প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ফল ১৪ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

১৭২ দেশে শ্রমবাজার : রেমিট্যান্স কমছে যে কারণে

পরের সংবাদ

দেবর-ভাবি এক টেবিলে : কোন্দল নিরসনের আভাস স্বস্তিতে জাপা নেতাকর্মীরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দেশে ফেরার পর প্রথমবারের মতো দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। শুধু বৈঠকই নয়, এক টেবিলে নাস্তাও সারলেন দেবর-ভাবি। প্রায় ৫৫ মিনিটের একান্ত পারিবারিক এই বৈঠকে জাপার বিরোধপূর্ণ এ দুই নেতার মধ্যে দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তারা দলকে একসঙ্গে চালিয়ে নেয়ার বিষয়ে একমত হন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে দুজনের এই সাক্ষাতের বিষয়টি দলের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে চলা দেবর-ভাবির দ্ব›দ্ব নিরসনের পাশাপাশি দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যেও ফিরবে স্বস্তি- এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে গত রবিবার দেশে ফেরেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। দেশে ফিরে তিনি রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে অবস্থান করছেন। দেশে ফেরার দিন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জি এম কাদেরসহ দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটানো হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে যান জি এম কাদের। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু হোসেন বাবলা, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু। এছাড়া বৈঠকে রওশন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ ও তার স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
জাপার শীর্ষ দুই নেতার বৈঠক নিয়ে দলটির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। তারা এক টেবিলে বসে নাস্তা করেছেন। সেখানে শুধু তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক দূরত্ব নিয়ে কথা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত এটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। সব দলেই সমস্যা থাকে এবং থাকবে। তবে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে কোনো দূরত্ব ছিল না। তারা সব সময় একসঙ্গে ছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কিছু কথা হয়েছে। দুই নেতার বৈঠক নিয়ে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, দলের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টার মতো অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। জি এম কাদের রওশন এরশাদের শারীরিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। এছাড়া দলের সাম্প্রতিক সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায়, এরপর দলের মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। দল এখন চাঙা হবে বলেই আমরা মনে করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা, দলের নেতাকর্মীরাও চেয়েছিলাম দলের এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হোক।
জাতীয় পার্টিতে ভাবি-দেবরের এই দ্ব›েদ্বর সূত্রপাত হয় থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখান থেকে রওশনের পাঠানো এক চিঠিকে কেন্দ্র করে। গত ৩১ অক্টোবরের ওই চিঠিতে হঠাৎ করে তিনি ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলনের ডাক দেন। পরে অবশ্য তা স্থগিত করা হয়। জি এম কাদের ও তার অনুসারীরা রওশনের এই ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রওশন এমনটা করতে পারেন না। এর পাল্টা হিসেবে রওশনকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে সেই পদে বসাতে স্পিকারকে চিঠি দেয় জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল। এ বিষয়ে এখনো স্পিকারের দপ্তর থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এরপর দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার দায়ের করা একটি মামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক এই আদেশ দেন। তবে গতকাল মঙ্গলবার এ নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর ফলে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে আর কোনো বাধা থাকল না।
গত বছরের ৫ নভেম্বর রওশন এরশাদকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চলতি বছরের ২৭ জুন দেশে ফিরে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ দেন রওশন। ৫ জুলাই ফের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়