কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

‘নাগরিকত্ব দেবে না বাংলাদেশ’ : ভাসানচরে এক বছরে ৫২৫ রোহিঙ্গা নবজাতকের জন্ম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচরে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা দম্পতির ঘরে ২০২২ সালে জন্ম নিয়েছে ৫২৫ নবজাতক। তাদের মধ্যে নরমাল ডেলিভারিতে ৫০০ এবং সিজারিয়ান অপারেশনে ২৫ জনের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এসব নবজাতকের জন্মভূমি হিসেবে বাংলাদেশ শরণার্থী শিবিরের নাম উল্লেখ থাকলেও তাদের নাগরিকত্ব দেবে না বাংলাদেশ।
২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর ভাসানচরে প্রথম রোহিঙ্গা শরণার্থী দল আশ্রয় নেয়। এরপর ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর, শুক্রবার ভোর রাতে ভাসানচরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা দম্পতি মোহাম্মদ কাশেম ও রাবেয়া খাতুনের ঘরে জন্ম নেয় একটি ছেলে শিশু। ওই শিশুটিই ভাসানচরের প্রথম নবজাতক।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অবস্থিত বেসরকারি সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাসানচরে মোট ৫২৫ নবজাতকের জন্ম হয়। এর মধ্যে নরমাল ডেলিভারিতে ৫০০ এবং সিজারিয়ান অপারেশনে ২৫ নবজাতকের জন্ম হয়েছে। তবে এর আগে ২০২১ সালে ভাসানচরে জন্ম নেয়া নবজাতকের পরিসংখ্যান দিতে পারেনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা সিভিল সার্জন অফিস।
ভাসানচরে গত এক বছরে জন্ম নেয়া নবজাতকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শতকরা মাত্র ৪.২৫টি শিশু সিজারিয়ান অপারেশনে ডেলিভারি হয়েছে। বাকি ৯৫.৭৫ ভাগ শিশুর জন্ম হয়েছে নরমাল ডেলিভারিতে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাবে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোয় শতকরা ৫১ ভাগ শিশু সিজারিয়ান অপারেশনে জন্ম নিচ্ছে। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় সিজারের হার ৮৩ শতাংশ, সরকারি হাসপাতালে ৩৫ শতাংশ আর এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে এ সংখ্যা ৩৯ শতাংশ।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০ শয্যার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফেন্ডশিপ, হাইফা, আরটিআই ও ব্র্যাক।
বেসরকারি সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নোয়াখালীর জেলা ইনচার্জ এস এম মাসুদ বলেন, ভাসানচরে সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি আমরা বেসরকারি ৫টি সংস্থা ক্লাস্টারভিত্তিক রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। রোহিঙ্গা গর্ভবতী নারীরা এখনো সচেতন হয়ে ওঠেনি। তারা কষ্ট হলেও ঝুঁকি নিয়ে নিজ বাড়িতেই ধাত্রী দিয়ে নরমাল ডেলিভারি করাতে চায়। এ কারণে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বেশি। ঝুঁকি নিয়ে নরমাল ডেলিভারি করাতে গিয়ে গত এক বছরে দুএকজন গর্ভবর্তী নারী মারাও গেছেন। তারপরও আমরা ক্লাস্টারভিত্তিক আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে গর্ভবর্তী নারীদের খুঁজে বের করে তাদের হাসপাতালমুখী করার চেষ্টা করছি। তাদের সচেতন করতে সব সময় পরামর্শ দিয়ে আসছি। এতে তারা আগের তুলনায় অনেক সচেতন হচ্ছে। নোয়াখালীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ও ভাসানচরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোঅর্ডিনেটর ডা. মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে একটি ২০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করা হয়েছে। সেখানে গর্ভবর্তী নারীদের জন্য সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে গর্ভবর্তী নারীদের খুঁজে বের করে তাদের হাসপাতালমুখী করে সঠিক সেবা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশে যেখানে শতকরা ৫১ শতাংশ শিশু সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেয়, সেখানে কিভাবে ৯৫.৭৫ শতাংশ রোহিঙ্গা শিশু নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম হয়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা এখনো সচেতন নয়, তারা গর্ভবর্তী হওয়ার পরও নিজেদের আড়ালে রাখার চেষ্টা করে, এমনকি কষ্ট হলেও নিজ বাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে তারা নরমাল ডেলিভারি করেন। তারপর কাটা-ছেঁড়া হবে এমন ভয়ে হাসপাতালে আসতে চান না। তাই তাদের নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে আমাদের দেশের নারীরা একটু ব্যথা অনুভব হলেই ডাক্তারের কাছে চলে যান এবং ব্যাথার ভয়ে নিজেরাই সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবে আগ্রহী হন।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ভাসানচরে যেসব রোহিঙ্গা শিশুরা জন্ম নিচ্ছে তাদের পরিসংখ্যানের জন্য শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধন করা হলেও নাগরিকত্ব দেবে না বাংলাদেশ। আমরা চাই তাদের নাগরিক মর্যাদা দিয়ে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া হোক। যেহেতু তারা শরণার্থী তাই তাদের মানবিক দিক বিবেচনা করে ভাসানচরে স্বাস্থ্যসেবাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে এক এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নিতে প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। বর্তমানে ভাসানচরের শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজার ৭৯ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের বাসযোগ্য সকল ব্যবস্থা করেছে সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়