পুঁজিবাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সীমার মেয়াদ বাড়ল

আগের সংবাদ

নয়া কৌশলে মাঠে কোচিংবাজরা > নতুন শিক্ষাক্রমের কার্যক্রম হবে হাতে-কলমে, নতুন শিক্ষাক্রমে কোচিংয়ের প্রয়োজন পড়বে না : শিক্ষামন্ত্রী

পরের সংবাদ

পিলখানায় বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : বিজিবি সদস্যদের চেইন অব কমান্ড মেনে চলতে হবে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের চেইন অব কমান্ড মেনে চলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ সালে পিলখানায় যে হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে তা আসলে দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে। জাতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর দেখতে চায় না। তাই বিজিবি সদস্যদের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলতে হবে। যে কোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরে বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় পিলখানার ঘটনায় শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআর সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া জাতির পিতার ভাষণের চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘ইমানের সঙ্গে কাজ করো; সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালোবাসো।’
বর্ডার গার্ড আইন-২০১০ পাসের পর বিজিবিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গঠন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্য অর্জনে। যে কোনো পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ’-এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরো একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে। জাতির পিতা যেভাবে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যে দেশকে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আহ্বান করেছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে, প্রতিটি ইঞ্চিতে যে যা পারেন তা উৎপাদন করবেন। প্রতিটি বিওপিতেই আমাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের

সদস্যরা কিছু না কিছু উৎপাদন করছেন বা পশুপাখি পালন করছেন- এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের ওপর দেশের সীমান্ত রক্ষার মহান দায়িত্ব অর্পিত। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধ, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনসহ সীমান্তবর্তী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব। এই দায়িত

¡ অত্যন্ত আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন, সেজন্য আমি আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা মাত্র ৪৪ মাসের শাসনামলেই ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে আমাদের সংবিধান সংশোধন করে সীমান্ত নির্দিষ্ট করে গেছেন। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই ছিটমহল বিনিময়ও হয়নি। ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা এই উদ্যোগ নিই। দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসি তখন ভারতীয় পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে আইন পাশের মাধ্যমে এই সীমান্ত সুনির্দিষ্ট করা হয়। অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে আমরা ছিটমহল বিনিময় করে সারা বিশ্বে একট দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হই, যা অন্য কোনো দেশ কখনো পারেনি। এক্ষেত্রে বর্ডার গার্ডের দায়িত্বশীলতারও প্রশংসা করেন তিনি। পাশাপাশি কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের দেখভালেও তাদের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। সীমান্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখায় তাদের পেশাদারত্বের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। ফলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ একটি দক্ষ, শক্তিশালী আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন ইউনিট/সেক্টর/রিজিয়ন সৃষ্টির ফলে কমান্ড স্তরে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সুষ্ঠুভাবে সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত অপরাধ দমন এবং সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমাল রক্ষা করা আগের চেয়ে সহজতর হয়েছে।
বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ এর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিñিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিল্যান্স এন্ড ট্যাকটিকাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এসব অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি বিজিবিতে যুক্ত হওয়ায় এ বাহিনীর অভিযান সক্ষমতা বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ-ভারত পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনে এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে ৪টি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় দুটি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃজন করা হয়েছে। এতে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৪০২ কিলোমিটার সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া আরো ২৪২টি নতুন বিওপি সৃজন এবং সীমান্ত হতে অধিক দূরত্বে স্থাপিত ১২৬টি বিওপি সীমান্তের সন্নিকটে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সৈনিকদের জীবনযাপনের মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন র‌্যাংক-ব্যাজ প্রবর্তন, যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভাগীয় অফিসার পদে পদোন্নতি, সীমান্ত ভাতা প্রদান এবং জুনিয়র কর্মকর্তা ও হাবিলদার পদবির সদস্যদের বেতন স্কেল উচ্চধাপে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া ২ মাসের বাৎসরিক ছুটি ও অগ্রিম বেতন প্রদান, পারিবারিক রেশন, ৩ বছরের নিচে সন্তানদের পূর্ণ স্কেল রেশন প্রদানসহ বিজিবি সদস্যদের প্রতিবন্ধী সন্তানদের অবসরের পূর্ব পর্যন্ত নগদ মূল্যে রেশন দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটনির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিফোন সুবিধা স¤প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে জনবিচ্ছিন্ন বিওপিতে আইপি ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০০৯ সাল হতে চলতি বছর পর্যন্ত ২২টি ব্যাচে সৈনিক পদে মোট ৩৪ হাজার ৩৬১ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সময়ে ৩ হাজার ৩৪৪ জনকে বিভিন্ন অসামরিক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৫ সাল হতে এখন পর্যন্ত বিজিবিতে ৯২২ জন নারী সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে প্যারেড কমান্ডারকে সঙ্গে নিয়ে একটি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। পরে তিনি আধাসামরিক বাহিনীর জাতীয় পতাকাবাহী দলের সঙ্গে ৪টি কন্টিনজেন্টের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং স্বাগত মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত বিজিবি সদস্যদের মধ্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিজিবি পদক, রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক, বিজিবি পদক-সেবা এবং ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক-সেবা বিতরণ করেন। পরে তিনি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। তিনি ‘বিজিবি দিবস-২০২২’ এর বিশেষ দরবার অনুষ্ঠানেও অংশ নেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়