ঢাকা-ওয়াশিংটন : রোহিঙ্গা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

আগের সংবাদ

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি : শিক্ষার্থী পায়নি ২০০ প্রতিষ্ঠান

পরের সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং শিক্ষাকে কলুষিত করে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নতুন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তার সঙ্গে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে র‌্যাগিং নামের অপসংস্কৃতি। ইংরেজি র‌্যাগিংয়ের বাংলা জ্বালাতন করা। রসিকতার নামে কাউকে অত্যাচার করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরনো ছাত্রদের একটা সখ্য গড়ে তুলতে যে প্রথা পরিচিত তাকে র‌্যাগিং নামে অভিহিত করা হয়। তবে বর্তমানে র‌্যাগিং নতুন শিক্ষার্থীদের কাছে একটি আতঙ্ক। এখানে ক্যাম্পাসে আসা নবীন শিক্ষার্থীরা সবসময় র‌্যাগিংয়ের ভয়ে ভীত থাকেন। ‘আদব-কায়দা, নিয়ম-কানুন’ শেখানোর নামে তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ফলে অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। কাউকে কাউকে ডাক্তারের শরণাপন্নও হতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দিন দিন র‌্যাগিংয়ের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। সিনিয়ররা র‌্যাগিংকে রসিকতা হিসেবেই মনে করেন। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমেই জুনিয়রদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। সখ্য গড়ে উঠে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেখা হলে, ভয়ে সালাম দিয়ে সম্মান দেখানো আর আড়ালে গিয়েই বকা দেয়া কখনো সম্মান হতে পারে না। আজ যিনি র‌্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছেন, তিনি নিশ্চয়ই আগামীতে এর চেয়ে তীব্র মাত্রায় র‌্যাগিংয়ের ফন্দি আঁটবেন! ফলে এ অপসংস্কৃতি বাড়তেই থাকবে।
সম্প্রতি বছরগুলোতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের নামে অপসংস্কৃতি মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কত যে এরকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে চোখের সামনে অথবা আমাদের আড়ালে তার ইয়ত্তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ছেলে কিংবা মেয়ে যখন প্রথম আসে তখন তার চোখে থাকে স্বপ্নের দ্যুতি, আশার আলো। সবার ছোট তারা, সবার থেকে ভালোবাসা স্নেহ পাবার আশায় থেকে। কিন্তু আমরা তাদের কী দিই? গলিত স্বপ্নের প্রেতাত্মায় পরিণত করি তাদের, তারা শিখে নেয় বড় ক্যানভাস হলেই মানুষ বড় হয় না, অমানুষও হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষ হতে এসে আমরা অমানুষী আচরণ করছি, শিখছি। লজ্জা! মানুষের বসবাস করার মতো পরিবেশ চাই ঘরে ও বাইরে। মানবিক সমাজ চাই। ভালোবাসা চাই। র‌্যাগিংয়ের নামে নবীনের স্বপ্নের মৃত্যু রোধে এগিয়ে আসুক সবাই, এই কামনা। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত জ্ঞানচর্চার জায়গা, সেখানে আমরা শুরুতেই কেন তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছি! কেন তাদের চলাচলে হস্তক্ষেপ করছি! প্রকৃতপক্ষে এটা কখনোই কাম্য নয়। মূলত প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় র‌্যাগিং নামের অপরাধ সংঘটিত হয়। আমাদের এ অপসংস্কৃতি চর্চা থেকে বেরিয়ে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই র‌্যাগিংমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভব।
মাদক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সরকার তথা রাজনৈতিক নেতারা, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকমণ্ডলী, অভিভাবকসহ সব স্তরের জনতাকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। কোনো ছাত্রসংগঠন বা ছাত্রনেতার একক কারণে পুরো প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে না। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ মাদক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও র‌্যাগিং দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এগুলো থেকে মুক্ত করতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তির আগে বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মাদক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও নির্যাতনমূলক র‌্যাগিংয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরার জন্য সমাবেশ করা। নতুন ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর আগের দিন সকাল বেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে, বিকাল বেলা নিজ নিজ ফ্যাকাল্টির পক্ষ থেকে এবং সন্ধ্যা বেলা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওরিয়েন্টেশন ও নবীনবরণের ব্যবস্থা করা। ক্লাস শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্যারিয়ার গঠনমূলক ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর ওরিয়েন্টেশন ও নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হোক।

সুপ্রতিম বড়ুয়া, সহকারী অধ্যাপক, রামু সরকারি কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়