কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

‘সেরাদেরও সেরা’ মেসি : লিওনেল নামে সন্তানদের নামকরণের হিড়িক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ২:১৯ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন মধ্য আর্জেন্টিনায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠা মেসি ছোট বেলায় গ্রোথ হরমোন সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হন। সে সময় আর্জেন্টিনার কোনো ক্লাবের পক্ষে তার চিকিৎসা খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু বার্সেলোনা তার চিকিৎসার খরচ বহনের দায়িত্ব নেয়ায় ১৩ বছর বয়সে তিনি তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন এবং স্পেনে পাড়ি জমান। দীর্ঘ দিন বার্সেলোনায় খেলার পর যোগ দেন পিএসজিতে। লিওনেল মেসি টানা চারবারসহ মোট সাতবার ব্যালন ডি’অর জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেন, যা ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পাশাপাশি তিনি সর্বোচ্চ ছয়বার ইউরোপীয় সোনালি জুতো জয়েরও কৃতিত্ব অর্জন করেন। তার পেশাদার ফুটবল জীবনের অনেকটা কেটেছে বার্সেলোনায়। যেখানে তিনি ১০টি লা লিগা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ৬টি কোপা দেল রেসহ মোট ৩৩টি শিরোপা জয় করেছেন, যা বার্সেলোনার ইতিহাসে কোনো খেলোয়াড়ের পক্ষে সর্বোচ্চ। প্রায় এক যুগ পর ফরাসি পত্রিকা লেকিপের চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন্স পুরস্কার উঠছে কোনো ফুটবলারের। এবারও বিজয়ীর নামটা বদলায়নি। ১১ বছর আগে যিনি জিতেছিলেন, সেই মেসিই এবার ‘সেরাদেরও সেরা’, পেতে যাচ্ছেন লেকিপের এই পুরস্কার।
৭৭ বছর ধরে ফ্রান্সের সব খেলায় সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করে আসছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপ। আর পুরো বিশ্ব মিলিয়ে পুরস্কার দেয়া শুরু করে ১৯৭৫ সাল থেকে। পুরো বিশ্বের সব খেলায় সবাইকে ছাপিয়ে পারফর্ম করা খেলোয়াড়কে দেয়া হয় এই পুরস্কার।
এবার মেসি এই পুরস্কার জয়ের পথে পেছনে ফেলেছেন স্প্যানিশ টেনিস তারকা রাফায়েল নাদালকে। গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা খেলোয়াড় বনে গেছেন স্প্যানিশ এই তারকা। তবে মেসির পারফর্মেন্সের সামনে নাদালের এমন কীর্তিও পাত্তা পায়নি। মেসিই জিতেছেন পুরস্কার।
এদিকে মেসি ফ্রান্সকে হারিয়েই জিতেছেন বিশ্বকাপ। সেই দলের তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে পেয়েছেন ফ্রান্সের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। গেল বছর ফরাসিদের বছরটা খারাপ কাটেনি।
করিম বেনজেমা রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে পেয়েছেন ব্যালন ডি’অরের ছোঁয়া, এদিকে গেল বছর শীতকালীন অলিম্পিকে দুই স্বর্ণ জিতেছেন বায়্যাথলেট কোঁয়েতিঁ ফিলো-মিলে। তাদের এই কীর্তিও দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা এমবাপ্পের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
কাতারে ৩৬ বছরের ট্রফি খরা ঘুঁচিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির অনবদ্য নেতৃত্বে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে তারা। তারপরই দেশে বেড়ে গেছে তাদের প্রিয় তারকা লিওনেল মেসির নামের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণ, আর্জেন্টিনায় এমনটা অনেক আগে থেকেই ঘটছে। বিশেষ করে মেসির জন্ম শহর রোজারিওতে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের নাম রেখেছেন মেসির নামের সঙ্গে মিলিয়ে। মজার বিষয় হলো, মেসিরা বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির নামে সন্তানদের এই নামকরণের প্রবণতা রোজারিওতে বহুগুণে বেড়ে গেছে। গত ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। কাতারে মেসিদের এই অবিস্মরণীয় সাফল্যের পর রোজারিওতে মেসির নামে নবজাতকের নামকরণের মিছিল শুরু হয়ে গেছে।
অধিকাংশ বাবা-মা এই পথে হাঁটছেন। শুধু ছেলে সন্তান নয়, মেয়ে সন্তানেরও নাম রাখা হচ্ছে মেসির নামের সঙ্গে মিলিয়ে। ছেলেদের নামে জুড়ে দেয়া হচ্ছে লিওনেল, মেয়েদের নাম রাখা হচ্ছে লিওলেনা নামে। এক সমীক্ষায় ওঠে এসেছে, আগের মাসের তুলনায় ডিসেম্বরে মেসির নামে নামকরণের ঘটনা ৭০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে!
যার নামের সঙ্গে মিল রেখে নিজেদের সন্তানের নামকরণে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন রোজারিওর বাবা-মা, সেই মেসির নাম রাখা হয়েছিল কার নামের অনুপ্রেরণায়? এই প্রশ্নের উত্তরও মিলেছে। উত্তরটা দিয়েছেন মেসির মা সেলিয়া কুচিতিনি। মেসির নাম তিনি রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সংগীতশিল্পী লিওনেল রিচির নামে।
সেলিয়া কুচিতিনি বলেছেন, তিনি যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তখন রিচির ‘সে ইউ, সে মি’ গানটি দুনিয়া জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ওই গানে অনুপ্রাণিত হয়েই শিল্পী লিওনেল রিচির নামের প্রথম অংশটা নিজের ছেলের নামেও জুড়ে দেন। সেই মেসির নামে নাম রাখতে এখন রোজারিওতে প্রতিযোগিতা চলছে।
মজার বিষয় হলো, মেসি নিজে কিন্তু তার তিন ছেলের একজনের নামও নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখেননি। থিয়াগো, মাতেও ও চিরো এই হলো মেসির তিন ছেলের নাম। এখন না থাকলেও ভবিষ্যতে তাদের নামের সঙ্গে ‘লিওনেল’ বা ‘মেসি’ শব্দ নিশ্চয় যোগ হবে।
মেসির নামের ‘মেসি’ অংশটি যেমন এসেছে তার বাবা ‘হোসে মেসি’র নাম থেকে আর্জেন্টিনার সান্তা ফে নামের একটি প্রদেশের জন্মনিবন্ধন তথ্য উল্লেখ করে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা বলছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ছয় শিশুর ক্ষেত্রে ‘লিওনেল’ কিংবা ‘লিওনেলা’ নামকরণ করা হতো, যেটি ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে।
সান্তা ফে প্রদেশের জন্মনিবন্ধনের পরিচালক মারিয়ানো গালভেজ এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘মেসির পাশাপাশি আর্জেন্টিনার অন্য খেলোয়াড়দের নামেও সন্তানদের নামকরণ করা হচ্ছে। তবে প্রায় সবারই আবদার সঙ্গে মেসির নামের অংশও জুড়ে দিতে হবে। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়