সংসদে অর্থমন্ত্রী : গত বছরের ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯.৫৮ বিলিয়ন ডলার

আগের সংবাদ

তারল্য সংকটে বিপাকে ব্যাংক : সংকট উত্তরণে দরকার দৃশ্যমান রাজনৈতিক অঙ্গীকার, এখনই সমাধান না করলে সংকট আরো গভীর হবে

পরের সংবাদ

মিছিল-সমাবেশের নতুন কর্মসূচি বিএনপির

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলনের’ অংশ হিসেবে গণঅবস্থান কর্মসূচির পর ১০ দফা দাবিতে আগামী ১৬ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে মিছিল-সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। গতকাল বুধবার ঢাকায় সাড়ে তিন ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, পূর্বপ্রান্তে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, আরামবাগের ইডেন কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণফোরাম, বিজয়নগরের পানির ট্যাংকের কাছে ১২ দলীয় জোট, পুরানা পল্টনে সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট এবং কাওরানবাজারে এফডিসির কাছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপিও আলাদা আলাদাভাবে একই কর্মসূচি ঘোষণা করে।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার দুই দিনের মাথায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ গণঅবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি ১০ দফা দাবি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে সারাদেশে সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌর সদরে সমাবেশ ও মিছিল হবে।
নেতাকর্মীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ঠিক আছে তো? আমরা কী ওভারকাম করব? জয়লাভ করব? আমরা কী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ফিরিয়ে আনব? আমরা কী তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনব? আমাদের ভাইয়েরা যারা আজকে কেন্দ্রীয় কারাগারে, কাশিমপুরে, কেরানীগঞ্জসহ সারাদেশের কারাগারে আছে, তাদেরকে কি মুক্ত করব? ইনশাল্লাহ, আমরা সবাই আমাদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবই। এ সময় নেতাকর্মীরা একসঙ্গে ঠিক ঠিক বলে ওঠেন। করতালি দিয়ে দলের নতুন এই কর্মসূচিতে সমর্থন দেন।
গণঅবস্থানে যোগ দিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা গতকাল সকাল থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। হাতে প্লেকার্ড ও মাথায় রং বেরঙের টুপি পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে একপাশে পলিথিন ও মাদুর বিছিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। ফকিরাপুর থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে অবস্থান কর্মসূচি সমাবেশের রূপ পায়। ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার’- ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা সরব করে রাখেন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আব্দুল কুদ্দুস, আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অবস্থান কর্মসূচির কাযর্ক্রম শুরু হয় কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। এরপর দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন জাসাস শিল্পীরা। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।
এছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহীতে আবদুল মঈন খান, সিলেটে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরিশালে সেলিমা রহমান, ময়মনসিংহে নজরুল ইসলাম খান, রংপুরে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে কুমিল্লায় বরকত উল্লাহ বুলু ও খুলনায় শামসুজ্জামান দুদু এবং ফরিদপুরে আহমেদ আজম খান অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন।
রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে মন্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবার রাষ্ট্রকে মেরামত করতে হবে। আমাদের প্রস্তাবিত ১০ দফা বাস্তবায়ন না হলে রাষ্ট্র মেরামত সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগকে জনবিচ্ছিন্ন ও অস্তিত্ব হারানো দল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি পুরনো রাজনৈতিক দল। কিন্তু বর্তমানে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা তাদের অস্তিত্ব হারিয়েছে। তাই তো পুলিশ, আমলাদের ওপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে। তারা নির্যাতন নিপীড়ন ছাড়া কোনোভাবেই ক্ষমতায় টিকিয়ে থাকার পথ পাচ্ছে না। তাইতো এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারের থেকে জনগন মুক্তি চায়।
আন্দোলনে নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার হটানোর আন্দোলন শুরু হয়েছে, সমস্ত রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। সুশীল সমাজ, বিশিষ্ট নাগরিকরাও এগিয়ে এসেছেন। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। ১০ দফা নিয়ে সবাই রাজপথে নেমে গেছে। তবে এজন্য আরো শক্তিশালীভাবে জেগে উঠতে হবে। আসুন জেগে উঠি, জনগনের বাংলাদেশের গড়ে তুলি। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা তাদের পরাজিত করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা যখনই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেই তখনি সরকার ভয় পেয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে বলেন আমরা নাকি বিশৃঙ্খলা করব। আজকের এই শান্তিপূর্ণ গণঅবস্থান কর্মসূচি প্রমাণ করেছে বিএনপি কোনো বিশৃঙ্খলা চায় না। তারা শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। জোর করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, যদি নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু জোর করে ক্ষমতায় থাকবেন, সেই দিন শেষ।
সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ : ঢাকায় বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচির জন্য গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশের অনুমতি পায় বিএনপি। জনদুর্ভোগ যাতে না হয়, সেজন্য সড়ক অবরোধ না করে ফুটপাতে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছিল সেখানে। গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘিরে নয়া পল্টনের পুরো এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। কাকরাইল ও ফকিরাপুল মোড়ে প্রস্তুত ছিল জলকামান। এছাড়া বিভিন্ন সড়কের মোড়ে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়।  

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়