ইউনেসকোর প্রতিবেদন : দেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ ভাগ বহন করে পরিবার

আগের সংবাদ

তীব্র শীতে জবুথবু জনজীবন

পরের সংবাদ

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন : আওয়ামী লীগের রিপন বিজয়ী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. মাহমুদ হাসান রিপন বিজয়ী হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৭৮ হাজার ২৮৫ ভোট। তার নিকটবর্তী প্রার্থী জাতীয় পার্টি মনোনীত এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৫২।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর দুই উপজেলার ১৪৫ কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফল পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।
গত ২৩ জুলাই জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মারা যাওয়ায় গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়। এরপর গত ১২ অক্টোবর এ আসনে উপনির্বাচন করে নির্বাচন কমিশন। তবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের কারণে ইসি মাঝপথে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়। সে কারণে গতকাল আবারো গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। সংসদীয় আসনটির ১৪৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে কেন্দ্রগুলোতে এক হাজার ২৪২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
এ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোটের সার্বিক পরিস্থিতিতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০ ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩। দুই উপজেলা মিলে ভোটকেন্দ্র ১৪৫ এবং বুথের সংখ্যা ৯৫২। ভোট সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করতে ২১ জন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি র‌্যাবের ৮টি টিম, ৫ প্ল্যাটুন বিজিবি, বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, আনসারসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্যের নিরাপত্তার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ করতে বিজিবি, র‌্যাবের মোবাইল টিম, পুলিশের মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন।
আমাদের সাঘাটা প্রতিনিধি সরজমিন কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে জানান, গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। তবে সকাল দিকে ঘন কুয়াশা ও ব্যাপক শীতের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল, দুপুরের পরে তা বাড়তে থাকে। ভোট পড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।
তিনি জানান, সকালের দিকে প্রায় সব কেন্দ্রে নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়, বিকালের দিকে পুরুষদের উপস্থিতি বেশি ছিল। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে কেন্দ্রে আসেন ভোটাররা। তবে ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল থেকে ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্রে বাড়তে থাকে ভোটারের উপস্থিতি। ভোটার মজিরন বেগম বলেন, ‘বাড়ির পুরুষ মানুষগুলা সকালে কামোত গেছে। কাম শেষ করিয়া দুপুরের পর তামরা আসি ভোট দিবে। আর হামরা সকাল সকাল আসলাম, ভোট কোনা দিয়া বাড়িত যাওয়া রান্না-বান্না করান নাগবে। ওমরা আসি খাবার চাবে।’
একটি কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার গাইবান্ধা সরকারি কলেজের প্রভাষক রাশেদ মিয়া জানান, প্রচণ্ড শীত, আবার চরাঞ্চল খুবই দুর্গম জায়গা। এজন্য এখন পর্যন্ত উপস্থিতি একটু কম। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্যের নিরাপত্তার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে কেন্দ্রে স্থাপন করা হয় সিসিক্যামেরা। কেন্দ্র পর্যবেক্ষণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন করে নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণ চলাকালে কোনো অনিয়ম হয়নি, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া নির্বাচনে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ভোটের মাঠে বিজিবি, র?্যাবের মোবাইল টিম, পুলিশের মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কামাল হোসেন।
নির্বাচনে ৫ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও মাঠে সক্রিয় আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান রিপন (নৌকা) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী (জাপা) এ এইচ এম গোলাম শহিদ রঞ্জু (লাঙ্গল)। এছাড়া ভোটের মাঠে প্রচারণায় দেখা যায়নি বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম (কুলা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমানকে (ট্রাক)। আর গত ২৫ ডিসেম্বর অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের সার্বিক পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রার্থীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়