‘রেজা বাহিনী’ থেকে রেহাই চান হোটেল ব্যবসায়ী

আগের সংবাদ

২৭ দফাই হবে ভোটের ইশতেহার : বিএনপির ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’ ঘষামাজার কাজ চলছে > নেয়া হবে সব স্তরের মানুষের মত

পরের সংবাদ

কমলনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া নড়ে না ফাইল! জমি নিবন্ধন হয় গোপনে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কমলনগর (ল²ীপুর) প্রতিনিধি : নানান ফন্দিফিকিরে চলছে ল²ীপুরের কমলনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না এ অফিসে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দালাল বেষ্টিত অফিসটিতে প্রায় প্রত্যেকে এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ফলে সেবাপ্রার্থীরা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দলিল লিখক সমিতি সূত্রে জানা যায়, কোনো দলিল সৃজন করতে স্বভাবিকভাবে দলিল মূল্যের ওপর শতকরা ১০-১২ টাকা হারে, ক্ষেত্র বিশেষে কমবেশি অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ কোটি টাকা মূল্যের দলিলে আদায় করা হয় ১০-১২ লাখ টাকা। এ টাকার প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন কর হিসেবে রাজস্ব খাতে যায়, বাকি টাকা দলিল লিখক, দলিল লিখক সমিতি, সাব-রেজিস্ট্রার এবং রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত সবাই ভাগবাটোয়রা করে নেন। 
ভুক্তভোগীদের আলোচনায় ঘুষ গ্রহণে নানারকম ফন্দিফিকির ও হয়রানির চিত্র উঠে আসে। এই প্রতিবেদকের কাছে তারা জানান অফিসটিতে বেলা ২টার পর দলিল রেজিস্ট্রি করতে হলে চুক্তি করতে হয়। চুক্তির পরিমাণ অন্তত ৩ হাজার টাকা। এ চুক্তির নাম দেয়া হয়েছে বিলম্ব মাসুল। সেবা গ্রহণকারীর কাগজপত্রে ভুল থাকলে গুণতে হবে অন্ততপক্ষে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া কোনো অজুহাত ছাড়াই অফিস সহকারীর টেবিলে ২ হাজার টাকা দিতে হয়। এমনকি টিপসই নেয়ার সময়ও টাকা দিতে হয়।
জানা যায় বিরোধীয় ভূমি রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়ায় আছে ব্যতিক্রম সব ব্যাপার-স্যাপার। এ ধরনের ভূমি রেজিস্ট্রেশন হয় অজ্ঞাতসারে- গোপনে। অথাৎ বিরোধীয় একপক্ষের অজান্তে অন্যপক্ষ সাবরেজিস্ট্রার অফিসকে ম্যানেজ করে কোনো এক গোপন স্থানে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে। এক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের চুক্তি করতে হয়। তবে এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন দালাল, দলিল লিখক ও অফিসে কর্মরত কোনো একজন কর্মচারী। এ প্রক্রিয়ার নাম দেয়া হয়েছে কমিশন। যদিও কমিশন প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র শারিরীকভাবে অক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্ত এখানে সক্ষম ব্যক্তিরাই ওই বিশেষ প্রক্রিয়ায় দলিল আদান-প্রদান সম্পন্ন করে থাকেন। 
কথা হয় উপজেলার চরফলকন গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. নিরব তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেঘনার ভাঙনে আমরা বাস্তুচ্যুত হই। মাথাগোঁজার জন্য পার্শ্ববর্তী চর জাঙ্গালীয়া গ্রামের ঢাকায় বসবাসকারী মো. সেলিমের কাছ থেকে ২০১৯ সালে পুরনো একটি বাড়ি কেনার জন্য বায়না চুক্তি করি। জমির মালিকানা নিয়ে ঝামেলা থাকায় সেলিম রেজিস্ট্রি দিতে কালক্ষেপণ করেন। কিন্তু ২০২২ সালে সেলিম ঢাকা থেকে এসে স্থানীয় দালাল নূরুল আলম ও দলিল লিখক আকবর হোসেনের যোগসাজশে সাবরেজিস্ট্রি অফিস ম্যানেজ করে গোপনে নূরুল আলমের বাড়িতে কমিশন প্রক্রিয়ায় অন্যজনকে দলিল প্রদান করেন। আকবর এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অফিস না করলে তো দলিল হতো না। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিভাবে দলিল হলো জানতে চাইলে কোনো সদোত্তর দিতে পারেননি সাবরেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আরমান। 
অনুরূপভাবে উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত মো. মুরাদ বলেন, আমারা উপজেলার চর জাঙ্গালীয়া মৌজায় ডালিম কুমার দাসের কাছ থেকে জমি ক্রয় করি। ডালিম কুমার সশরীরে গিয়ে রেজিস্ট্রি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় আমাদের ২৮ হাজার টাকা চুক্তিতে কমিশন দিয়ে দলিল নিতে হয়েছে। যদিও দাবি ছিল ৬০ হাজার টাকা। অবশ্য এ দলিলের বিষয়েও ডালিম কুমারের ওয়ারিশদের আপত্তি আছে। এদিকে ল²ীপুর সদর উপজেলা থেকে দলিল রেজিস্ট্রি দিতে আসা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, নামে ভুল থাকায় দলিল লিখক মাওলানা মো. হোসেন জানালেন ভুল সংশোধনীর জন্য চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র প্রায়োজন। প্রত্যয়নপত্র আনার পর দাবি করলেন ১০ হাজার টাকা। কী জন্য এ টাকা, জানতে চাইলে বললেন সাহেব (সাব-রেজিস্ট্রার) বলেছেন। পরে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে দলিল সম্পন্ন করতে হয়েছে। 
আবার চরমার্টিন ইউনিয়নের মাকছুদুর রহমান বলেন, আমি দলিল রেজিস্ট্রি নেয়ার জন্য কমলনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আসি সকাল ১০টায়। সাব-রেজিস্ট্রার আসলেন বেলা ১২টায়। আমার দলিল রেজিস্ট্রির জন্য তোলা হয় দুপুর ১টায়। পরে আমাকে জানানো হয় ১টার পর দলিল করতে হলে বিলম্ব মাশুল দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। আমি ২ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। তিনি আরো বলেন সাব-রেজিস্ট্রার সপ্তাহে মাত্র ২ দিন অফিস করেন (রবিবার ও সোমবার) ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আরমান বলেন, নিয়মের ভেতরে থেকে কাজ করতে গেলে আমি সপ্তাহে ১০টি রেজিস্ট্রিও সম্পন্ন করতে পারব না। সেক্ষেত্রে দলিল লিখক ও সেবাগ্রহীতারা আমার ওপর ক্ষেপে যাবে! তাছাড়া সবাই অনিয়মই দেখে, কিন্ত আমি জনস্বার্থে অনেক ঝুঁকি নিয়ে এ কাজগুলো সম্পন্ন করি। তা কেউ দেখে না। আলাপের একপর্যায়ে তিনি বলেন, যা কিছু রটে কিছু না কিছুতো বটেই! সপ্তাহে ২ দিন অফিসে উপস্থিত থাকেন কেন জানতে চইলে বলেন, দলিল কম, তাই।
প্রতি লাখে ১০-১২ হাজার টাকা আদায়, কমিশনের নামে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা রেজিস্ট্রার লোকমান হোসেন বলেন, আয়কর, স্থানীয় সরকার করসহ সরকারি ফি ছড়া অন্য কোনো ফি নেয়ার বিধান নেই। তিনি আরো বলেন, সব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়