‘রেজা বাহিনী’ থেকে রেহাই চান হোটেল ব্যবসায়ী

আগের সংবাদ

২৭ দফাই হবে ভোটের ইশতেহার : বিএনপির ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’ ঘষামাজার কাজ চলছে > নেয়া হবে সব স্তরের মানুষের মত

পরের সংবাদ

জগন্নাথপুর : অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ২

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে দীঘলবাক গ্রামের আখলাকুর রহমানের ছেলে আফজাল হোসেনকে।
গতকাল সোমবার দুপুরে ভোরের কাগজকে এ তথ্য জানিয়েছেন জগন্নাথপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শুভাশীষ ধর। তিনি জানান, রবিবার রাতে জগন্নাথপুর থানার এসআই জিয়া উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। শনিবার সিলেট থেকে আটক আফজাল হোসেনের বাবা আখলাকুর রহমান (৭০) ও তার ছেলে আমজাদুর রহমানকে (২০) এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় আফজাল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তাছাড়া রবিবার বিকালে অভিযানের পর পুলিশের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে ভোরের কাগজ। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন মামলার সূত্র ধরে গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট মহানগরীর পীর মহল্লার একটি বাসা থেকে আফজালের বাবা আখলাকুর রহমান ও তার ছেলে আমজাদুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই রবিবার জগন্নাথপুর উপজেলার দীঘলবাকে তাদের গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ৬ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে আফজালের বাড়ি থেকে ভাঙা রিভলবারের অংশ, বেশকিছু পুরনো মোবাইল ফোন, বিস্ফোরক তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম, বিস্ফোরক পাউডার ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস জব্দ করে পুলিশ। তবে এ সময় বাড়ি থেকে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
জানা যায়, রবিবার সকাল থেকে উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের দীঘলবাক গ্রামের মৃত আব্দুস সমিরের ছেলে আখলাকুর রহমানের বাড়িটি ঘিরে রাখে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বোম ডিসপোজাল ইউনিট, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ টিম এসে অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে একটি রিভলবারের ভাঙা অংশ, একটি ল্যাপটপ, ৯টি মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও পাউডার, দুটি কর্ডলেস টেলিফোন ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
দিনভর অভিযান শেষে বিকাল সোয়া ৫টায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব উদ্ধারের তথ্য জানান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও মিডিয়া) রিপন কুমার মোদক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ জানুয়ারি জগন্নাথপুর থানার এএসআই মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিক নন-এফআইআর মামলায় আসামি আফজাল হোসেনকে (৩৫) আদালতের ইস্যুকৃত সমন জারি করতে তার বাড়ি যান। এ সময় তিনি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। পুলিশ তার বসতঘরের কয়েকটি কক্ষে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সাদা পাউডার ও যন্ত্রপাতি দেখতে পায়। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর বাড়িটি নজরদারিতে রাখা হয়। এরপর রবিবার অভিযান পরিচালনা করে এসব বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
আফজাল হোসেনের পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার দীঘলবাক গ্রামের আখলাকুর রহমানের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে। এর মধ্যে সবার বড় আফজাল হোসেন। তিনি সিলেটের পাঠানটুলা জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। তখন থেকেই তার রহস্যজনক আচরণে অসন্তুষ্ট ছিল গ্রামবাসী। আফজালের চাচাতো ভাই শাওন মিয়া ভোরের কাগজকে জানান, আফজালের আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল গ্রামের মানুষ। মাঝে মাঝে বাড়িতে এসে একা থাকতেন। তিনি কারো সঙ্গে মিশতেন না। নানা ধরনের ডিভাইস আছে তার। তিনি যখন বাড়িতে আসতেন তখন বাড়ির আশপাশে মোবাইলের নেটওয়ার্ক কাজ করত না। এলাকায় দাঙ্গাবাজ হিসেবেও পরিচিতি আছে তার। ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আফজাল। এরপর জামিন বেরিয়ে এসে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকায় এক সময় তিনি নিজেই তাকে শিবির কর্মী হিসাবে পরিচয় দিতেন।
আফজাল ও তার পরিবারের সদস্যদের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্তা আছে কিনা জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু সাঈদ ভোরের কাগজকে জানান, মামলার তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়