প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলা

আগের সংবাদ

গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়নি : অনিশ্চয়তায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী

পরের সংবাদ

নতুন ভারতের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিচ্ছেন ‘নতুন’ রাহুল গান্ধী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় জবুথবু ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ। সরকার একের পর এক ইস্যু হাজির করেছে মানুষের সামনে। শীত আর সরকারি কৌশলে অনেকটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণকারী ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীর ছেলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নতুন এক কর্মসূচি। যদিও রাহুল গান্ধী এই কর্মসূচির নাম দিয়েছেন ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’। কিন্তু রাহুলসংশ্লিষ্টরা বলছেন এই যাত্রা রাহুলের জীবন-মরণের যাত্রা। অনেকটা ‘হয় মন্ত্রসাধন না হয় শরীর পাতন’ টাইপের।
আততায়ীর হাতে পিতামহী এবং পিতার হত্যাকাণ্ডের পর মা সোনিয়া গান্ধীর ওপর যখন রাজনীতিতে বিদেশিনী তিলক লাগিয়ে বিরোধীরা বেশ সফল হতে চলেছিল তখনই মায়ের ওপর বিদেশি স্টিকার মুছতে পুত্র নিজে এসে রাজনীতির মাঠে পা রেখেছিলেন। তখন বিরোধীরা আরো সুযোগ পেয়ে গেল। ‘রাজনীতিতে পুত্রকেও ছাড় নাই’ এমন সূত্রে পিতার মতো যাদের কাছে শ্রদ্ধা ও বিনয়ে মাথা নত করতেন রাহুল, তারাই তাকে কোণঠাসা করার জন্য ’পাপ্পু’ বলে

উপহাস করতে লাগলেন। রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ রাহুল নিজের দুর্বলতা বুঝতে সময় নেননি। তাই সবার মুখ বন্ধ করার জন্য কংগ্রেসের পদ থেকে সরে গেলেন নিজের ইচ্ছাতেই। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অপপ্রচারের জবাব দিতে, আর নিজেকে জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে হাতে নিলেন এক অভিনব কর্মসূচি। এই কর্মসূচিকে প্রথমে বিরোধীরা পাত্তা না দিলেও দিন দিন তাদের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে বলে ভারতের ও ভারতের বাইরের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে।
টিশার্ট ও জিন্সের মডেল : প্রায় ৬ মাস আগে গত আগস্ট মাসে সাদা টিশার্ট ও জিন্স পরে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন রাহুল, সেই টিশার্ট আর জিন্স এখন ভারতে তরুণদের বিদ্রোহের প্রতীক হতে চলেছে বলে জানিয়েছে লন্ডনের দি টেলিগ্রাফ। তীব্র শীতের মধ্যে কেবল একটি টিশার্ট এবং জিন্স সম্বল করেই ঠাণ্ডার মধ্যে দিল্লি চষে বেড়াচ্ছেন রাহুল গান্ধী। পরে দলীয় নেতাকে ছাপিয়ে গেলেন সমর্থকরা বলে মন্তব্য করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
কারনালে গতকাল রবিবার তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেইসঙ্গে ছিল ঘন কুয়াশার চাদর। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা রাহুলকে প্রশ্ন করেন, তার ঠাণ্ডা লাগছে না? রাহুলের জবাব পেয়ে থমকে যান সাংবাদিকরা। আপনারা আমায় জিজ্ঞাসা করছেন। কিন্তু কৃষক, শ্রমিক, গরিব বাচ্চাদের তো এই প্রশ্ন করেন না? মিডিয়া তার পোশাক হাইলাইট করছে। কিন্তু ছেঁড়া পোশাকে তার সঙ্গে চলা দরিদ্র কৃষক এবং শ্রমিকদের দিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই। প্রচণ্ড ঠান্ডায় সাদা টিশার্ট পরা রাহুল গান্ধী শুধু শীর্ষ রাজনৈতিক মহলেই নয়, ভারতের বিভিন্ন মহলেই এখন আলোচনার বিষয়।
পুরোহিতের মুখে রাহুল নাম : অনেকটা ‘ভূতের মুখে রাম নামের মতো’ উত্তর প্রদেশের রামমন্দিরের পুরোহিত, ট্রাস্ট সচিবের মন্তব্য শুনে বিস্মিত হয়ে যান কংগ্রেসের আরেক নেতা জয়রাম রমেশ, যিনি আগে রাহুলের সমালোচনা করতেন। গত বুধবার উত্তর প্রদেশের বাগপত জেলার বারাউলিতে বিজেপি অফিসের লোকেরা রাহুলকে অভ্যর্থনা জানায়। অযোধ্যার রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাস কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় সমর্থন দেয়ার পর, রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের সেক্রেটারি চম্পত রাই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর পায়ে হেঁটে যাত্রার এবং দেশকে বোঝার প্রশংসা করেছেন।
তিনি রাহুলকে একটি চিঠিতে কংগ্রেসের পদযাত্রায় যোগদানের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে যাত্রার সাফল্য কামনা করেছেন এবং বলেছেন আপনি সুস্থ থাকুন এবং দীর্ঘায়ু পান। দেশের উন্নতির জন্য আপনি যে কাজটি করছেন তা হচ্ছে সবার উন্নতি ও সুখ। ভগবান রাম লালার আশীর্বাদ সর্বদা আপনার সঙ্গে থাকুক।
মানুষের উচ্ছ¡াস : রাহুলের পথ ধরে হাঁটছেন অনেকেই। কংগ্রেস নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও অনেক সাবেক অফিসিয়ালও হাঁটছেন রাহুলের সঙ্গে। প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার হাঁটা রাহুলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাবেক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর রঘুরাম রাজন এবং সাবেক গবেষণা ও বিশ্লেষণ উইংপ্রধান এ এস দুলাত। গত মঙ্গলবার তারা বলেন, এ এক নতুন ভারতের পথে হাঁটছে ভারত।
নতুন ভারতের স্বপ্ন : টেলিগ্রাফ পত্রিকার মুকুলিকা ব্যানার্জি গত মঙ্গলবার লিখেছেন, সেই বিখ্যাত রাজনৈতিক রাজবংশের বংশধর বছরের পর বছর বিপজ্জনক বিভাজনের পর ভারতকে ‘একসঙ্গে’ আনতে চায়। যিনি রাস্তাটাকেই একমাত্র মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছেন। তাকে একঝলক দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, বেশির ভাগ মূলধারার মিডিয়ায় মনোযোগ দেয়া হয়নি কীভাবে বদলে যাওয়া এক রাহুল নতুন ভারতের স্বপ্নকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
নতুন রাহুল : রাহুল গান্ধীর ক্লান্ত চোখ, মুখের দাড়ি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাত ধরে হাঁটা একটি নতুন রাজনৈতিক চিত্র তৈরি করেছে। প্রতিদিন সকাল ৬টায় শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত অন্ধকার, তীব্র ঠাণ্ডা, প্রচণ্ড গরমে হাঁটা মানুষের ভাবনাকে মুছে দিয়েছে অন্য এক রাহুল। মহিলারা সস্তা শাড়ি পরে, পুরুষরা দিনের পর দিন একই পোশাক পরে, একই ভাষা, আবেগ, প্রেক্ষাপট এবং স্বভাব বৈচিত্র্য মিলে মনোমুগ্ধকর একটি আবহ আছে যাত্রায়। টেলিগ্রাফের মতে, এটি একটি মিনি ইন্ডিয়া।
মহান ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করাই লক্ষ্য : রাহুল গান্ধী হেঁটে হেঁটে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, হাত মেলাচ্ছেন, আলিঙ্গনে বাঁধছেন। মানুষের সমস্যা বুঝতে চাইছেন গভীর থেকে। কংগ্রেস বলছে, এটা রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। বিজেপির শাসনামলে ভারত ভেতর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই বিচ্ছিন্নতা রুখে আবার মহান ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করাই তাদের লক্ষ্য। ভারতের অন্তরাত্মাকে খুঁজে পেতেই তাদের এই দীর্ঘ পথ হেঁটে চলা।
বিজেপির ধারণার বাইরে : একসময়ে রাজনীতিতে উদাসীন রাহুল আজ ভিন্ন মানুষ। প্রতিদিন গড়ে ৩০ কিলোমিটার করে হাঁটছেন। শুরুর দিকে রাহুলের এই কর্মসূচিকে বিজেপি পাত্তা দেয়নি মোটেও। তাদের ধারণা ছিল, এতে লোক হবে না। কেউ যাবে না। আর কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত এটা তিনি টেনেও নিতে পারবেন না। কিন্তু এ যাত্রা যত এগিয়েছে, ততই চিন্তায় ঘুম হারাম হয়েছে বিজেপির।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়