আগারগাঁওয়ে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু

আগের সংবাদ

জাপায় অচলাবস্থার অবসান : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশন-কাদেরের বৈঠক > প্রধানমন্ত্রী চান জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হোক : জি এম কাদের

পরের সংবাদ

মরুর বুকে তিন নক্ষত্রের পতন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরুর বুকে একের পর এক নক্ষত্রের পতন হচ্ছে। নেইমারের পর বিদায় নেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও হ্যারি কেন। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হেরে চোখের জলে বিদায় নিয়েছে নেইমারের ব্রাজিল। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে হেরে বিদায় নিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। অন্যদিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে জয়বঞ্চিত থেকে সেমিফাইনালে ওঠা হয়নি হ্যারি কেনের ইংল্যান্ডের। নিজেদের দেশকে বিশ্বকাপ শিরোপা জেতাতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে চোখের জলে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছেন এই তিন তারকা ফুটবলার।
কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ব্রাজিল। তা সত্ত্বেও দলের বড় তারকা নেইমার এ ম্যাচে অনন্য এক রেকর্ড গড়েন। দুর্দান্ত এক গোলে ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডে পেলেকে স্পর্শ করেন তিনি। আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে রেকর্ড ছোঁয়া গোলটি করেন নেইমার।
ক্রোয়েশিয়ার জমাট রক্ষণে একের পর এক আছড়ে পড়ছিল সব প্রচেষ্টা। অবশেষে অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে ডেডলক ভাঙেন নেইমার। দলকে এগিয়ে নেয়া গোলে বসেন কিংবদন্তির পাশে। ব্রাজিলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের তালিকার শীর্ষে এখন দুটি নাম- পেলে ও নেইমার। আন্তর্জাতিক ফুটবলে পেলে ও নেইমারের গোল এখন সমান ৭৭টি। ১০৫তম মিনিটে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে পাকেতার বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নেন নেইমার। ছুটে গিয়ে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন গোলরক্ষক। তাকেও কাটিয়ে কাছ থেকে কোনাকুনি শটে জাল খুঁজে নেন পিএসজি ফরোয়ার্ড। ১৯৭১ সালে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে নিজের শেষ গোলটি করেছিলেন পেলে। ৫১ বছর পর তাকে ছুঁলেন নেইমার। পেলে ৭৭ গোল করেছিলেন ৯২ ম্যাচে। নেইমারের লাগল ১২৪ ম্যাচ।
২০১৯ সালে কোপা আমেরিকা জিতেছিলেন নেইমার। কিন্তু বিশ্বকাপ কিছুতেই জেতা হচ্ছে না তার। তিনবার বিশ্বকাপ খেলে ফেললেও এখনো ট্রফি অধরা।
আল থুমামা স্টেডিয়ামে শেষ বাঁশি বাজতেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো হাঁটা দেন টানেলের দিকে। সতীর্থরা যখন মাঠে, তখন সিআর সেভেন খুঁজছেন আড়াল। নয়ন ভাসছে জলে। হাত দিয়ে চোখমুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন। এই দৃশ্য মুহূর্তেই ভেঙে দিয়েছে ফুটবল ভক্তদের হৃদয়।
গোল দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হলেও পরের যাত্রা ছিল বিষাদময়। বসে থাকতে হয় বেঞ্চে। নামতে হয় বদলি ফুটবলার হিসেবে। এই নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। বিবৃতি দিতে হয় পর্তুগাল ফুটবল ফেডারেশনকেও। লিখেন রোনালদো নিজেও। আকাশ থেকে কীভাবে মাটিতে নামতে হয়, নক্ষত্রের কীভাবে পতন হয় রোনালদো দেখে ফেলেছেন কাতারে কাটানো এই কদিনে। ৩৭ বছর বয়সি রোনালদো তার এই বিশ্বকাপ ভুলে যেতে চাইবেন নিঃসন্দেহে। শুধু বিশ্বকাপ নয়, এই বাইশ সালে রোনালদো হারিয়েছেন সন্তান, এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়ে তার জাগরণের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে ঘটেছে বিচ্ছেদ, ম্যানইউ ম্যানেজারের সঙ্গে হয়েছে বিবাদ, খেলেছেন ইউরোপা কাপ, যার ছোঁয়া লেগেছে নিজ দেশের হয়ে খেলার সময়েও। এই বিশ্বকাপ ছিল রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ। হয়তো পর্তুগিজ জার্সিতে খেলে ফেলেছেন শেষ ম্যাচটিও। তবে মরক্কোর বিপক্ষে বদলি নেমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করেন পর্তুগাল অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড আগে থেকেই রোনালদোর। এবার সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডেও নাম লেখালেন। পাঁচ বিশ্বকাপে ২২ ম্যাচ খেলে ৮টি গোল করেছেন রোনালদো। আর পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে ১৯৬ ম্যাচে তিনি গোল করেছেন ১১৮টি, যা রেকর্ড।
এদিকে চোখের জলে কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন। ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচের বাকি তখন মিনিট সাতেক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ গোলে এগিয়ে ফ্রান্স। ঠিক তখনই পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। ম্যাচে ফেরার সহজতম সুযোগ। এর আগেও ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ড সমতায় ফিরেছিল হ্যারি কেনের নেয়া পেনাল্টি গোলে। দ্বিতীয়বার পাওয়া পেনাল্টি নেন হ্যারি কেন। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ও গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার কিক চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল করে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন হ্যারি কেন। ইংল্যান্ডের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলের মালিক এখন যৌথভাবে ওয়েন রুনি ও হ্যারি কেন। আল বাইত স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি গোলে দলকে ১-১ সমতায় ফেরান কেন। ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১২০ ম্যাচ খেলে ৫৩ গোল করেছিলেন রুনি। পূর্বসূরিকে কেন ছুঁয়ে ফেলেন ৮০ ম্যাচেই। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট জয়ী কেন কাতারে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে জালের দেখা পাননি। তবে নকআউট পর্বের প্রথম দুই ম্যাচেই গোল করেন ২৯ বছর বয়সি তারকা। বিশ্বকাপে কেনের গোল হলো ১১ ম্যাচে ৮টি। ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বমঞ্চে তার চেয়ে বেশি গোল আছে কেবল গ্যারি লিনেকারের, ১২ ম্যাচে ১০টি।
– জুহায়ের ইয়াসার জাবিদ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়