প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন

আগের সংবাদ

নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা বন্ধ : অর্ধেক বই নিয়েই পাঠ্যপুস্তক উৎসব ১ জানুয়ারি, মাঠে নামল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর

পরের সংবাদ

জাপায় অচলাবস্থার অবসান : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশন-কাদেরের বৈঠক > প্রধানমন্ত্রী চান জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হোক : জি এম কাদের

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যস্থতায় অবশেষে দেবর-ভাবি দ্ব›েদ্ব বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে (জাপা) সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান হচ্ছে। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিবাদ মেটাতে গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বেলা ১১টায় গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাহগির আল মাহি সাদ উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপার শীর্ষ দুই নেতার বৈঠকের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে- রওশন ও কাদেরকে নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। বৈঠকে জাতীয় পার্টির মধ্যে বিরাজমান সংকট মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে দলকে আরো শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া সম্প্রতি বিএনপি সাংসদরা পদত্যাগ করায় যে ৭টি আসন শূন্য হয়েছে, সেসব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। জাপার পক্ষ থেকে বলা হয়- বিএনপির পদত্যাগ করা আসনগুলোতে জাতীয় পার্টির অবস্থান আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে এসব আসনে জাতীয় পার্টি ভোটের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। ফলে এই সাতটি আসন জাপাকে ছেড়ে দিলে ভালো ফল হবে বলে জানানো হয়। জবাবে প্রধানমন্ত্রী জাপার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানানো হয়। এছাড়া বৈঠকে সংসদীয় গণতন্ত্রে গঠনমূলক ও ইতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী দিনে জাতীয় পার্টির সংসদে আরো শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের বিষয়েও আলোচনা হয়। আলোচনায় জাপার শীর্ষ দুই নেতা প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, জাতীয় পার্টি তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দেশে

গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর এবং জাতীয় পার্টি এ লক্ষ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদ ও সংসদের বাইরে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাবে।
বৈঠকের বিষয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো না হলেও দলটির এক শীর্ষ নেতা জানান, পার্টির অভ্যন্তরীণ চলমান দ্ব›দ্ব নিরসন করে সবাইকে নিয়ে দলকে আরো কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে দুই নেতার বৈঠকের পর জাপায় চলমান সমস্যা মিটমাট হয়েছে। সামনে সব পরিষ্কার হবে। এ বিষয়ে আমাদের কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ ও রওশনপন্থি নেতা ইকবাল হোসেন রাজু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের ডেকেছিলেন। ম্যাডাম রওশন এরশাদ থাইল্যান্ড থেকে ফিরেছেন, এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। আলোচনা ছিল সৌজন্য বিনিময়। স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। ৩০-৪০ মিনিটের মতো ছিলাম। কি বিষয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী, এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, তিনি চান জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হোক। নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে জাপা চেয়ারম্যান জানান, এগুলো আমরা নিজেদের ফোরামে আলাপ করি।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরপন্থি ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক সংসদ নেতা রওশন এরশাদপন্থিদের মধ্যে বেশ কিছুদিন দলে টানাপড়েন ছিল। একপর্যায়ে বিষয়টি প্রকাশ্য রূপ নেয়। এ প্রেক্ষাপটে রওশন এরশাদ দলের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে দলের বেশির ভাগ সংসদ সদস্যদের স্বাক্ষরে রওশনকে বিরোধী দলের পদ থেকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে এ পদে বসাতে স্পিকারকে চিঠি দেয়া হয়। পরে মসিউর রহমান রাঙ্গা ওই চিঠিকে অবৈধ উল্লেখ করে স্পিকারকে পাল্টা চিঠিও দেন। রওশনকে বাদ দিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা করার চিঠি স্পিকারের দপ্তরে ঝুলে রয়েছে। অবশ্য গত মাসে থাইল্যান্ড থেকে ফেরার পর জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। একটি সূত্র জানায়, রাজধানীর একটি হোটেলে ওই সাক্ষাতে রওশন এরশাদ দলের চলমান সংকট সমাধানে জি এম কাদেরকে কিছু নির্দেশনা দেন। এসব নির্দেশনার অন্যতম হলো- জাতীয় পার্টি বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করবে না, যেসব নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের দলে ফিরিয়ে আনা এবং বিভিন্ন সময়ে যারা জাতীয় পার্টি ছেড়ে গেছেন তাদেরও পার্টিতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া। সূত্র মতে, এসব বিষয়ে একমত হন জি এম কাদের। আবার জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরিয়ে দিতে স্পিকারের কাছে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তা তুলে নেয়ার বিষয়ে দুই নেতা একমত হন। এর মধ্য দিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে চলা দেবর-ভাবির অভ্যন্তরীণ এই দ্ব›দ্ব অনেকটাই নিরসন হয়। দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যেও ফিরে আসে স্বস্তি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়