প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ফল ১৪ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

১৭২ দেশে শ্রমবাজার : রেমিট্যান্স কমছে যে কারণে

পরের সংবাদ

২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দীতে মিলল অনুমতি : নয়াপল্টনেই অটল বিএনপি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতাদের ভাষ্য, পার্টি অফিসের সামনেই বিএনপি সমাবেশ করে, এটা নতুন কিছু নয়। তবুও অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নয়াপল্টনে অনুমতি না দিয়ে সরকার কেন সোহরাওয়ার্দীতে অনুমতি দিল? এখানে গভীর চক্রান্ত ও দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। তবে সব বাধা ডিঙ্গিয়ে নয়াপল্টনেই সমাবেশ হবে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগের মহাসমাবেশের জন্য গতকাল মঙ্গলবার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে বিএনপির পছন্দমতো নয়াপল্টনে নয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেই সঙ্গে দেয়া হয়েছে ২৬টি শর্ত। এ বিষয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, শর্ত দিয়ে সমাবেশ হয় না।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, মূলত ঢাকার সমাবেশে ‘রাজপথ দখলই’ মূল টার্গেট বিএনপির। দলটির লক্ষ্য, নয়াপল্টনের সমাবেশ সারা ঢাকার অলি গলিতে ছড়িয়ে দেয়া। তাছাড়া রাজপথে গণজমায়েত যতটা ‘ফোকাস’ হবে, সোহরাওয়ার্দীর মাঠে সেটা হবে না। এমনকি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মহাসমাবেশের জন্য অনিরাপদ মনে করছে বিএনপি।
দলটির নেতাদের মতে, সোহরাওয়ার্দীর মাঠের পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, যেখানে সমাবেশের দিন ছাত্রলীগের বড় ধরনের মহড়া থাকবে। তারা নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে ঢুকতে বাধা দেবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশমুখেও থাকবে ক্ষমতাসীন দলের কড়া পাহারা। সেখানেও নেতাকর্মীরা বাধার সম্মুখীন হবে। যেটা নয়াপল্টনে সম্ভব না। যে কারনে বিএনপির নেতারা নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনেই গণসমাবেশ করতে বদ্ধ পরিকর। এ নিয়ে গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তর আলোচনা হয়।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ ‘পার্টি অফিসের সামনেই হবে’। এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া নিহতের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাত উচিঁয়ে অত্যন্ত দৃঢ় কণ্ঠে বলেন- ‘করতে দেয়া হবে না ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ? এটা কারও বাপের রাজত্ব নাকি? ১০ তারিখে এখানেই সমাবেশ হবে। এটা জনগণের ঘোষণা।’ এরপর থেকেই সভা-সমাবেশে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতারা সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ব্যাপারে অটল মনোভাব জানিয়ে আসছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতি চাইনি। নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পাইনি। সরকার কেন আগ বাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দীতে অনুমতি দিল? এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। সমাবেশ করতে ডিএমপির ২৬ শর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, শর্ত দিয়ে সমাবেশ হয় না। যে শর্ত তারা দিয়েছে তা মেনে সমাবেশ করার চেয়ে ঘরে বসে থাকা ভালো।
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সমাবেশের জন্য নয়াপল্টনই আমাদের পছন্দ। সবসময় সেখানেই সমাবেশ করে আসছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সম্পর্কে তিনি বলেন, এই উদ্যানে অনেক কিছু তৈরি হয়েছে। সেখানে তেমন কোন মাঠ নাই। আমাদের বলা হয়েছিল যে, পল্টনে মিটিং করেন কোন সমস্যা নাই। তাহলে কেন এতো অনুমতি অনুমতি খেলা চলছে।
কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রথমত, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতিই চাইনি। আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার কথাই ডিএমপি কমিশনারকে বলেছি। আমাদের এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নয়াপল্টনেই করার। ডিএমপি যে চিঠি দিয়েছে, সেটা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বসবেন।
প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বিএনপি : বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্যে মূল ফোকাস দেয়া হচ্ছে ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশকে। ঢাকায় ওইদিন সর্ববৃহৎ শোডাউনের প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে দলটি। সারা দেশের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যুগপৎ নেতাদের কাছে ১০ দফা দাবির খসড়া পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যা ১০ ডিসেম্বর জনসম্মখে তুলে ধরা হবে। ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা সব দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে নানান প্রতিবন্ধকতা আসবে ধরে নিয়েই সারাদেশ থেকে সমাবেশের ১০ দিন আগে থেকেই ঢাকায় এসে অবস্থান করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ঢাকায় এসে গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মীয়ের বাসা ও হোটেলে সতর্ক অবস্থায় থাকা, যাদের থাকার জায়গা নেই, তাদের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কী উপায়ে কর্মীদের ঢাকায় আনা হবে সেই বিষয়ে জেলা নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামীকাল ১ ডিসেম্বর থেকেই সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় ঢুকতে শুরু করবে।
ঢাকার বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে। মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি কয়েকটি কমিটি করে কাজ করছেন। ঢাকার ১১টি ইউনিট ও আশপাশের এলাকায় জোনভিত্তিক কর্মীসভা শেষ।
সূত্র জানায়, সমাবেশের শৃঙ্খলা রক্ষায় ৫০০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করবে। নজরদারি করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কার্যালয়সহ সিনিয়র নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে সিসি ক্যামেরায় সমাবেশ পর্যবেক্ষণ করবে বিশেষ আইটি টিম। এছাড়া বিশেষ নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহার করা হবে ড্রোন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশে আমরা কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করব। নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সব করতে চাই। কিন্তু সরকার যদি সেই সমাবেশে বাধা দেয়, তাহলে বাধবে লড়াই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়