বোটানিক্যাল গার্ডেনে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় স্বামীর স্বীকারোক্তি

আগের সংবাদ

বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা : কী করছেন কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

শেষকৃত্যে ভক্তের ঢল : ফুল আর অশ্রæতে মহারাজার বিদায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। পেলেরও মৃত্যু নেই। তার দেহ থেকে প্রাণপাখি উড়ে গেলেও কীর্তিই তাকে অমর করে রাখবে। দীর্ঘদিন কোলন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে গত বৃহস্পতিবার সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ৮২ বছর বয়সে মারা যান ফুটবল স¤্রাট। ঘরের ক্লাব সান্তোসের নিজস্ব স্টেডিয়াম ভিলা বেলমিরো থেকে শুরু হয় তিনবারের বিশ্বকাপজয়ীর শেষযাত্রা। স্টেডিয়ামের মাঝখানে ২৪ ঘণ্টার জন্য সাদা ফুলে ঢাকা কফিনের ঢাকনা খুলে দেয়া হয় গতকাল। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে মানুষের ঢল নামে। কালো মানিককে চোখের জলে বিদায় জানান ফুটবল অনুরাগীরা। পেলের পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব, সাবেক সতীর্থ থেকে শুরু করে সেখানে হাজারো মানুষের ঢল নামে। ফুলে ফুলে ঘেরা পেলের কফিনে প্রথম শ্রদ্ধা জানান ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, কনমেবলপ্রধান আলেজান্দ্রো ডমিঙ্গেজসহ ব্রাজিলের গণমান্য ব্যক্তিরা। নেইমারের পক্ষে তার বাবা উপস্থিত ছিলেন পেলের শেষকৃত্যে। শেষ বিদায় জানাতে গিয়ে পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আওকি স্বামীর মরদেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়লে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ফিফা সভাপতি তখন আওকিকে সান্ত¡না দেন। গতকাল সান্তোসের স্টেডিয়ামের দরজা খুলতেই সেখানে লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরো স্টেডিয়াম ভরে যায়। শবযান বহনকারীদের দলে ছিলেন পেলের ছেলে এডিনহো। এরপর পেলের নশ্বর দেহের ওপর আচ্ছাদনবস্ত্র পরিয়ে দেন বাকিরা। পিতার কপালে হাত রেখে শেষযাত্রা শুরুর আগে প্রার্থনা করেন এডিনহো। পেলের দেহে ক্রস পরিয়ে দেন তার স্ত্রী মার্সিয়া আওকি। এরপর একে একে সেখানে হাজির হন আরো অনেকেই। এডিনহো এবং মার্সিয়াকে সান্ত¡না দিতে দেখা যায় তাদের। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের এই মাঠ ছিল ফুটবল স¤্রাট পেলের বাড়ির পাশের উঠান। এখানেই খেলতে খেলতেই তার কিংবদন্তি হয়ে ওঠা। এই মাঠেই চিহ্ন এঁকেছেন অজস্র ফুটবলীয় রূপকথার। অসংখ্য গোল করে সান্তোসকে নিয়ে গেছেন সাফল্যের শিখরে। কত স্মৃতির আলপনা এই ভিলা বেলমিরোয়। শেষযাত্রার সময় তিনি এখানে আসবেন না, সেটি কীভাবে হয়! পেলেকে গতকাল সকালেই আনা হয় সান্তোসের এই মাঠে। সকাল থেকেই সান্তোসের সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানান পেলেকে। সান্তোসের বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরানো হয় পেলের কফিন। তার পর নিয়ে যাওয়া হয় তার পৈতৃক ভিটাতেও। সেখানে থাকেন তার শতবর্ষী মা ডোনা সেলেস্তে আরান্তেস। তিনি খুব অসুস্থ। স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছেন আরো আগেই।
পেলেকে সমাহিত করা হয় নেকরোপল একুমেনিকাতে। এখানেই সমাহিত হতে চেয়েছিলেন কিংবদন্তি। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পেলের শেষ ইচ্ছা ছিল নেকরোপল একুমেনিকার নবম তলায় তিনি শায়িত হবেন। যেখান থেকে ভিলা বেলমিরোর মাঠটা পরিষ্কার দেখা যায়।
ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় কে, এটা নিয়ে আছে বিভিন্ন তর্ক-বিতর্ক। তবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে যে পেলেই সেরা এটা মানেন সবাই। কারণ মাত্র ২৯ বছরে বিশ্বকাপের চার আসর খেলে চারটাতেই গোল করা এবং তিনটিতে শিরোপা ছিনিয়ে নেয়া বিশ্বকাপের ইতিহাসেই বিরল এক ঘটনা হয়ে থাকবে শতাব্দীর পর শতাব্দী। পেলের আগে ফুটবল ছিল শুধু একটি খেলা। পেলে সবকিছু বদলে দিয়েছেন। তিনি ফুটবলকে শিল্পে রূপান্তরিত করেছেন। ১৯৫৮ সালে যখন ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয় করে, তখন পেলের বয়স ছিল কেবল ১৭ বছর। এরপর ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালেও বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। তিনি ২০০০ সালে ফিফার শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে। তার একুশ বছরের ক্যারিয়ারে ১ হাজার ৩৬৩টি ম্যাচে ১ হাজার ২৮১টি গোল করেছেন। এর মধ্যে ব্রাজিলের হয়ে ৯১ ম্যাচে করেন ৭৭টি গোল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়