ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : কলা অনুষদ ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১৮৬ শিক্ষার্থী

আগের সংবাদ

উৎসবে মিলবে না সব বই

পরের সংবাদ

উন্নয়নের মুকুটে নতুন পালক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ** গর্বিত চালক মরিয়ম ** চারগুণ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে **

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : মাত্র ছয় মাস আগে দখিনের দুয়ার খ্যাত পদ্মা সেতু চালু করেছে সরকার। ঘুচেছে ওই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা-বঞ্চনা। রাজধানীসহ দেশের অন্যপ্রান্তের সঙ্গে দূরত্ব কমেছে দখিনাঞ্চলের মানুষের। আনন্দে উদ্বেলিত ওই অঞ্চলের মানুষ। আর গতকাল বুধবার ঢাকায় চালু হলো দেশের প্রথম মেট্রোরেল- যা দেশের ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল হলো দেশের উন্নয়নের মুকুটে আরেকটি পালক’। এতে করে দেশের ইতিহাসে স্থাপিত হলো আরেকটি মাইলফলক। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় খুশি ঢাকার মানুষ। সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত যে যানজট এই শহরে নিত্যদিনের সঙ্গী, তা কিছুটা হলেও লাঘব হবে আধুনিক এই গণপরিবহনটি চালু হওয়ায়। তাদের আশা, দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এটি চালু হওয়ায় কিছুটা যানজট থেকে রেহাই পাবে নগরবাসী। আগামী বছর মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে জনভোগান্তি অনেক কমবে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা মেট্রোরেলে বিনা টিকেটে চলাচল করতে পারবেন।
রাজধানীর উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের ‘সি’ ব্লকের মাঠে গতকাল বেলা ১১টায় দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এই সড়কের দূরত্ব ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এরপর সেখানে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর মেট্রোরেলের টিকেট কিনে প্রথম যাত্রী হিসেবে ট্রেনটিতে ভ্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সরকারি কমকর্তা, কূটনীতিক, স্কুল শিক্ষার্থী, জাতিগত সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মানুষ ও অন্যান্যসহ প্রায় ২০০ মানুষ। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে টিকেট কেনেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ছোট বোন শেখ রেহানাও টিকেট কিনেন। পরে, তারা দুইজনেই স্টেশনের প্রবেশপথে টিকেট পাঞ্চ করেন। উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি চারাগাছ রোপণ করেন।
এদিকে আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছে সেখানে সকাল থেকে অপেক্ষমাণ জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। উপস্থিত জনতাও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পেয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের যাত্রী চলাচল শুরু হওয়ার বাস্তবায়ন দেখতে সকাল থেকেই মুখিয়ে ছিলেন তারা। চোখের সামনে মেট্রোরেলের স্বপ্নপূরণের আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এমন উষ্ণ শুভেচ্ছা পেয়ে। হাত নাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত জনতা পুলিশের নিরাপত্তা বলয় টপকে সামনে এগিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য।

উপস্থিত কয়েকজন জানান, তারা প্রধানমন্ত্রীকে সামনে থেকে দেখতে পাবেন, এমন ভাবনা তাদের ছিল না। তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর থেকে শুভেচ্ছা পাওয়া তাদের জন্য ছিল অবিশ্বাস্য।
মেহেরপুর থেকে স্বপ্নের মেট্রোরেল উদ্বোধন দেখতে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় আসেন স্কুল শিক্ষক কমর উদ্দিন। তার ভাষ্য, স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন দেখতে ঢাকায় আসতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। মেট্রোরেলের মতো বড় একটি উদ্যোগ সফল হয়েছে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। যানজটমুক্ত ঢাকা নগরী হবে এমন প্রত্যাশা নিয়েই ঢাকায় এসেছি। আমার স্কুল থেকে আরো ৩ জন শিক্ষক এসেছেন। তাদেরও স্বপ্ন ছিল মেট্রোরেল উদ্বোধনের দিন ঢাকায় থাকবেন। যে কষ্ট করে আমরা মেহেরপুর থেকে ঢাকায় এসেছি সেটাকে আর কষ্ট মনে হচ্ছে না। অনেক ভালো লাগছে।
মেট্রোরেলে চড়লেন মন্ত্রী-এমপি-আমলারাও : এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়াও সরকারের এমপি-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হোন। প্রথম যাত্রী হতে পেরে খুশি তারা। মেট্রোরেল নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæতি ছিল দিন বদল করবেন। এই মেট্রোরেলের মাধ্যমেই তিনি তার কথা রেখেছেন। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পদ্মা সেতুর পরে আমাদের এটি একটি বড় অর্জন। আমি খুবই আনন্দিত। এই মেট্রোরেল আমাদের মর্যাদা আরো বাড়াবে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে এগিয়ে গেছে, তার একটা প্রমাণ মেট্রোরেল। অনেকবার বিদেশে দেখেছি, স্বপ্ন ছিল দেশে কবে হবে। শেখ হাসিনার কল্যাণে আমরা পেলাম। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা সবাই আনন্দিত। বিশেষ করে ঢাকাবাসী। এটা আবেগের সময়, অর্জনের সময়। বিশেষ করে এটি আমরা বিজয়ের মাসে পেয়েছি। এতে আনন্দ আরো বেড়ে গেল।
প্রথম যাত্রী প্রধানমন্ত্রী, গর্বিত চালক মরিয়ম : মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পেয়ে গর্ববোধ করেছেন রেলের প্রথম নারীচালক মরিয়ম আফিজা। গতকাল বুধবার মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর রেল চালিয়ে আগারগাঁও আসার পর সাংবাদিকদের কাছে তার এই অনুভূতির কথা প্রকাশ করেন তিনি। মরিয়ম আফিজা বলেন, দেশবাসী স্বপ্নপূরণের জন্য যেমন অপেক্ষায় ছিল তেমনই আমাদেরও অনেক প্রস্তুতি ছিল। সবকিছু সফল হয়েছে আজকের মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর। প্রধানমন্ত্রী এই যাত্রায় সঙ্গী ছিলেন, পুরো দেশবাসীর মতো আমিও অনেক গর্ববোধ করছি। নারীরা এখন আর কোথাও পিছিয়ে নেই মন্তব্য করে এই নারীচালক বলেন, আজ প্লেনের পাইলট থেকে শুরু করে জাহাজের ক্যাপ্টেন সবক্ষেত্রেই নারীরা তাদের অবদান রাখছেন। নারীরা দেশ চালাচ্ছে, ঘর চালাচ্ছে। করপোরেট সেক্টরও নারীরা চালাচ্ছে। তাই আমি মনে করি না নারীরা এখন আর পিছিয়ে আছে। সব সেক্টরে নারীরা সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের যে স্বপ্ন ছিল আমরা একটা ডিজিটাল ট্রান্সপোর্টের দিকে যাব, তার একটি অংশ হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) মেট্রোরেল স্টেশনে যাত্রীদের পৌঁছে দেয়া ও সেখান থেকে যাত্রীদের নিয়ে আসতে ৩০টি ডবল ডেকার বাস পরিচালনা করবে। এগুলোর মধ্যে, ২০টি বাস আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও গুলিস্তান হয়ে মতিঝিল রুটে চলবে আর ১০টি বাস উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে দিয়াবাড়ীতে উত্তরার উত্তর স্টেশন পর্যন্ত চলবে।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সি (জাইকা) মেট্রোরেলটি নির্মাণ করেছে। তারা এই প্রকল্পে সহজ শর্তে ঋণ দিয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে এই এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়