কাগজ প্রতিবেদক : নামী স্কুলেই পড়তে হবে, এই মানসিকতা বদলানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের বহু জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, নেতা, পাকিস্তান আমলের বহু সিএসপি অফিসার জেলা স্কুল থেকে পাস করেই হয়েছে। এখন কোথা থেকে একটা ধারণা, মাত্র কয়েকটা স্কুল- ওইসব স্কুলে না পড়লে নাকি পড়াশোনাই করা হয় না। এই যে মানসিকতা, এটা বদলাতে হবে। কেননা, জেলাগুলোতে সব সময়ই খুব ভালো স্কুল ছিল। আমাদের এখনো যারা আছে তাদের বেশির ভাগই সেখান থেকে পাস করে আসছে। তাহলে সেই স্কুলকে খাটো করে দেখা বা দুয়েকটা নামের ওপরে চলা বাদ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল সোমবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ এবং ফলাফলের পরিসংখ্যান হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ ও পরিসংখ্যান তুলে দেন। পরে বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ স্ব স্ব বিভাগের ফলাফলের পরিসংখ্যান তার হাতে তুলে দেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিটি স্কুলেই যেন ভালোভাবে পড়াশোনা হয় তা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব থেকে ভালো ছেলেমেয়েরা যেখানে ভর্তি হবে সেখান থেকে ভালো রেজাল্ট আসবেই। যদি কেউ গাধা পিটিয়ে মানুষ করতে পারে তাকে আমি ক্রেডিট দেই। যে কিছু জানে না তাকে শিক্ষা ভালো করে দিচ্ছে। যে কিছু জানে না তাকে ভালো শিক্ষা যে শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠান দিতে পারবে তাদের একটু বিশেষভাবে সমর্থন দেয়া, পুরস্কৃত করা উচিত।
তিনি বলেন, ভালো ভালো শিক্ষার্থী নিয়ে ভালো রেজাল্ট করা খুব সহজ ব্যাপার। কিন্তু যারা খুব ইয়ে…তাদের যারা পাস করাতে পারে তাদেরই তো ক্রেডিট বেশি। আমার মনে হয়, আমাদের এ মানসিকতাগুলোর একটু পরিবর্তন হওয়া একান্তভাবে দরকার।
শিক্ষাক্ষেত্রে দেশ যেন পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, শিক্ষা ছাড়া আমরা দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারি না। এমডিজি সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি, এসডিজিও আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তাছাড়া আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা যখন আমরা পেয়েছি তখন এ উন্নয়নশীল দেশের পরিচালনা, উন্নয়নশীল দেশের যে কার্যক্রম তার জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করতে হবে, যেন আমরা অর্জন থেকে কিছুতে পিছিয়ে না পড়ি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, যখনই এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের শুরু হবে আমাদের দেশেও যেন আমরা সেই ধরনের দক্ষ জনবল পাই, তার জন্য এখন থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।
এসএসসিতে কৃতকার্যদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখতে পারার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আজকে পরীক্ষার ফলাফলে যারা পাস করেছে তাদের অভিনন্দন জানাই। কিন্তু যারা হয়তো পাস করতে পারেনি তাদেরো বলব তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আমার প্রশ্ন, কেন ছেলেমেয়েরা ফেল করবে, ফেল করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। না পড়লে তো ফেল করবেই। কাজেই এটা মাথায় রেখে সবাইকেই পড়তে হবে।
জাতির পিতার করে দেয়া ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের আলোকে একটি যুগোপযোগী শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ণে সক্ষম হয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এ পর্যন্ত সরকারে ছিলাম, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার হার বাড়ানো সবকিছু ভালোই এগোচ্ছিল। কিন্তু এই করোনাভাইরাস অতিমারির ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, ছেলেমেয়েদের স্কুল ও লেখাপড়া বন্ধ, ঘরের মধ্যে পড়ে থাকার মতো একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ ছিল, এটা আমাদের শিশুদের জন্য খুবই একটা ক্ষতির সময়। তারপরও অনলাইনে হলেও শিশুরা লেখাপড়া যাতে চালিয়ে যেতে পারে সে সময়েও আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি, ফলে কিছু পড়াশোনার সুযোগ হয়েছে। অনেক উন্নত দেশ থেকেও বাংলাদেশ সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছে। পাশাপাশি আজকে শিক্ষার হারও ৭৫ ভাগে উন্নীত করতে পেরেছে।
প্রসঙ্গত, এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল।