কাগজ প্রতিবেদক : দেশের সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের নির্বাচন কমিশন অনেকটাই স্বাধীন। আমরা আপনাদের (ব্রিটেন) ওয়েস্টমিনস্টারের গণতন্ত্র অনুসরণ করি। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক এলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। গতকাল বুধবার ব্রিটিশ অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চার সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ এম. জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ এমপিদের বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে অতীতে সামরিক শাসকদের কাছ থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করার দীর্ঘ ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের আছে। সামরিক শাসকরা বন্দুক ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করত। রাজনৈতিক দল গঠন করে

রাজনীতিতে পৃষ্ঠপোষকতা করত।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ভোজ্যতেল আসত। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এই আইটেমগুলোর আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এই জিনিসগুলোর দাম বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের উদ্যোক্তাদের দেশের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সেখানে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাব। সাক্ষাৎকালে ব্রিটিশ এমপিরা বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা এ উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
প্রেস সচিব আরো জানান, ব্রিটিশ এমপিরা বিশেষ করে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেলসহ কানেকটিভিটির উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে এসব অবকাঠামো খুবই সহায়ক হবে বলে মনে করেন তারা। ব্রিটেনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার উল্লেখ করে তারা বলেন, ব্রিটেন বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। তারা উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেক পরিশ্রমী এবং তারা ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। তারা আরো বলেন, যুক্তরাজ্য জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ব্রিটিশ সহায়তার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আন্তরিক এবং নিজস্ব সম্পদ দিয়ে অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রম শুরু করেছে।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, কমনওয়েলথ দেশগুলোর অভিভাবক হিসেবে তিনি সবসময় বাংলাদেশের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

হুন্ডি করে টাকা না পাঠানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর : প্রবাসীদের হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা অনুরোধ করব- এখন যারা রেমিট্যান্স পাঠায় যেন হুন্ডিতে না পাঠিয়ে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠায় সে ব্যবস্থাটা করতে হবে। প্রবাসীদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা যৌথ উদ্যোগে দিচ্ছি, এখন তো অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। সেখানে কিন্তু যারা ব্যবসা বাণিজ্য করতে চায় তারা বিনিয়োগ করতে পারে। সে জন্য পার্টনার খুঁজে নিয়ে আসলে আরো ভালো হয়। বিনিয়োগ যত আসবে তত ভালো।
মানুষের যাতে খাওয়ার কষ্ট না হয় সেজন্য সরকারের আন্তরিকতার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যত টাকা লাগুক, যেখান থেকে পারি খাবার জিনিস আমরা কিনে নিয়ে আসছি। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আমাদের একটু সমস্যা হচ্ছে। আর তা না হলে আমাদের কোন সমস্যা থাকার কথা না।