মোজাম্মেল-প্রণয় সাক্ষাৎ : কলকাতার থিয়েটার রোডের সেই বাড়িটি চেয়েছে বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

কাদের সঙ্গে ডায়লগ করব? মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

পরের সংবাদ

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব : রাবীন্দ্রিক সকালে উষ্ণতা ছড়ালেন শিল্পীরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : করোনার কারণে মঞ্চ থেকে প্রায় তিন বছর দূরে ছিল বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার নানা আয়োজন। ৩৩তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবের মধ্য দিয়ে ফের মঞ্চে ফিরল সংস্থাটির কার্যক্রম। এর মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির বৈরী আবহাওয়ায় সংগীতের সুবাস ছড়িয়ে দিলেন গুণী শিল্পীরা।  
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় অগ্রহায়ণের রাবীন্দ্রিক সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তন মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ, স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযুষ বড়ুয়া। অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশন ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথমেই দেয়া হয় গুণীজন সম্মাননা।
সংগঠনের রীতি অনুযায়ী জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। এরপর সংস্থার শিল্পীরা দুটি কোরাস পরিবেশন করেন। গান দুটি ছিল ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ ও ‘তোমার  সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারি পারে’।
‘এই জীবনের ব্যথা যত এইখানে সব হবে গত-’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন অমিয়বাণী ধারণ করে দুই দিনের সংগীত উৎসবের সূচনা হয়েছে। এদিন রবীন্দ্রনাথের গানের সুরে সুরে সংস্কৃতির লড়াইকে বেগবান করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হয়।
এরপর অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়া হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম ও সংগীতশিল্পী রফিকুল আলমকে। দুই শিল্পীর হাতে সম্মাননা স্মারক ও অর্থমূল্য তুলে দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংবর্ধিত দুই গুণীর শংসাবচন পাঠ করেন সাগরিকা জামালী ও সীমা সরকার।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছেন। সেরকম দুজন শব্দসৈনিক আশরাফুল আলম ও রফিকুল আলমকে সম্মাননা দেয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সব সময় বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এ সময় সংগঠনটিকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী।
সম্মাননাপ্রাপ্ত বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম বলেন, জগতের বিপুল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। আমি আজ জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা থেকে তার নামাঙ্কিত সম্মাননা পেলাম। এ সম্মাননাটি আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের। রফিকুল আলম বলেন, রবীন্দ্রনাথ

ঠাকুরের নামাঙ্কিত এ সম্মাননা আমার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যেন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।
সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুই শব্দসৈনিককে সম্মাননা দিতে পেরে আমরা গর্বিত।
উদ্বোধনী অধিবেশনে দ্বিতীয় পর্বে ছিল আমন্ত্রিত পাঁচটি দলের সমবেত পরিবেশনা। এতে অংশ নেয় সংগীত ভবন, উত্তরায়ণ, সুরতীর্থ, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা) ও বিশ্ববীণা।
রবীন্দ্রনাথের পূজা-প্রেম পর্যায়ের গানের পাশাপাশি বৈচিত্র্য পর্যায়ের গানে সাজানো এই পর্বটি দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে উষ্ণতা ছড়ায়। এই পর্বের শুরুতেই মঞ্চে আসেন সংগীত ভবনের শিল্পীরা। তারা পরপর গেয়ে শোনালেন ‘লহো লহো তুলে লহো নীরব বীণাখানি’ ও ‘হেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী/ পূর্ণশশী ওই- যে দিল আনি’। তাদের পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন উত্তরায়ণের শিল্পীরা। তারাও গেয়ে শোনান দুটি গান- ‘সত্য মঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রæবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে’ ও ‘প্রাণে খুশির তুফান উঠেছে/ভয়-ভাবনার বাধা টুটেছে’।
সুরতীর্থের শিল্পীরা গাইলেন ‘কবে আমি বাহির হলেম তোমারি গান গেয়ে’ ও ‘কান্নাহাসির-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা’। বুলবুল ললিতকলা একাডেমির (বাফা) শিল্পীরা শোনান ‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে’ ও ‘এখন আর দেরি নয়, ধর গো তোরা হাতে হাতে ধর গো’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি হয় বিশ্ববীণা শিল্পীদের কণ্ঠে সমবেত গানের মধ্য দিয়ে। তারা শোনান ‘হায় হেমন্তল²ী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা-’ ও ‘একি মায়া,/ লুকাও কায়া/ জীর্ণ শীতের সাজে’।
কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম পরপর গেয়ে শোনান ‘উত্তর বায় জানায় শাসন/ পাতলো তপের শুষ্ক আসন’ ও ‘ওই জানালার কাছে বসে আছে/ করতলে রাখি মাথা’ শিরোনামে দুটি গান। তার আগে আশরাফুল আলম ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’-এর কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করেন।
বিকালে দ্বিতীয় অধিবেশনে অংশ নেন প্রায় অর্ধশতাধিক শিল্পী। প্রথমদিনের শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন খন্দকার খায়রুজ্জামান কাইয়ুম, বুলা মাহমুদ, তানজিমা তমা, অনিকেত আচার্য, সাগরিকা জামালী, বিষ্ণু মণ্ডল, কনক খান, সীমা সরকার আবদুর রশীদ, রিফাত জামাল মিতু, খোকন দাস, আজিজুর রহমান তুহিন, শর্মিলা চক্রবর্তী আহমেদ শাকিল হাশমী, সাজ্জাদ হোসেন, জাফর আহমেদ, রাবিতা সাবাহ, ছন্দা রায়, নির্ঝর চৌধুরীসহ আরো অনেকে।
করোনাকালে চলে যাওয়া শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের স্মৃতির উদ্দেশে উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে। আজ শনিবার শেষ হবে দুই দিনের এ উৎসব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়