জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি : ডা. এস এ মালেকের মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি

আগের সংবাদ

পল্টন ছেড়ে গোলাপবাগে বিএনপি : বিকাল থেকেই সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের অবস্থান, রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

চার স্থানে বিজয়ের পতাকা ওড়ে আজ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সারাদেশ ডেস্ক : আজ ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনার পূর্বধলা, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জ ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা, যশোরের নওয়াপাড়া হানাদারমুক্ত দিবস। এদিনে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মুক্তিযোদ্ধারা এসব অঞ্চলের মাটিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পূর্বধলা (নেত্রকোনা) : আজ ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা ও ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জ, হানাদারমুক্ত দিবস। এছাড়া এদিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুধীর বড়ুয়া শহীদ হন।
৮ ডিসেম্বর রাত ১১টার পর থেকে নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, দুর্গাপুর, জারিয়া, পূর্বধলা ও সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এলাকা থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্রেনযোগে শ্যামগঞ্জ এলাকায় জমায়েত হতে থাকে। প্রায় ৩০০ পাক সেনা ও রাজাকার শ্যামগঞ্জ রেলওয়ে মাঠ, স্টেশন এলাকা মইলাকান্দা, গোহালাকান্দা ও শ্যামগঞ্জ বাজার এলাকা দখল করে কিছু কিছু স্থানে বাঙ্কার খনন করে। এ খবর পেয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর চারদিকে অবস্থান নেয় এবং আক্রমণের অপেক্ষায় থাকে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের রজব কম্পানি, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক কোম্পানি ও চুন্নু কোম্পানি পাক বাহনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। চারদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান টের পেয়ে শ্যামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে থাকা পাক সৈন্যরা স্টেশনে জড়ো হয়ে ট্রেনে এলাকা ত্যাগ করে। পাকিস্তানি সৈন্যদের পলায়নের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্বাধীনতাকামী জনতা রাস্তায় বেরিয়ে আসে এবং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা শ্যামগঞ্জ আসতে থাকেন।
বিকালে রজব কোম্পানি, বেলাল কোম্পানি ও শামসু সেকশনে নিজ নিজ গ্রুপ নিয়ে শ্যামগঞ্জ ঐতিহাসিক রেলওয়ে মাঠে জড়ো হয়ে বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠে। পরে বিকাল ৫টায় ঐতিহাসিক রেলওয়ের মাঠে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এলাকাবাসীর পক্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন শিল্পি শাহাতাব।
এদিকে ইপিআর এর সুধীর বড়ুয়া তার দলবল নিয়ে শ্যামগঞ্জ ডাকবাংলায় রাত কাটানোর জন্য চলে আসার সময় সন্ধ্যায় শ্যামগঞ্জ বাজারের পূর্বপাশে অবস্থানকারী এবং রেকি করে এগিয়ে আসা পাক সেনাদের সঙ্গে শ্যামগঞ্জ পশ্চিম বাজারের পল্লী হাসপাতালের সামনে মুখোমুখি হয়ে পড়েন। এ সময় পাক সেনাদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন রাজাকার জয় বাংলা স্লোগান দিলে সুধীর বড়ুয়াও জয় বাংলা স্লোগান দেন। একই সময় পাকসেনাদের ব্রাশফায়ারে সুধীর বড়ুয়ার দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) : ১৯৭১ সালে রক্তঝরা সেই উত্তাল দিনে ঈশ্বরগঞ্জ থানার দামাল ছেলেরা মাতৃভূমিকে শত্রæমুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। নিজ থানা শত্রমুক্ত করতে ১৬ অক্টোবর রাতে কাজী আলম, আলতাফ ও হাবিবুলাহ খান- এ তিন কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা মাইজহাটি রেলওয়ে ব্রিজ ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করেন। বর্তমান ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে রামগোপালপুর সংলগ্ন কটিয়াপুরী ব্রিজটি বিধ্বস্ত করতে গেলে ভোর হয়ে যায়। পরে দিনের বেলায় আক্রমণ না করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হাসিম উদ্দিন আহমেদ দিনেই থানা আক্রমণ করতে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিন কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা পরে সড়ক পথে অগ্রসর হয়ে দত্তপাড়া শ্মশান ঘাটে এসে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। তিন গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী হাসানুজ্জামান হিরো, হাবিবুর রহমান আকন্দ হলুদ ও মতিউর রহমান। আক্রমণের রূপরেখা অনুযায়ী কোম্পানি কমান্ডার আব্দুস সালামের নির্দেশনায় মতিউর রহমান আব্দুস ছাত্তার গ্রুপ চরহোসেনপুর নলুয়াপাড়া জামে মসজিদের পাশ থেকে একযোগে আক্রমণ করবে। কিন্তু রূপরেখা অনুযায়ী থানা সদরে প্রবেশ করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ভেঙে পড়ে চেইন অব কমান্ড। ফলে অভিযান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ৮ ডিসেম্বর পুনরায় মুক্তিযোদ্ধারা সু-সংগঠিত হয়ে থানায় আক্রমণ করেন। আক্রমণের ভয়াবহতায় ভীত হয়ে পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকাররা গভীর রাতে থানা প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ৯ ডিসেম্বর তাই ঈশ্বরগঞ্জবাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বের ও অহংকারের দিন।
নওয়াপাড়া (যশোর) : ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ছিল অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ। ওই দিন দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা অভয়নগরকে নওয়াপাড়ার বর্তমান পীর কেবলা আলহাজ খাজা রফিকুজ্জামান শাহের নেতৃত্বে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী মিলে শত্রæমুক্ত করে বাংলার মুক্তিকামী দামাল ছেলেরা খুলনার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এই দিনে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী একযোগে অভয়নগরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়িয়ে দেয়। অভয়নগরবাসী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হত্যা নির্যাতন আর দুঃশাসন থেকে মুক্তি পায়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র হামলা ও গেরিলা হামলায় খুব অল্পসময়ের মধ্যে সেদিন শহর ছাড়তে বাধ্য হয় পাক হানাদার বাহিনী।  
১৯৭১ সালে অভয়নগরে বেশ কয়েকটি ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মুক্তিযোদ্ধাদের রেললাইনের ওপর বগি রেখে পাক বাহিনীর রসদ সরবরাহে বাধা দানের প্রতিশোধ নিতে পাক হানাদাররা নওয়াপাড়া রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ব্রাশফায়ার চালিয়ে ৬ জনকে হত্যা করে। এছাড়া পাক আর্মিও একটি বড় দলের ট্রেনে যাওয়ার খবর পেয়ে মিত্রবাহিনীর বিমান হামলার ঘটনায় নওয়াপাড়া স্টেশনে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের প্রায় ২শ যাত্রী প্রাণ হারায়। শহীদদের স্মরণে নওয়াপাড়া পৌরসভা স্টেশনে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়