রাজধানীর বাজারদর : সবজিতে স্বস্তি মাছ-ডিমের দাম অপরিবর্তিত

আগের সংবাদ

বই সংকটে উৎসবে ছন্দপতন : শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয় একটি-দুটি অথবা গতবছরের বই > ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না

পরের সংবাদ

রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ সিসা কারখানা : হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুরেশ চন্দ্র রায়, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে : শিবালয় উপজেলার আরুয়া ইউনিয়নের ধুতরাবাড়ি মৌজায় ১নং ফেরিঘাটের সামান্য উত্তরদিকে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে পুরাতন ব্যাটারি ভেঙে সিসা সংগ্রহের কারখানা। বরিশাল জেলার আমিন নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে অবৈধ এ ব্যাটারি কারখানাটি স্থাপন করেছেন বলে জানা গেছে।
মেডিকেল জার্নাল থেকে জানা যায়, সিসা একটি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন, যা শিশুদের মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করে। মাত্রাতিরিক্ত সিসার প্রভাবে শিশুরা সারাজীবনের জন্য ¯œায়ুবিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য সিসা একটি স্পর্শকাতর ধাতু। এছাড়াও, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, যকৃত প্রদাহ, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের অন্যতম কারণ সিসা।
স্থানীয়রা জানান, এ কারখানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত ঝাঁঝালো বায়ু মানুষের চোখমুখে প্রবেশ করে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই কারখানায় রাত ১০টার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা বের করা হয়। ফলে নির্মল বাতাসে এই ধোঁয়া মিশে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে বিষবাষ্প। এলাকার গবাদি পশুর অকাল মৃত্যু, জলাশয়ের মাছ মরে যাওয়া, ক্ষেতের ফসল পুড়ে যাওয়া ও গাছের ফুল ফল ঝড়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ এলাকার এই সিসা কারখানা। গত কয়েকদিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন এসে এ কারখানা কর্তৃপক্ষকে কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়ে গেছেন। কিন্তু এ নির্দেশ উপেক্ষা করে গভীর রাতে তারা কারখানা চালাচ্ছেন। এই সিসা কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।
ব্যাটারি কারখানার জমির মালিক ধুতরাবাড়ি এলাকার মো. হারেজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে মো. রাসেল মোল্লা বলেন, এই ব্যাটারি কারখানার মূল মালিক বরিশাল জেলার আমিন নামক একজন ব্যক্তি। তবে শিবালয় উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের বিল্টু নামক একজন লোকের মাধ্যমে আমিন এখানে এসে ব্যাটারি কারখানা স্থাপন করেছেন। বরিশালের আমিনকে আমার জমি মাসিক বিশ হাজার টাকায় ভাড়া করে দিয়েছেন বিল্টু। আমিনের এ ব্যবসার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
আড়পাড়া এলাকার বিল্টুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমিনের সঙ্গে আমার অল্পদিনের বন্ধুত্ব। কিন্তু ব্যবসায়িকভাবে আমি তার অংশীদার নই। আমি শুধু আমিনকে পুরাতন ব্যাটারি কারখানা নির্মাণ করার জন্য মাসিক বিশ হাজার টাকা ভাড়ায় রাসেল মোল্লার জমি ঠিক করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ মর্মে কোনো চুক্তিপত্র করা হয়নি। কারণ, এই জায়গার বেশ কিছু অংশ নাকি ফোরশোর আওতায় রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিডি এখানে এসে কারখানার ম্যানেজারকে কারখানা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
ব্যাটারি কারখানার মালিক আমিন এবং ম্যানেজার জামালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, আমি একটি জরুরি সভায় ব্যস্ত আছি। এ কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মানিকগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূর আলম ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ওই কারখানায় গিয়ে মালিক পক্ষের জামাল উদ্দিন নামক একজনকে পেয়েছিলাম। তাদেরকে মুচলেকার মাধ্যমে আগামী রবিবারের মধ্যে এ কারখানার সমস্ত কার্যক্রম বন্ধের আদেশ দিয়েছি। এরপরও তারা যদি কারখানার কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়