বাঘা পৌর নির্বাচন : ৩ মেয়র প্রার্থীসহ ৭ জনের মনোনয়ন প্রত্যাহার

আগের সংবাদ

অস্থিরতায়ও চাঙা পোশাক খাত : চীন থেকে স্থানান্তর হয়ে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে > স্থগিত রপ্তানি আদেশ ও নতুন ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করেছে

পরের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : জলবায়ু অভিযোজনে আমাদের প্রয়োজন ২৩০ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি বা ন্যাপ) বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ২০২৩-২০৫০ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংস্থান থেকে এনএপি বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন আমাদের। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন থেকে অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০-৫০ বণ্টনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল রবিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দিয়ে ‘গেøাবাল হাব অন লোকাললি লেড অ্যাডাপটেশন’ খোলার ঘোষণা দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জিসিএ চেয়ারম্যান সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, জিসিএ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. প্যাট্রিক ভারকুইজেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন জিডিপির ৬ বা ৭ শতাংশ জলবায়ু অভিযোজনে ব্যয় করে এবং স¤প্রতি ২০২৩-২০৫০ সালের জন্য ন্যাপ চালু করেছে। কপ ১৫-এর পর বাংলাদেশ তার নিজস্ব সম্পদ দিয়ে ২০০৯ সালে একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। এই তহবিলটি জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রেই এ পর্যন্ত ৮০০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ন্যাপ আমাদের বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার আওতায় যে কাজ হচ্ছে তার পরিপূরক হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি প্যারিস চুক্তির চেতনায় এই প্রচেষ্টায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়া আন্তর্জাতিক সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে অংশীজনদের আমন্ত্রণ জানাই। একইসঙ্গে, আমরা সমস্ত প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোকে তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের সুযোগ বাড়ানোরও আহ্বান জানাই। বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে

হবে। চালু হওয়া স্থানীয় নেতৃত্বাধীন অভিযোজন বিষয়ে গেøাবাল হাবকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেব। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য আরেকটি প্রস্তাব পেয়ে আমরা আনন্দিত। বাংলাদেশ ঢাকায় গেøাবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) আঞ্চলিক কার্যালয়কে এই অঞ্চল ও এর বাইরেও শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করে বন্যা, জলোচ্ছ¡াস, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য বিপদের বিরুদ্ধে এক ধরনের স্থিতিস্থাপকতা অর্জন করেছে। তারা প্রকৃতির পরিবর্তনশীল গতিপথের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে একটি জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্রে পরিণত করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনগণের টিকে থাকার সংগ্রামের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। ১৯৭০ সালে ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের পর মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকরা উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় জনগণকে সাহায্য করতে এগিয়ে না আসায় বঙ্গবন্ধু ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি তাদের অবহেলার প্রতিবাদ করেছিলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু উপকূলীয় অঞ্চলকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন শুরু করেছিলেন যা স্থানীয়ভাবে ‘মুজিব কিল্লা’ নামে পরিচিত। তিনি গাছ লাগানোর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিও চালু করেছিলেন। আমরা এখনও জলবায়ু কর্মের পরিকল্পনার তার নির্দেশনা অনুসরণ করছি।
বাংলাদেশের স্থানীয় স¤প্রদায়ের ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও জলবায়ু অভিযোজন সমাধানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সম্পদ ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেই সমাধানগুলোকে সমর্থন করে। এই সংমিশ্রণটি স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন ব্যবস্থাগুলোর একটি পুল তৈরিতে ভালোভাবে কাজ করেছে। আমরা এখন মানুষ ও গৃহপালিত পশুদের আশ্রয় দিতে সারা দেশে ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছি। এগুলো সাধারণত প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে কাজ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিবছর বর্ষাকালে লক্ষাধিক চারা রোপণ করে আসছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করা হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং গভীর সমুদ্রসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে সতর্ক বার্তা পৌঁছাতে সাহায্য করছে। বাংলাদেশকে এখন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ লবণাক্ত, খরা ও বন্যা-সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে। ভাসমান কৃষি এখন সবজি উৎপাদনে ব্যাপকভাবে চর্চা করা হচ্ছে। ‘জলবায়ু-স্মার্ট’ মৎস্য ও পশু পালনের জন্য অনেক উদ্ভাবনী পদ্ধতি নেয়া হচ্ছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আমরা খাদ্য উৎপাদন ও তাপ কমাতে ছাদে চাষাবাদকে উৎসাহিত করছি। নদীগুলোর নাব্য ও পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে আমরা ড্রেজিং শুরু করেছি। উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ পানীয় জলের সহজলভ্যতার ব্যবস্থা করেছি। বিশ্বের বৃহত্তম সোলার হোম সিস্টেম থাকায় তারা সেচের উদ্দেশ্যে ও গৃহস্থালির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি গ্রহণকে উৎসাহিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের গতিশীলতা রোধ ও পরিচালনা উভয়কেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ লক্ষ্যে ফ্ল্যাগশিপ আশ্রয়ণ কর্মসূচির আওতায় আমরা গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের জন্য প্রায় ১০ লাখ আধা-পাকা দুর্যোগ-সহনশীল বাড়ি নির্মাণ করেছি। জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বহুতল আবাসন প্রকল্পটি কক্সবাজারের খুরুশকুলে নির্মিত হচ্ছে। সেখানে ১৩৯টি বহুতল ভবনে ৫ হাজার জলবায়ু-শরণার্থী পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে জাপানের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : এর আগে সকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে জাপানের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি লাভজনক স্থান। জাপানের বেসরকারি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে আরো বড় পরিসরে বিনিয়োগ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, জাপানের রাষ্ট্রদূত বৈঠকে শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। আগামী দিনেও এই উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলেও জাপানি রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প যেমন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং মেট্রোরেল বাস্তবায়নে জাপানের সহায়তার প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত সমর্থন কামনা করেন এবং রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সর্বদা পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
শেখ হাসিনা বিদেশিদের জন্য বরাদ্দকৃত পর্যটন স্থান গড়ে তুলতে জাপানের সহযোগিতাও কামনা করেন। জাপানি রাষ্ট্রদূত একে একটি ভালো উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করে এ বিষয়ে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে তারা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও কথা বলেন। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য ভাষানচরের উন্নয়নে জাপানের সহযোগিতার প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশে তার মেয়াদ সফলভাবে সমাপ্ত করার জন্য এবং বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে তার ভূমিকার জন্য জাপানি রাষ্ট্রদূতকে শুভেচ্ছা জানান। বৈঠকে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয়েছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়