রিকশায় বাসের ধাক্কা : মায়ের কোল থেকে পড়ে প্রাণ গেল শিশুর

আগের সংবাদ

পিলখানায় বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : বিজিবি সদস্যদের চেইন অব কমান্ড মেনে চলতে হবে

পরের সংবাদ

বিএসএমআরএইউ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : আর কোনো কৃষি জমি হারাতে চাই না

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : খাদ্য উৎপাদনে আবাদি জমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ন ও আবাসনের কারণে আমাদের প্রচুর পরিমাণ ভালো মানের ও উর্বর জমি হারিয়েছি। এর কারণ হচ্ছে আগে যারাই সরকারে ছিল, তারা এতে মনোযোগ দেয়নি। আমরা এই ধরনের জমি আর হারাতে চাই না। আর সেজন্যই কৃষি জমি সংরক্ষণের জন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।
বিএসএমআরএইউর সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমআরএইউ), গাজীপুরের ২৫তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও প্রযুক্তি প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিএসএমআরইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে আবাদি জমি সারা বছর তিন ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় তা শিল্পায়নের জন্য আর ব্যবহার করা যাবে না। কেউ এই ধরনের জমিতে শিল্প স্থাপন করলে সরকার থেকে কোনো সুবিধা পাবে না। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ খুবই ছোট একটি দেশ। কিন্তু মানুষের সংখ্যা বিপুল। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য উৎপাদন নিরাপদ করতে আমাদের বিদ্যমান আবাদি জমি রক্ষা করতে হবে। এ সময় তিনি বিজ্ঞানীদের গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে গবেষণালব্ধ মেধাস্বত্ব সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ নিশ্চিত ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে অর্থাৎ ’৯৬ সালের পূর্বে বিএনপি শাসনামলে দানাদার শস্য মাত্র ১ কোটি ৬৯ লাখ মেট্রিক টনের মতো উৎপন্ন হতো, বর্তমানে ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টনের মতো চালসহ দানাদার শস্য উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। এটা গবেষণার ফসল। গবেষণা করেই আমরা এটা করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, এখানে অনেক বাধা এসেছে, অনেক সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই সাফল্য দেখাতে পারছি বলেই আমাদের কখনো খাদ্য ঘাটতি হয়নি। তারপরেও আমাদের বন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গন, ঝড় হয়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও অনেক সময় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করেই আমরা ফসল উৎপাদনের বহুমুখীকরণকে কাজে লাগাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, গোপালগঞ্জ জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর কচুরিপানা হয়। সেগুলোকে বেঁধে মাচা করে ভাসমান চাষ পদ্ধতি এখন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আমাদের জমির স্বল্পতার দিকে লক্ষ্য

রেখেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দেশে ভোজ্যতেল উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের উৎপাদিত সরিষার তেল রিফাইন করে আরো হালকা ও উন্নতমানের করা যায়। বাদাম তেল, তিষি থেকে শুরু করে চালের কুড়া বা তুষ থেকেও তেল উৎপাদন হচ্ছে। ৯৮ শতাংশ ভোজ্যতেল আমাদের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়, সেটা আমরা কেন করবো? কাজেই আমাদের তিল, তিষি ও বাদাম থেকে তেল উৎপাদনে আরো বেশি গবেষণা হওয়া দরকার। সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে। আমি ধন্যবাদ জানাই, ইতোমধ্যে গবেষণার মাধ্যমে অনেক উন্নত মানের বীজ ও ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন আমাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি বিজ্ঞানি ও কৃষিবিষয়ক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এই গবেষণাকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে।
কৃষি স¤প্রসারণে গবেষণার জন্য উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে আমরা উচ্চশিক্ষার জন্য সহযোগিতা করি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও গবেষণার জন্য ভালো সহযোগিতা দেয়া হয়। কাজেই এদিকে সবাইকে আরো দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষি আগে ছিল আমাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন। এখন কিন্তু কৃষি সেখানে সীমাবদ্ধ নেই। কৃষি এখন অর্থকরী ফসল। কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে ও কৃষির বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।
গবেষণা করে ১২ মাসী কাঁঠালের জন্ম রহস্য উন্মোচন আবিস্কার করায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর গবেষণা করে আমরা পাটের জেনোম সিকোয়েন্সিং করেছি। এর মেধাস্বত্বও বাংলাদেশের। ফলে, পাটের বহুমুখীকরণ সম্ভব হচ্ছে। গাজীপুর কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত। কাঁঠালেরও বহুমুখী ব্যবহার আছে। মাংসের বিকল্প হিসেবে কাঁচা কাঁঠালকে তরকারি হিসেবে খাওয়ার উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখন অনেকেই ভেজিটেরিয়ান হয়ে গেছে মাছ খায় কিন্তু মাংস খায় না। তাদের জন্য বিকল্প কাঁঠাল। কাঁচা কাঁঠালের বার্গার ও কাবাব হয়। অনেক উন্নত দেশও বিকল্প খাদ্য তালিকায় কাঁঠালকে স্থান দিয়েছে, কাঁচা কাঁঠালের বার্গার মাংসের বার্গার বা রোলের চেয়ে দাম বেশি। এ ফলটির কিছুই ফেলনা নয়। সবকিছুই কাজে লাগানো যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এখন বীজ উদ্ভাবনের ফলে বছরে দুবার উৎপাদন করতে পারি। পেঁয়াজ সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে। পেঁয়াজ-রসুন শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া পেঁয়াজ ও রসুনের গুঁড়োও হয়।
গৃহপালিত পশু-পাখির যতœ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে নানা সুযোগ আছে। ভেটেনারিতে যারা শিক্ষা নেয়, তারা সবাই যে শিক্ষক হবেন বা চাকরি পাবেন সেটা নয়। তারা নিজেরা কিছু কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন বা পশু সেবার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নিজেই নিজের আয়ের পথ সুগম করতে পারেন। গৃহপালিত পশু পালন করলেও পশু পাখির চিকিৎসা, তাদের আচার আচরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া বা তাদেরকে যতœ দেয়ার মতো বাংলাদেশে তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
আওয়ামী লীগ সরকার কৃষি উৎপাদনে জোর দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারির পর বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞার ফলে খাদ্যপণ্য, বিদ্যুৎ, পরিবহন, জ্বালানি, পরিবহন খরচসহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। আমাদের দেশ যেন এই ধরনের কোনো বিপদে না পড়ে। আমাদের উৎপাদন বাড়ানো এবং তা সংরক্ষণ করা দরকার। আমি ইতোমধ্যেই ধান রাখার জন্য কিছু আধুনিক সাইলো তৈরি করেছি। এটা আমাদের অন্যান্য ফসলের জন্যও খুব বেশি দরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়