সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্ট : সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী

আগের সংবাদ

স্বাধীনতার মূল্য

পরের সংবাদ

মেট্রোরেল : নতুন যুগের সূচনা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর কাছে একসময় স্বপ্ন ছিল কিন্তু আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে এবং এটি এখন জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার অপেক্ষায় আছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা ও নতুন স্বপ্নের সূচনা হয়েছে রাজধানীতে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রো রেললাইনটি এমআরটি ৬ নামে পরিচিত। উভয় দিকের ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং দিনে ৫ লাখ যাত্রী বহন করতে পারবে। প্রতিটি ট্রেনে ৬টি কোচ থাকবে, যা ভবিষ্যতে আপগ্রেড করা যেতে পারে এবং প্রতিটি ট্রেন সর্বাধিক ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছানো যাবে মাত্র ৪০ মিনিটে, যা যানজট কমাবে এবং কর্মঘণ্টা ও সময় বাঁচাবে। মেট্রোরেল সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক হওয়ায় পরিবেশ দূষণ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা শহরে প্রচুর যানবাহন রয়েছে এবং সেসব যানবাহনের ধোঁয়া বায়ুকে তীব্রভাবে দূষিত করে কিন্তু মেট্রোরেল যেহেতু বিদ্যুৎচালিত হবে, তাই পরিবেশ রক্ষা করে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালোভাবে বজায় রাখা সম্ভব হবে। এই মেট্রোরেলের একটি বড় সুবিধা হলো বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে এটি ব্যাহত হবে না বরং নির্বিঘেœ চলবে। এই মেট্রোরেলটি সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সজ্জিত থাকবে যাতে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামে তাদের যাত্রা সম্পন্ন করতে পারবেন। এই মেট্রোরেলে যাত্রীদের নিরাপদে ওঠানামার জন্য প্রশস্ত দরজা থাকবে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও সেগুলো খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি; কিন্তু এই মেট্রোরেল যানজট নিরসনে অবশ্যই কার্যকর ভূমিকা রাখবে। মেট্রোরেল শুধু ঢাকা শহরের যানজট নিরসন করবে না, এটি ঢাকা শহরের সৌন্দর্যকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকা শহরের বাসিন্দারা একটি ভিন্ন, অনন্য ও সুন্দর ঢাকা শহর দেখতে পাবেন। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি গর্বের সঙ্গে এবং মুজিব শতবর্ষ উদযাপন করেছি। যোগাযোগের অন্যতম মাইলফলক পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে।
প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে পল্লবী এবং পরে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ফ্লাইওভারসহ সব নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ ছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ব্যাপক। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০.১০ কিলোমিটার এবং এতে ১৬টি স্টেশন রয়েছে। মেট্রোরেলের ৬ নম্বর লাইনে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দুটি সেকশন রয়েছে।
অনেক প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে এবং ধীরে ধীরে মেট্রোরেলের মতো একটি প্রকল্প সম্পন্ন হচ্ছে এবং আমাদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলার পর মেট্রোরেলের কাজের অগ্রগতি শ্লথ হয়ে গেলেও বর্তমান সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তা দ্রুত এগিয়ে চলেছে। করোনা মহামারির মধ্যেও মেট্রোরেলের কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে এবং হাজারো চ্যালেঞ্জের মধ্যেও মেট্রোরেলের কাজ এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকেনি। এই মেগা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও কর্মীরা মহামারির কারণে সময়মতো কাজ করতে না পারলেও থেমে থাকেনি। মেট্রোরেল নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ৬৬৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও এর যাত্রা থেমে থাকেনি, অব্যাহত ছিল। মেট্রোরেলের জন্য বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আনতে হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে করোনা মহামারির কারণে সংশ্লিষ্টদের নানা চাপ ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নের সঙ্গে আমরাও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করতে চাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশবাসীকে কয়েকটি বড় স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সেই বাস্তবায়ন করে দেশবাসীর মনে আশার সঞ্চার করেছেন। তিনি পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সেটা বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি মেট্রোরেলের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সেটাও বাস্তবায়ন করেছেন। কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ করে দেশবাসীর মনে স্বস্তির সঞ্চার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী এবং দৃঢ়চেতা মানসিকতার কারণে তার দেয়া প্রতিশ্রæতিগুলো তিনি বাস্তবায়ন করতে পারছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে দক্ষতার ও প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রেখেছেন। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের দ্বার উন্মোচিত হবে এবং নতুন বছরের সূচনা হবে একটি আনন্দময় পরিবেশে।

মাজহার মান্নান : লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়