দৈনিক বাংলার মোড় থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

কক্সবাজারের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী : আগামীতেও নৌকায় ভোট চাই

পরের সংবাদ

প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে > ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : বিএনপি-জামায়াত যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের ব্যাংকগুলোতে ‘টাকা না থাকার গুজব’ ছড়িয়ে একটি মহল মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। আজকে সকালে (গতকাল) আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের কোনো সমস্যা নাই। প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে। গুজবে কেউ কান দেবেন না। এটি আমার অনুরোধ। গতকাল মঙ্গলবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এরআগে বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন শেখ হাসিনা। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আর ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা। পরে পায়রা অবমুক্ত করে ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেরনের উদ্বোধন করেন সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। এসময় ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত গাওয়া হয়। ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের আহ্বায়ক অসীম কুমার বৈদ্য ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম সুমন পরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও শোক প্রস্তাব পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি। নিহত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সম্মেলন উদ্বোধনের পর ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের জন্য নতুন অ্যাপেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা নানা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হন। তারা বিভিন্ন নেতার নামে স্লোগান দেন। রংবেরঙের টি-শার্ট পরে অনেকে সম্মেলনে যোগ দেন। এর আগে ছাত্রলীগের ২৯তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকে টাকার কোনো সমস্যা নেই। প্রতিটি ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছ। ব্যাংকে টাকা নেই বলে একটি মহল কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। আর টাকা নেই বলে

অনেকে টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আগেও বলেছি, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখলে চোরের পোয়াবারো, তারা চুরি করে খেতে পারবে। সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কেউ কেউ। এদের চোরের সঙ্গে কোনো সখ্যতা আছে কিনা- সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি তারা এ দেশের উন্নয়ন কখনোই দেখবে না। মানুষ সামনের দিকে আগায়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পেছনে যায়, ভূতের মতো। তারা মনে হয়, আমাদের দেশে ভূতের রূপ নিয়েই আসে।
তিনি বলেন, মানুষের ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না- এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। জনগণ স্বতঃফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। ভোট কারচুপির কালচার দিয়েছে জিয়াউর রহমান। হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। না ব্যালট পাওয়া যায়নি। সব হ্যাঁ ভোট ছিল।
বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীরা যাতে কোনো দিন ক্ষমতায় না আসতে পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বয়স এখন ৭৬। যে কোনো সময় আমি অক্কা পেতে পারি। কিন্তু আমাদের বাকি প্রজন্মকে কাজ করতে হবে। সেভাবে গড়ে উঠতে হবে, যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ মুছে ফেলতে না পারে। বাংলাদেশের ক্ষমতায় যেন আর কখনো বিএনপি-জামায়াত আসতে না পারে, সেজন্য জনমত গড়ে তুলতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার বন্ধে জবাব দেয়ার আহ্বান : আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হচ্ছে মন্তব্য করে সবাইকে এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্যোশাল মিডিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে ভরে গিয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এর ‘উপযুক্ত’ জবাব দিতে হবে। জবাব দেয়ার বেশি কিছু না। ওরা যখন আমাদের বিরুদ্ধে যেটা লেখে তার জবাব দেয়া লাগবে না। ওদের অপকর্মটা যদি সেখানে কমেন্টে ছেড়ে দেয়া যায়, তাহলেই ওরা তা বন্ধ করে দেবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে ভালো। ওরা যা বলবে, বিএনপি ক্ষমতায় থেকে কী করেছে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের খুন, তারা কাকে কাকে মেরেছে, কী করেছে, কই কই তাদের চুরি, ভোট চুরি, ডাকাতি – এগুলো তুলে ধরলেই তো যথেষ্ট। আমার মনে হয় ছাত্রলীগ এই কাজটা করতে পারবে।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবীরা খালেদা-তারেকের সঙ্গে মিলেছে : সরকারের ঢালাও সমালোচক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর কঠোর সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তখন কথা বলেছিলেন। এখনো অনেকে আছেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সঙ্গে। মানি লন্ডারিং, অস্ত্র কারবারি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি তারেক। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এই অপরাধীদের সঙ্গে এখন অনেক জ্ঞানী-গুণীও গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা বুদ্ধিজীবী নন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। তারা খালেদা-তারেকের সঙ্গে গিয়ে মিলেছেন।
দক্ষ মানবসম্পদের বিকল্প নেই : শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার পেটুয়া বাহিনী সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, শিক্ষা শুধু নিজেরাই গ্রহণ করবে না, গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষা দেবে। তারা সেটিই করেছে। আমাকে রিপোর্টও দিয়েছে। আমাদের পেটুয়াবাহিনী লাগে না।
লেখাপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, লেখাপড়া শিখে এদেশের উপযুক্ত নাগরিক হতে হবে যেন বাংলাদেশের এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানব শক্তি দরকার। এই যুবসমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ, যারা আমার ২০৪১ এ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক। তাদের আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। তারা প্রযুক্তি এবং কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবে এবং আমাদের আরো উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেরই, যারা মেধাবী তাদের নিজেদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা যেমন নিজেদের করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থার দরকার। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতিও যেমন দরকার আবার সেইভাবে আমাদের প্রশাসন বা কারিগরি সব ধরনের শিক্ষার দরকার রয়েছে। প্রতিটি সংগ্রামেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। আগামী দিনেও তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই আশাই করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়