ইকুয়েডর রুখে দিল ডাচদের

আগের সংবাদ

১০ দফা দাবিতে নৌশ্রমিক ধর্মঘট : সারাদেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ

পরের সংবাদ

পীরগাছার সুবিদ দাখিল মাদ্রাসা : ৬ শিক্ষার্থীর জন্য মাসে সরকারের ব্যয় ৩ লাখ!

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি : রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সুবিদ দাখিল মাদ্রাসায় কাগজে কলমে দেড়শ শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে প্রতিদিন ক্লাস করছে ছয় থেকে আটজন শিক্ষার্থী। আর এর বিপরীতে রয়েছে ১৫ শিক্ষক ও দুইজন কর্মচারী।
গতকাল বুধবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। এ সময় একটি ক্লাসরুমে ১০ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছিলেন শিক্ষক শাহাদুল ইসলাম। অপরদিকে একটি ক্লাসরুমে বার্ষিক পরীক্ষা চলে। এ পরীক্ষায় অংশ নেয় মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী। তাও আবার বই খুলে লেখে তারা। সাংবাদিক দেখে পার্শ্ববর্তী হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ডেকে এনে পরীক্ষা দেয়ার অভিনয় করান কয়েকজন শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা অকপটে স্বীকার করে সাংবাদিকদের কাছে। মূলত ১৯৮৫ সালে পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী রেলস্টেশনের পূর্ব পাশে সুবিদ দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে মাদ্রাসাটি এখন ভূতের বাড়ি। দুটি টিনশেড ঘর থাকলেও নেই দরজা-জানালা। একটি টয়লেট থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তা জরাজীর্ণ। ছয়টি ক্লাসরুমের মধ্যে দুটি রুমে ১২টি বেঞ্চ ছাড়া কিছু নেই। ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বসার জন্য রয়েছে মাত্র সাতটি চেয়ার। মাদ্রাসায় মাহমুদা বেগম নামে একজন কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও নেই কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ। অথচ ১৫ শিক্ষক ও দুই কর্মচারীকে প্রতি মাসে তিন লাখ এক হাজার ৮২১ টাকা বেতন দেয় সরকার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সুবিদ দাখিল মাদ্রাসার সুপার আনোয়ারুল ইসলাম রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। তিনি মাদ্রাসায় আসেন না। আর শিক্ষকরা দুই থেকে চার দিন পর পর এসে শুধু হাজিরা দিয়ে চলে যান। বিগত সাত বছর ধরে এভাবেই চলছে ওই মাদ্রাসার কার্যক্রম। সভাপতি না থাকায় সুপার আনোয়ারুল ইসলামের অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরাও। এ রকম একটি মাদ্রাসায় কীভাবে বেতন-ভাতা পান তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় শরিফুল ইসলাম, লিমন তালুকদার, আব্দুল জলিল বলেন, ‘এটি একটি আজব মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটির সুপার আনোয়ারুল ইসলামের দুর্নীতির কারণে এমন অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থী শূন্যের কোঠায়। দাতা এবং এলাকার মহৎ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি শক্ত পরিচালনা কমিটি গঠন করলে এ অবস্থা হতো না।
আমরা এলাকাবাসী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ রেখে মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি করছি।’
ওই মাদ্রাসার সহসুপার আবুল হোসাইন মো. ফকরুল ইসলাম, শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, ইউনুছ আলী বসুনিয়া, হাসান আলী বলেন, ‘সুপারের কারণে মাদ্রাসার এ অবস্থা। তিনি কারো কোনো কথা শোনেন না। মাদ্রাসায় আসেন না। মাদ্রাসার সব কাগজপত্র তার কাছে। মাদ্রাসায় কিছু নেই। আমরা তার কাছে অসহায়।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে মোবাইলে সুবিদ দাখিল মাদ্রাসার সুপার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীরা আসলো কিনা জানি না। আমি বাইরে আছি।’
পীরগাছা উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ফারুকুজ্জামান ডাকুয়া বলেন, ‘বিল স্বাক্ষর করেন ইউএনও। আমরা নিধিরাম সরদার। আমাদের করার কিছু নেই।’
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুছা নাসের চৌধুরী জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আর ইউএনও স্যার আসলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়