রাজধানীর বাজারদর : সবজিতে স্বস্তি মাছ-ডিমের দাম অপরিবর্তিত

আগের সংবাদ

বই সংকটে উৎসবে ছন্দপতন : শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয় একটি-দুটি অথবা গতবছরের বই > ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না

পরের সংবাদ

বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : ২০৪১ সাল নাগাদ হবে প্রযুক্তিভিত্তিক স্মার্ট দেশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিটি মানুষের প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকবে এবং দেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলে পিছিয়ে থাকবে না। আমাদের শিক্ষা এবং লার্নিং যেমন ই-শিক্ষা, ই-স্বাস্থ্য, ই-ব্যবসা, ই-ইকোনমি, ই-গভর্নেন্স হবে প্রযুক্তিগত জ্ঞানভিত্তিক। গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বই তুলে দিয়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। আজ ১ জানুয়ারি সারাদেশে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদযাপিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। মানে প্রতিটি নাগরিক হবে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন। প্রতিটি ছেলেমেয়ে কম্পিউটার টেকনোলজি এখন থেকে শিখছে এবং আরো এগিয়ে যাবে। আমাদের পুরো জনগোষ্ঠীই হবে প্রযুক্তি জ্ঞানে স্মার্ট। বিশ্ব থেকে কোনো কিছুতেই পিছিয়ে থাকবে না। নিশ্চয়ই আমরা পারব।
তিনি বলেন, আমাদের লেখাপড়া, শিক্ষা, এডুকেশন, ই-বিজনেস, ই-ইকোনমি, ই-গভর্নেন্স সবকিছুই প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, এরপর হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২। সেটাও আমরা করব। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এসব দ্বীপাঞ্চল থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গাতেই আমরা ব্রডব্যান্ড অনলাইনে কাজ করার প্রযুক্তি নিয়ে যাব। একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, সব জিনিসের দাম বেড়ে সারা বিশ্বব্যাপী কষ্ট, তার মধ্যেও কিন্তু আমরা শিশুদের কথা ভুলিনি। তাদের বই ছাপানোর খরচটা অন্য দিক থেকে আমরা সাশ্রয় করছি। বই ছাপানোর দিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। পাশাপাশি কম্পিউটার শিক্ষা অর্থাৎ প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন পিছিয়ে পড়ে থাকবে।
করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনার সময় থেকে এ পর্যন্ত ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ অর্থাৎ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, কাজেই ঘরে বসে পড়াশোনা। কেউ যেন পড়াশোনায় ফাঁকি দিতে না পারে সেই ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে। সংসদ টিভির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। আবার বিটিভির মাধ্যমেও চালানো হয়েছে। আমি মনে করি, সংসদ টিভি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব সময় ব্যবহার করতে পারে। শিক্ষার জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল চালুর উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এত কাজ করার পরেও কিছু লোকের মন ভরে না। তাতেও তারা বলবে আমরা নাকি কিছুই করি নাই। তাদের মাথার ভেতরে ‘নাই’ শব্দটা ঢুকে গেছে। আমরা ‘নাই’-তে থাকতে চাই না। আমরা পারি, বাংলাদেশের মানুষ পারে। আমরা

সেটাই প্রমাণ করতে চাই। ‘নাই’ ‘নাই’ শুনব না। আমরা করতে পারব, এটা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা যে এ দেশের মানুষকে নিরক্ষরতামুক্ত করবে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা আবার নতুন করে শিক্ষা কমিশন গঠন করি। সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করি। বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থাও সেখানে সংযুক্ত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তারা দেশকে আবার অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দেয়।
শিক্ষা স¤প্রসারণে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কৃষি, ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সরকার চায়, আকাশ গবেষণাটা করতেই হবে। আমরা যেমন চাঁদে যেতে পারি তেমনি যুদ্ধজাহাজ এবং এরোপ্লেনও প্রস্তুত করা হবে দেশে। আর সেগুলো আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন করতে পারে সেজন্য এই শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছি, তাছাড়া হাই-টেক সিটি, হাই-টেক পার্ক এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করেছি। মাদ্রাসা শিক্ষাকেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এরই মধ্যে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি ভোকেশনাল শিক্ষা, কম্পিউটার এবং কারিগরি শিক্ষা যেন শিক্ষার্থীরা পেতে পারে সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষা ধারার ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভোকেশনাল কোর্স চালু করেছি, বর্তমানে ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের আধুনিকায়নের পাশাপাশি ১০০টি উপজেলায় ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করছি, ৭০টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ৩২৯টি উপজেলায় ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ, ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ২৩টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন চলমান, ২টি সার্ভে ইনস্টিটিউট নির্মাণাধীন রয়েছে।
এ বছর থেকে ৩ হাজার ২১৪টি স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক কার্যক্রম ১ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ২ বছর করা হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এ সময় শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি কোনো বই চাপিয়ে দেয়া হবে না, তারা খেলাধুলার মাধ্যমে আনন্দ নিয়ে শিখবে। এই ছোটবেলা থেকেই তাদের চিন্তাচেতনা যেন বিকশিত হতে পারে সেজন্যই এই ব্যবস্থা। ছেলেমেয়েদের আন্তরিকতার সঙ্গে গাইড করলে তারা আরো বেশি দক্ষ হয়ে উঠবে বলে অভিভাবকদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে যত বেশি এই ছেলেমেয়েদের গাইড করব, তারা তত বেশি দক্ষ হয়ে উঠবে।’ তিনি শিক্ষার্থীদের এই শীতে নিজেদের সুস্থ রাখার এবং ঘরবাড়িসহ আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধেরও পরামর্শ দেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
বর্তমান সরকার ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু করে এবং এ পর্যন্ত মোট ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১১টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে আজ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ১২ হাজার ৩০০ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়