসক্ত, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রস্তুত অ্যাপ

পরের সংবাদ

বিশ্ব ইজতেমা শুরু : তুরাগ অভিমুখে লাখো মুসল্লির ঢল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

টঙ্গী প্রতিনিধি : শিল্পনগরী টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আজ শুক্রবার তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। আগামী রবিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্ব শেষ হবে। মাঝখানে ৪ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।
ইজতেমাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ময়দানের সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। দুই বছর পর আজ থেকে শুরু হয়েছে দুই পর্বের ইজতেমা। আজ শুক্রবার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গত ১০ জানুয়ারি থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশ বিদেশের মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই পুরো ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।
ইজতেমায় আসা কুমিল্লার মো. আউয়াল (৬৫) ভোরের কাগজকে বলেন, তিন দিন আগে এসেও জায়গা পাচ্ছি না। আর একদিন পরে আসলেই রাস্তায় বসতে হতো। এ বছর এত লোক ইজতেমা মাঠে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পবিত্র হজের পর বিশ্ব মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় মহাসমাবেশ এটি। গত দুই বছর আমরা বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে লাখ লাখ সাথি ভাইয়ের সঙ্গে একত্রে বসে মুরুব্বিদের বয়ান শুনতে পারিনি, যার কারণে এবার সব এলাকা থেকে তাবলিগ সাথিরা আগে আগেই পৌঁছার চেষ্টা করছেন। ইজতেমা শুরুর তিন দিন আগ থেকেই সাথিরা মাঠে আসার কারণে মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এরপরে যারা আসবেন তাদের মাঠের ভেতরে বসতে কষ্ট হবে। মাঠে জায়গা না পেলে হয়তো আশপাশের রাস্তায় অবস্থান নিতে হবে। গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আসা আনোয়ার হোসেনও (৬০) একই কথা বলেন।
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল এখন টঙ্গীমুখী। পুরো টঙ্গী নগরী এখন টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষের নগরে পরিণত হয়েছে। ইবাদত বন্দেগির মোক্ষম সময় হৃদয়ে ধারণ করে মুসল্লিদের ¯্রােত টঙ্গী অভিমুখে বেড়েই চলেছে। এ ¯্রােত থাকবে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত। আজ ইজতেমা ময়দানে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। কোন জেলার মুসল্লি কোন খিত্তায় অংশ নেবেন সে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। ময়দানে মুসল্লিদের অবস্থানও জেলাওয়ারি নির্দিষ্ট খিত্তায় বিভক্ত করা হয়েছে। এবারের ইজতেমায় বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১৫/২০ হাজার মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশ নেবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৬১২ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে বিদেশি নিবাসের জিম্মাদার ও মুরব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন।
দেশি বিদেশি ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরামগণ ছয় উসুল যথা- ইমান, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, তাসহিহে নিয়ত, দাওয়াত ও তাবলিগ সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক মূল্যবান বয়ান রাখবেন। মূল বয়ান সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা জোরদার : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ বৃহস্পতিবার পুলিশসহ র‌্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তবে গত বুধবার থেকেই ময়দানের প্রতিটি প্রবেশপথে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে র‌্যাবের কমিউনিকেশন উইং ও পুলিশের পক্ষ থেকে ১৮টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়া থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, নাইটভিশন গগলস, বাইনোকুলার, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, হেলিকপ্টার-নৌ টহল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্সের সদস্যরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ ইজতেমা মাঠে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কড়া নজরদারি রাখবেন। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সদস্য অবস্থান করবেন। তারা কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতার ইঙ্গিত পেলে বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক অবহিত করবেন। এছাড়া ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের কোথায় কী হচ্ছে তা প্রত্যক্ষ করতে ল্যাপটপ কম্পিউটারের স্ক্রিনে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখবেন। ১২টি গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সতর্কাবস্থায় রাখা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র‌্যাবের ১০টি ও পুলিশের ১৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক বিশ্ব ইজতেমা ময়দান পর্যবেক্ষণ করবেন।
চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম : ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা দিতে প্রথম পর্বে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, টঙ্গী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালকে ইজতেমার মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বক্ষব্যাধি/অ্যাজমা ইউনিট, হৃদরোগ ইউনিট, ট্রমা (অর্থোপেডিক) ইউনিট, বার্ন ইউনিট, ডায়রিয়া ইউনিট, স্যানিটেশন টিম এবং ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া চক্ষু, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত থাকবেন।
পানি ও গ্যাস সরবরাহ : ইজতেমা আয়োজক তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ওয়াসা, তিতাসসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। স্থানীয় ওয়াসা ও তিতাস গ্যাস কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ইজতেমা ময়দানে আগের ১৪টি গভীর নলকূপ ছাড়াও আরো ২টি নতুন নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। সাড়ে ১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে যা থেকে দৈনিক প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি ৫৪ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি মুসল্লিদের মধ্যে সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া। এবারো নতুন করে ৫০০ অস্থায়ী টয়লেট ছাড়াও প্রায় ৯ হাজার স্থায়ী টয়লেট, গোসল ও অজুখানা তৈরি ও মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াসা কর্তৃপক্ষও তাদের গাড়ির মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পানি সরবরাহ করবে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইজতেমা ময়দানের বিদেশি মেহমানখানায় রান্নাবান্নার প্রয়োজনীয় স্থানে ১৭০টি গ্যাসের চুলা স্থাপন করেছে। এছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মুসল্লিদের যাতায়াতের রাস্তায় ধুলাবালি প্রতিরোধে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি ছিটানো হবে।
বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা : ইজতেমা মাঠের উত্তরপাশে ইবনে সিনা, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, র‌্যাবসহ ২৭টি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরিকৃত স্টলে আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ সরবরাহ করবে।
দুই মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমায় দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- গাজীপুর শহরের ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০) এবং সিলেটের জৈন্তাপুর থানার হরিপুরের হেমুবটে পাড়া এলাকার মো. ফজলুল হকের ছেলে মো. নুরুল হক (৬৩)। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, বার্ধক্যজনিত রোগে তাবলিগ জামাতের গাজীপুর মারকাজের সুরা সদস্য তৈয়ব সকাল ১০টার দিকে মারা গেছেন। আর নুরুল হক ভুগছিলেন অ্যাজমা রোগে। সকালে ইজতেমা ময়দানের ৬২ নম্বর খিত্তায় অবস্থানকালে নুরুল হকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি মারা যান। দুপুরে ইজতেমা ময়দানে জানাযা নামাজ শেষে লাশ দুটি তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়