সংসদে অর্থমন্ত্রী : গত বছরের ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯.৫৮ বিলিয়ন ডলার

আগের সংবাদ

তারল্য সংকটে বিপাকে ব্যাংক : সংকট উত্তরণে দরকার দৃশ্যমান রাজনৈতিক অঙ্গীকার, এখনই সমাধান না করলে সংকট আরো গভীর হবে

পরের সংবাদ

প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান ভুক্তভোগীরা : মাগুরায় ফসলি জমি ও নদী দখল করে ৯৬ ইটভাটা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা থেকে : সরকারি আইন অমান্য করে মাগুরা জেলার চার উপজেলার ফসলি জমি ও স্কুল সংলগ্ন জমি, বসতবাড়ি সংলগ্ন ও নদী দখল করে গড়ে উঠেছে ৯৬টি ইটভাটা। জমি ও নদী ভরাট করে এসব ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। ফলে একদিকে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে। বিদ্যালয় ও জনবসতির পাশে এসব ভাটা তৈরি হওয়ায় ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শালিখা উপজেলার শতখালী এলাকায় ৪টি ভাটা গড়ে উঠেছে জনবসতি এলাকায় ও একটি ভাটা বিদ্যলয় সংলগ্ন হওয়ায় বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীসহ এলাকাবাসী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া জেলার অন্য ভাটাগুলো গড়ে উঠেছে তিন ফসলি জমি ও মধুমতি নদী দখল করে। মাগুরার সদর উপজেলার জগদল, লস্করপুর, চাঁদপুর, কাশিনাথ পুর, ছোট ব্রিজ, ইটখোলা, আমুড়িয়া, ধলহরা, ইছাখাদা, মহম্মদপুর উপজেলার তল্লাবাড়িয়া, ধোয়াইল, কানুটিয়া, শ্রীপুর উপজেলার সদর, বাখেরা, শালিখা উপজেলার শতখালী, হরিশপুর, কুশখালী, বুনাগাতীসহ বিভিন্ন মাঠে ফসলি জমিতে ৩৫টি ভাটা গড়ে উঠেছে। এছাড়া মাগুরা সদর উপজেলার কছুন্দি ও পাতুড়িয়া মধুমতি নদী দখল করে গড়ে উঠেছে আরো ৩০টি ইটভাটা।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের নাজির হরশিত সিকদার জানান, লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রয়েছে। ফলে ৯৬টি ইটভাটার কোনটির এখন আর লাইসেন্স নেই। অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর ইট পুড়িয়ে যাচ্ছেন ভাটার মালিকেরা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই এসব ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু, কাঠ পোড়ানো বন্ধ হয়নি। অনেক ইটভাটায় ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যর সিমেন্টের চিমনির বদলে স্বল্প উচ্চতার চিমনি। যা আইন গত ভাবে নিষিদ্ধ।
ইটভাটা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রতিটি ভাটায় মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট পোড়ে। যা সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় বন উজাড় করে। শালিখার কুশখালী মাঠে তিন ফসলি জমিতে সদ্য গড়ে উঠেছে ভাটা। ফসলি জমিতে নতুন ইটভাটা গড়ে ওঠার বিষয়ে কৃষকরা জানান, ইটভাটার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছুই বলতে পারে না। জেলার কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, লস্করপুর মাঠে তিন ফসলি জমিতে ‘ফাতেমা ব্রিকস’ নামে ইটভাটা তৈরির প্রচেষ্টা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে অনুমোদনের আবেদন করেছেন সদরের ভিটাসাইর গ্রামের আওয়াল মোল্যা। আওয়াল মোল্যা কৃষকদের জানিয়ে দিয়েছেন, চলতি ফসল উঠে গেলে কেউ যেন নতুন করে ফসল আবাদ না করেন। অথচ তিন ফসলি জমির ওপরই কৃষকদের জীবন চলে। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করছেন।
বাগবাড়িয়ার মজিদ, আবুল বরকতসহ অনেকেই জানান, মধুমতি নদী দখল করে মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে অন্তত ৩০টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। অথচ চরে শুস্ক মৌসুমে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হতো। ইটভাটার ধুলা ও ধোঁয়ায় বাড়িঘর বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুখে ভুগছে মানুষ। নদীর ভেতরের মাটি কেটে নেয়ায় ভাঙনের মুখে পড়ছে জনপদ।
এছাড়া শালিখার শতখালীর ‘মামুন ব্রিকস’ এর কবলে পতিত হচ্ছে শতখালী সিংহেশ্বর পাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় সংলগ্ন এ ভাটা গড়ে ওঠায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে প্রায় এক হাজার কোমলমতি ছাত্রছাত্রী। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে ওঠা ‘মামুন ও তানিয়া ব্রিকস’ এর মালিক মাছুদ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
শালিখা উপজেলার ইটভাটার মালিক মো. শফি কামালের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি তারিকুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ থাকায় করার কিছুই নেই। সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হলে জেলা প্রশাসন লাইসেন্স দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কয়লার স্বল্পতা ও উচ্চ দামের কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। তবে যারা তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা বানাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেজুলেশনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে তিন ফসলি জমিতে কোনো ইন্ডাস্ট্রি বা ইটভাটা বানানো যাবে না। মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তারিফ-উল হাসান বলেন, তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা বানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবৈধ ইটভাটার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে একাধিক ইটভাটাকে জরিমানাও ধরা হচ্ছে। আইন অমান্যকারী ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাগুরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু নাসের বেগ বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়