ঢাবিতে পর্দা নামল নন-ফিকশন বইমেলার

আগের সংবাদ

কালো মানিকের জন্য শোকার্ত বিশ্ব

পরের সংবাদ

নবরূপে সজ্জিত লালদীঘি মাঠ উন্মুক্ত হওয়ার অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : বাঙালি জাতির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠ। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামের সূচনা হয়েছে এই লালদীঘি মাঠ থেকে। এই মাঠে জড়িয়ে রয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফার ঘোষণা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস। এই মাঠেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’। দীর্ঘদিন থেকে ঐতিহাসিক এই লালদীঘির মাঠটি অবৈধভাবে দখল ও সংস্কারের অভাবে জৌলুস হারিয়ে একাংশে গড়ে উঠেছিল অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড এবং বছরের অন্যান্য সময়ে বসত নানান ধরনের মেলা।
সেই অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে ঐতিহাসিক লালদীঘির মাঠটি সাজানো হয়েছে নবরূপে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় ‘ছয় দফা মঞ্চ’ নির্মাণসহ মাঠের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার টেরাকোটা। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, গণঅভ্যুত্থান, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির গৌরবের ৬ দফা ইতিহাসসহ বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য ১৮টি টেরাকোটার ম্যুরালের মধ্যদিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট দেয়ালে টেরাকোটার এসব ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। চারপাশে সীমানা দেয়াল ঘেরা মাঠে থাকছে কিডস কর্নার, বসার বেঞ্চ আর ওয়াকওয়ে। নবরূপে সাজানো ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠটি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার অপেক্ষায়।
জানা গেছে, কোতোয়ালি আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছয় দফার স্মৃতিবিজড়িত মাঠটিকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করেন। তার আগ্রহে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ লালদীঘি মাঠ নতুনরূপে সাজাতে প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে ভারি বর্ষণের ফলে পাহাড় সংলগ্ন মাঠের সীমানা দেয়ালের একাংশ নিচের দিকে ধসে গিয়ে কয়েকটি ম্যুরাল ভেঙে যায়। পুনঃসংস্কারের পর চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয় উন্নয়ন কাজ। মঞ্চ নির্মাণসহ সংস্কার কাজের মোট ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় রাতে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঠে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে দুটি ২০ ফুট প্রস্থের গেট ও একটি ভিআইপি গেট। এছাড়া মাঠের উত্তর পাশে তৈরি করা হয়েছে ছয় দফা মুক্তমঞ্চ। পূর্বপাশে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুদের মিনি পার্ক। মাঠের চারপাশে হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৩৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে ওয়াকওয়ে, বসার জন্য রয়েছে টাইলস দিয়ে তৈরি ৩৯টি বেঞ্চ। বালুর মাঠে শোভা পাচ্ছে সবুজের আস্তরণ।
মাঠে থাকা ১৮টি টেরাকোটায় ঠাঁই পেয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী প্রচারণা, ৭ মার্চের ভাষণ, ৬ দফা আদায়ের আন্দোলন, ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৫৪’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর প্রচারণা, ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ, ভাষা আন্দোলন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত ও মাস্টারদা সূর্যসেনের ম্যুরাল। মাঠের আরেক সীমানা দেয়ালে আছে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের দেয়াল চিত্র। শিশু কর্নারে আছে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দেয়াল চিত্র। ৬ দফা মঞ্চে ছয় দফার তিনটি করে দফা দু’পাশে সংক্ষিপ্ত আকারে মুদ্রিত।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর জনসভার স্মৃতি ধরে রাখতে ‘নগরীর লালদীঘি মাঠ সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন’ প্রকল্পের আওতায় নান্দনিক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই মাঠ। ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২৫ ফুট প্রস্থের একটি ছয় দফা মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মাঠের দেয়ালজুড়ে টেরাকোটার ম্যুরালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসহ বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামের সচিত্র ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ বলেন, বাঙালি জাতির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক লালদিঘী মাঠ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার ভাষণ দিয়েছিলেন এ ময়দানে। দেশের সব ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী এই মাঠটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল। ছয় দফা মঞ্চ নির্মাণ ও মাঠ সংরক্ষণ করায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।
৩২ নম্বর আন্দরকিল্লার ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, চট্টগ্রামের যে কোনো রাজনৈতিক সংগ্রামের ঠিকানা এই লালদীঘি ময়দান। মাঠটি সংস্কার ও সংরক্ষণ ছিল চট্টগ্রামবাসীর কাক্সিক্ষত। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঐতিহাসিক লালদীঘির মাঠের গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মাঠটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ভাষার দাবিতে মিছিলে গুলির প্রতিবাদে বিকালে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই মাঠে ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারির সভায় প্রথম আবৃত্তি করা হয় মাহবুব উল আলম চৌধুরী রচিত একুশের প্রথম কবিতা- ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লালদীঘি ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়