বিশ্বকাপ ফুটবল : ভিনদেশি পতাকা না উড়ানোর অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ডের জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : ওয়াদা চাই, নৌকায় ভোট দেবেন > খুনির দল যেন ক্ষমতায় না আসে

পরের সংবাদ

রাজশাহীর গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল : আওয়ামী লীগ লুটেরাদের দলে পরিণত হয়েছে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইদুর রহমান ও আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী থেকে : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ লুটেরাদের দলে পরিণত হয়েছে। এ সরকার দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকারি দলের নেতাকর্মী বাসে আগুন দিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপায়। গতকাল শনিবার বিকালে রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে বিএনপির কর্মসূচি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাহার করা হয়েছে বিভাগের পরিবহন ধর্মঘট।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা কি দেশের মানুষ নন? এত অমানুষ কেন আপনারা? আপনাদের উচিত ছিল সমাবেশে পানি দেয়া। তা না করে পানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছেন, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করেছেন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন পরিচালনা করবে এবং তাদের অধীনে সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। তরুণদের দুর্বার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটবে।
গণসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিনা রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই স্লোগান আর মিছিলে মুখর হয়ে ওঠে পুরো নগরী। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মসূচির সময়সীমা থাকলেও সকালেই শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য চেয়ার ফাঁকা রেখে মঞ্চে বসেন রাজশাহী সিটির সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভাগের ৮টি জেলা ও উপজেলা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী মাদরাসা মাঠের আশপাশে জড়ো হয়। নদীপথে নৌকাযোগে অংশ নেয় প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী। পায়ে হেঁটেও আসে জেলার ৯ উপজেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী। সমাবেশ ঘিরে নগরীর অলিগলি ছেয়ে যায় পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে। নেতাকর্মীর হাতে হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন, ধানের শীষ ও জাতীয় পতাকা। এ সময় তার খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দেন।
সমাবেশে বৃদ্ধ ব্যক্তিদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে। বগুড়া থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব নুরুল হক বলেন, ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগ এড়াতে ৪ দিন আগে চলে এসেছি। অনেক স্থানে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। জয়পুরহাটের সদর উপজেলা থেকে ৪ দিন আগেই আসেন কামরুজ্জামান প্রিন্স। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসতে হবে একথা বলিনি, কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার চাই। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও নওগাঁর মান্দা থেকে গণসমাবেশে আসেন অশীতিপর ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, আমরা অসহায় মানুষ, আমাদের গণতন্ত্র দরকার। ইউসুফের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ৮২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখাশোনা করেছেন। ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট তার হাতে থাকলেও তিনি কিছু হতে পারেননি।
এদিকে সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় রাজশাহীকে। সমাবেশস্থলসহ নগরী ও জেলার বিভিন্ন প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। নগরীর প্রধান প্রবেশদ্বারের পাশাপাশি রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনেও চলে পুলিশি তল্লাশি। নগরীর শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এসব চেকপোস্ট বসানো হয় বলে জানায় পুলিশ।
রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পুঠিয়া, বেলপুকুর, কাটাখালি ও তালাইমারি, রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মোহনপুর, নওহাটা ও নওদাপাড়া এবং রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের গোদাগাড়ী ও কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হয়। নগর ও জেলা পুলিশ এসব চেকপোস্ট পরিচালনা করে। এর বাইরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সমাবেশের আশপাশের সড়কেও সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।
এদিকে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় চলমান অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট গতকাল বিকাল থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে বাস চলাচল। আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ায় এ প্রত্যাহারের ঘোষণা বলে জানান রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটু। তিনি বলেন, দুপুরে ১০ দফা দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফর উল্লাহ তার কার্যালয়ে সবাইকে নিয়ে বসেছিলেন। ওই বৈঠকে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার তাদের ১০ দফা দাবি পর্যায়ক্রমে মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে এক মাস সময় চেয়েছেন। সেজন্য ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এছাড়া নগরীতে অটোরিকশা চালকদের ডাকা ধর্মঘটও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে দূর হয়েছে জনদুর্ভোগ। ধর্মঘটে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল রাজশাহী। শহরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়েন বেশি বিপাকে। অনেকে হাসপাতালে আসতে গিয়েও রাস্তা থেকে ফিরে যান। চাঁপাইনবাগঞ্জের রামচন্দ্রপুর থেকে রাজশাহী আসছিলেন জাহানারা খাতুন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, স্বামীর চোখের অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু গাড়ি না পেয়ে কিছু দূর গিয়ে ঘুরে আসতে বাধ্য হয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়