রাজধানীর বাজারদর : সবজিতে স্বস্তি মাছ-ডিমের দাম অপরিবর্তিত

আগের সংবাদ

বই সংকটে উৎসবে ছন্দপতন : শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয় একটি-দুটি অথবা গতবছরের বই > ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না

পরের সংবাদ

নতুন বছর হোক স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকারে দৃপ্ত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ক্যালেন্ডারের পাতায় আজ নতুন বছরের সংকেতচিহ্ন- শুভ নববর্ষ ২০২৩। নতুন নতুন অঙ্গীকারে আমরা সব সময় নতুন বছরকে বরণ করে নিই। নতুন বছরে নতুন নতুন স্বপ্নও আমাদের মনের গভীরে উঁকি দিয়ে জানিয়ে দেয় অলস বসে থাকলে চলবে না- কাজ করতে হবে, সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতে হবে। কিন্তু যে কোনো কাজ করবার আগে একটি স্বপ্ন দেখতে হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না- স্বপ্নটি হতে হয় বড়, অনেক বড়। প্রসঙ্গত ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের একটি কথা মনে পড়ছে। তিনি অনেকটাই এরূপ বলেছিলেন যে, স্বপ্ন দেখতে হবে বড় বড়, যে ছোট ছোট স্বপ্ন দেখে সে অপরাধী! বাঁচতে হলে মানুষকে স্বপ্ন দেখতে হয়, স্বপ্নের সমান বড় হওয়ার জন্য পরিকল্পনা মতো কাজও করতে হয়।
আমরা স্বপ্ন নিয়েই বাঁচি- তাই জোর দিয়ে বরং এ কথাও বলতে চাই যে, আমরা গভীর আবেগের সঙ্গেও বাঁচি। আবেগ না থাকলে মানুষের মধ্যে স্বপ্ন দেখবার স্পৃহা তৈরি হয় না। আর স্বপ্ন না থাকলে কোনো মানুষ জীবিত থাকলেও কখনো প্রাণবন্ত থাকতে পারে না। তাই স্বপ্ন ও আবেগ মানবের মধ্যে বিরাজিত অবিচ্ছেদ্য ও অনির্বচনীয় সক্রিয় এক অনুভূতি। এই অনির্বচনীয় অমিত অনুভূতি নিয়েই একদা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন উপমহাদেশীয় রাজনীতির ভেতর-বাহির সার্বিক কাঠামোর নানা মাত্রিক সংকট ও সীমাবদ্ধতা। সমগ্র জীবনের সাধনায় তিনি বাঙালিকে পরাধীনতার গøানি থেকে মুক্তিদানের মাধ্যমে বিদ্যমান রাজনীতির সংকট ও সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেছিলেন। তারই নেতৃত্বে বাঙালি লাভ করেছিল স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে সপরিবারে নিহত হওয়ায় স্বপ্ন পূরণের সব পথ অতিক্রম করে তিনি তাঁর কাক্সিক্ষত সোনার বাংলায় পৌঁছাতে পারেননি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন ও আবেগের সম্মিলিত অনুভূতির উত্তরাধিকার হিসেবে দেখতে পাই বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় পরাধীন জাতিকে মুক্ত করার স্বপ্ন-আবেগে মথিত ছিলেন আর জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘তলাহীন ঝুড়ি’-রূপ বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন-আবেগে মথিত- জাতির পিতার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলায় উন্নীত হওয়ার প্রচেষ্টায় নিরন্তর সংগ্রামশীল। বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে, স্বপ্নের সঙ্গে দেশবাসীর সম্পৃক্তি ঘটিয়ে বহু বছরের সাধনায় রাজনৈতিক সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়েছিলেন- আর তাই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তাঁর বজ্রকণ্ঠে নিনাদিত হয়ে উঠেছিল- ‘এবারে সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তাঁর সেই সক্ষমতার প্রকাশ সেদিন রেসকোর্স ময়দানে সমবেত জনসমুদ্রে তুফান তুলেছিল। লাখো বাঙালি তাঁর সেই অমর ঘোষণাকে জীবনের মন্ত্র ও মুক্তির মন্ত্র হিসেবে বক্ষে ধারণ করে স্বপ্ন ও আবেগে মথিত-চিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মরণপণ যুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বানে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে তার পরাধীনতার গøানি ঘুচিয়েছিল। এখন জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বাপ্নিক অভিলাষের আহ্বানে সাড়া দেয়ার পালা- বাংলাদেশকে প্রকৃত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার পালা। সবার সম্মিলিত স্বপ্ন ও আবেগের সাড়ায় ‘তলাহীন ঝুড়ি’র অপবাদ ঘুচিয়ে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করার পালা। আজ থেকে শুরু হওয়া ২০২৩ সালের নতুন বছরটিতেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর দেখানো স্বপ্ন-আবেগে মথিত-চিত্তে জনম দুঃখিনী বাংলা মাকে, রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কল্পনার সোনার বাংলাকে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এই বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে অধিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে সংগ্রামশীল। এ সংগ্রাম সশস্ত্র না হলেও এক পরিবর্তিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জননেত্রী এদেশের মানুষকে তার স্বপ্নের সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন। দেশবাসীও স্ব-স্ব দায়িত্বের ক্ষেত্র থেকে আন্তরিক প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের অভিমুখে চালনা করার স্বপ্নে। আমাদের সম্মুখে জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি সময়ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের আবেগায়িত উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের সেই স্বপ্নটি একটি বাস্তব রূপ লাভ করবে। ‘অতি-বাস্তববাদীতার’ পরিচয় দিয়ে স্বপ্ন বলে, আবেগ বলে এই গন্তব্য থেকে আমাদের কাউকেই দূরে বসে থাকলে চলবে না। স্বপ্ন ও আবেগের সম্মিলিত এই অনুভবকে একটি পরিকল্পিত রূপরেখার মাধ্যমে এগিয়ে চলার মধ্যেও থাকা দরকার নৈতিক দৃঢ়তা। যে নৈতিক দৃঢ়তা জননেত্রী শেখ হাসিনাই লালন করেন তার অনবদ্য ও আপসহীন মনোভাব প্রকাশের মাধ্যমে, তার নেতৃত্বের মাধ্যমে। আমরা জননেত্রীর আপসহীনতার কথা জানি, তার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার কথা জানি, জানি তার নৈতিক শক্তির প্রখরতা সম্পর্কেও। আমরা অবগত বাংলাদেশ নিয়ে জননেত্রীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কেও। জননেত্রীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যে বাংলাদেশকে মর্যাদশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা সে কথা ইতোমধ্যে বহু কর্মকাণ্ডে প্রমাণও হয়ে গেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে পদানত, বাস্তবে পদানত হয়েছে রাজধানীর গণপরিবহনের মাইলফলক হিসেবে খ্যাত মেট্রোরেল পরিষেবা। এছাড়া বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে আজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। বলাবাহুল্য জননেত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনার ফলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবমান।
বুকভরা অমিত স্বপ্ন নিয়ে দেশবাসী এগিয়ে যাবে স্ব-স্ব সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে। কিন্তু তাদের আবার যথেষ্ট পরিমাণে সচেতনও থাকতে হবে। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও একটি বিশেষ গোষ্ঠী দেশের এ অগ্রগতিকে সহজভাবে নিতে পারছে না। তারা কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন-আবেগের পদ্মা সেতু নিয়ে প্রকল্প গ্রহণের শুরু থেকেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের পরও সেই গোষ্ঠী বিশেষের প্রতিনিধিরা সেতু নিয়ে নানা রকমের উদ্ভট ব্যাখ্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়- মাত্র ৩ দিন আগে উদ্বোধন হওয়া মেট্রোরেল নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা অপপ্রচার শুরু করেছে। দেশবাসীকে এদেরই আরো কিছু বশংবদ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, যারা বিদেশ থেকে সরকারবিরোধী নানা রকমের উসকানিমূলক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না ষড়যন্ত্রকারীরা সবাই আবার কোনো না কোনোভাবে একইসূত্রে গাঁথা। এবং এই সূত্রটি সম্পর্কেও অনেকেই জ্ঞাত। তাই সাবধানতা অবলম্বন ও সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগসহ দলটির প্রায় সব অঙ্গ সংগঠন কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠিত হয়। এতে মূল দলে তেমন পরিবর্তন না হলেও অঙ্গসংগঠনগুলোতে মাঠ পর্যায় থেকে বেশ কিছু নতুন নেতৃত্ব ওঠে আসে। এসব নতুন নেতৃত্ব দলকে আরো সংগঠিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। বিশ্বাস করতে চাই নতুনভাবে পুনর্গঠিত এই নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে দলের পাশাপাশি সরকারও সুসংগঠিত হবে। সরকার সুসংগঠিত হলে জনকল্যাণেও গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই দল ও সরকার উভয়েই যদি সুসংগঠিত হয় তাহলে নতুন বছরটিতে নির্বাচনপূর্ব যাবতীয় উত্তাপ ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ মোকাবিলা অনেকটাই সহজ হবে। ২০২৩ সালটি কাটবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নানামুখী রাজনৈতিক জটিলতায়। তবু এর মধ্যে সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণের মন জয়ের জন্য অন্তত যদি দুর্নীতির বিস্তার রোধে জিরো টলারেন্স দেখাতে পারে তাহলে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে তার সুফল সহজেই ঘরে তুলতে পারবে। আমরাও প্রত্যাশা করি ২০২৩ হোক দুর্নীতিমুক্ত একটি বছর।
সরকারি দলের একটি আত্মসমালোচনা এরূপ হতেই পারে যে, আওয়ামী লীগ বিগত ১৪ বছর সংস্কৃতি খাতে তেমন সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখেনি। প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এটি আওয়ামী লীগের কাছে প্রত্যাশার অতীত একটি বিষয়। বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিদের তাণ্ডব ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটলে তখনই কেবল পরপর কয়েকদিন সংস্কৃতিচর্চার অভাব ও করণীয় নিয়ে টেলিভিশনের চ্যানেলগুলো ‘টক-শো’র আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত হয়েছে মাত্র! দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার সময় আমরা শুনেছিলাম দেশের সব উপজেলায় কালচারাল কমপ্লেক্স নির্মিত হবে, বিসিএস ক্যাডারে ‘সংস্কৃতি কর্মকর্তা’ পদ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিদ্যমান শিল্পকলা একাডেমিগুলোতে নিয়োগ দেয়া হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণকালেও সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রাণের কোনো সঞ্চার নেই। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি ছোট ছোট এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সাধারণের মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পেত। আমরা দৃঢ়ভাবে এ কথা বিশ্বাস করি যে, সংস্কৃতি হলো আত্মপরিচয়ের স্মারক। তাই সংস্কৃতিচর্চার বিকাশ না ঘটিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরেও একটা ফাঁক থেকে যাবে। আত্মপরিচয় ভোলা একটি উন্মূল প্রজন্ম তৈরি হবে মাত্র! অর্থাৎ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাঙালির হাজার বছরের শাশ্বত সাংস্কৃতিক চেতনাহীনতায় ‘আন-স্মার্ট’ হয়ে পড়ার আশঙ্কাই বেশি।
আমরাও বর্তমান সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্নের সঙ্গী। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের স্বপ্নেরও সঙ্গী। জননেত্রীর স্বপ্নের সঙ্গে নাগরিক হিসেবে আমরাও অংশীদার এবং অংশগ্রহণ করে থাকি। এই অংশগ্রহণ পরোক্ষ হলেও তা কোনো মতেই অকিঞ্চিৎকর নয়। আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের চতুর্দশ বর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। বাঙালির বিস্তৃত ইতিহাস ও নানা মহিমামণ্ডিত মাহেন্দ্রক্ষণের এসব প্রেরণায় জনকল্যাণকর কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার জনকল্যাণকর আরো বহুবিধ স্বপ্ন বিস্তারের মাধ্যমে দেশবাসীকে আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ করুক। নতুন বছরে সব স্বপ্ন সবার হাতে ধরা দিক।

আহমেদ আমিনুল ইসলাম : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়