সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল : শান্তিপূর্ণ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৫ শতাংশ

আগের সংবাদ

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী : নির্বাচনের আগে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে > উদ্ভট ধারণা প্রশ্রয় দেবেন না

পরের সংবাদ

কর আদায়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে বরিশাল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশালে করদাতা এবং আদায়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকট কাটিয়ে প্রায় সাড়ে ছয়শ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের মাধ্যমে গত অর্থবছরে বরিশাল বিভাগে আয়কর আদায়ে সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা বেশি। কর প্রশাসনে জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও রেকর্ড পরিমাণ আয়কর আদায়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার কাজী লতিফুর রহমান বলেন, এ অঞ্চলে আয়কর আদায়ের পরিমাণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় যথেষ্ট ভালো এবং আশাব্যঞ্জক। তাই চলতি অর্থবছরে বিভাগের ছয় জেলা থেকে সাড়ে সাতশ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বরিশাল কর অঞ্চল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০১-২০০২ অর্থবছরে মাত্র ২৩ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের মধ্য দিয়ে বরিশাল কর অঞ্চলের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরদারিসহ করদাতাদের ইতিবাচক মনোভাবে বিগত ২০ বছরে তা সাড়ে ছয়শ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি করদাতার সংখ্যাও মাত্র ২০ হাজার থেকে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ৯৩ হাজারে উন্নীত হয়েছে। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৭৮ হাজারের কিছু বেশি। চলতি অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চলে করদাতার সংখ্যা লাখের অঙ্কে পৌঁছবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পাশাপাশি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে টিআইএনধারীর সংখ্যাও ৩ লাখ ৩০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। সূত্রমতে, কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কৃষি-অর্থনীতিই এখনো জীবিকার মূল চালিকা শক্তি। তবে গত দুই দশকে অন্যান্য ব্যবসা ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হলেও করোনা সংকটের কারণে বিগত তিনটি অর্থবছরে সারাদেশের ন্যায় এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারপরও করদাতাদের ইতিবাচক মনোভাবের ফলে বরিশাল কর অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর গোটা দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠতে শুরু করেছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। ফলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে আয়কর আদায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলকে পেছনে ফেলবে বলে আশা কর সংশ্লিষ্টদের।
বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে এখনো বেশির ভাগ মাঝারি এবং বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বড় মাপের ব্যবসায়ীরা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে থাকেন ঢাকায়। ফলে বরিশাল কর অঞ্চলের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। তবে আয়করের প্রতি ভীতি দূর করাসহ কর প্রদানে নৈতিক দায়িত্বের বিষয়টি মানুষের মধ্যে ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর আহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে করদাতাদের সঙ্গে আরো সৌজন্যমূলক আচরণসহ কর প্রশাসনকে পরিপূর্ণ হয়রানিবিহীন জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলারও তাগিদ দিয়েছেন করদাতারা। পাশাপাশি সাধারণ করদাতাদের পক্ষ থেকে যে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে করদাতাদের ওপর ন্যূনতম বাড়তি চাপ প্রয়োগসহ হয়রানির বিষয়টি পরিহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলজুড়েই কর প্রশাসন চলছে জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে। বরিশাল কর অঞ্চলের ২২টি সার্কেলে মঞ্জুরিকৃত প্রায় ২৬৫ জনবলের মধ্যে ১৩৯টি গুরুত্বপূর্ণ পদই শূন্য। ২২টি সার্কেলের উপ-কমিশনারের পদে রয়েছেন মাত্র আটজন। যে কারণে একজন উপ-কমিশনারকে একাধিক সার্কেলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুটা সংকট তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই উপ-কর কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার পর্যন্ত সব পদেই জনবল সংকট চলছে। এমনকি তিনজন যুগ্ম কর কমিশনার পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র একজন। ২৯ পরিদর্শকের আটটি পদে কোনো জনবল নেই।
অপরদিকে বরিশালে কর অফিসের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়টি প্রায় দেড় যুগ ধরে নানা টেবিলে ঘুরপাক খেয়ে সর্বশেষ প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় ৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ওই ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি কবে নাগাদ আলোর মুখ দেখবে তা সঠিক করে কেউই বলতে পারছেন না। ফলে বরিশাল মহানগরীর নিজস্ব ও ভাড়া বাড়িতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কর কমিশনারসহ বিভিন্ন সার্কেলের দপ্তরগুলোতে অনেক সময়ই কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে করদাতারাও ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার কাজী লতিফুর রহমান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে কর আহরণ প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কর প্রদানে ইতিবাচক সাড়া পড়েছে। তিনি আরো বলেন, করদাতাদের ওপর কোনো অনৈতিক চাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে সব কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এরপরেও যে কোনো অনিয়মের ক্ষেত্রে সবসময়ই জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। জনবল সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি এনবিআরসহ অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি এ সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়