জাহাঙ্গীর কবির নানক : বিএনপির মানবতার শিক্ষা নেয়া দরকার

আগের সংবাদ

এপার ওপার সুড়ঙ্গ সংযোগ : কর্ণফুলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের অপেক্ষায়

পরের সংবাদ

কুয়াকাটায় সীমাহীন দুর্ভোগে ৪ শতাধিক পরিবার : উচ্ছেদের প্রতিবাদে হাজারো মানুষ রাস্তায়

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : গুঁড়িয়ে দেয়া বসতবাড়ি আকড়ে ধরে এখনো খোলা জায়গায় বসবাস করছে উচ্ছেদ হওয়া ৪ শতাধিক পরিবার। উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোর থাকার বিকল্প জায়গা নেই। চলছে না রান্নাবান্না গোসল। পানির গভীর নলকূপও ভেঙে দিয়েছে প্রশাসন। খালি ভিটায় মালামাল নিয়ে বসে আছেন তারা। অভুক্ত মানুষগুলো শিশু সন্তান নিয়ে শীতে কষ্ট পাচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছেন। স্কুলে যাচ্ছে না বেশিভাগ শিশু। এমন অবস্থায় গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় কুয়াকাটা পৌরসভার হুইছান পাড়া ও পাঞ্জুপাড়ার হাজারো মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
প্রায় আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধজুড়ে শিশুসহ ভুক্তভোগী ওইসব মানুষের মাঝে দেখা গেছে চাপা কান্না। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, উচ্ছেদ হওয়া এই ভূমি তাদের। পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত তারা কোথাও যাবেন না। আর যাওয়ার জায়গাও নেই তাদের। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী সবার দাবি, তাদের যেন পুনর্বাসন করা হয়।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া পাঞ্জুপাড়ার আব্বাস কাজী, আ. ছত্তার, নিজাম, লতিফ মিস্ত্রী, হোসেন পাড়া গ্রামের আ. রহিম হাওলাদার, বেল্লাল খলিফা ও মোহাম্মদ হানিফ বলেন, কোনো প্রকার আগাম নোটিস বা সময় না দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে বাড়িঘর। প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে না উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর।
হোসেনপাড়া গ্রামের আছিয়া, ছফুরা বেগম, কহিনুর বেগম, মমতাজ ও কুলসুম বলেন, মোরা কই যামু কন। ৫০-৬০ ধরে মোরা এই জায়গায় থাহি। মোগে যাওয়ার আর জায়গা নাই। মইর‌্যা গেলেও এই জায়গা ছাইরা যামু না।
শতবর্ষী আলী আকবর। ১১ সন্তানের বাবা। তার জীবন পার করেছেন সমুদ্রের পাড়ে। গোটা পরিবারই সমুদ্র কেন্দ্রিক জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। সমুদ্রের পাড়েই পরিবারের কবর। ভূমিহীন আলী আকবর উচ্ছেদের পর থেকে খালি ভিটা আকড়ে ধরে পড়ে রয়েছেন। আলী আকবর বলেন, তিনি এখন মৃত্যুপথযাত্রী। পুনর্বাসন না হলে মরণ ছাড়া আর উপায় নেই।
হাসেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, উচ্ছেদকৃত পরিবাগুলোর শিশুরা ক্লাসে আসছে না। উপবৃত্তির টাকা দেয়ার কথা বলে তিনি শিশুদের স্কুলমুখী করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অপর এক সহকারী শিক্ষক সোহরাব হোসেন মিন্টু বলেন, খোলা জায়গায় বসবাস করায় দুর্ভোগে পরিবারগুলো। ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছে শিক্ষার্থীরা।
কুয়াকাটা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ছাবের হোসেন বলেন, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর অধিকাংশই ভূমিহীন। বর্তমানে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা।
উচ্ছেদ হওয়া ৪ শতাধিক পরিবার কেমন আছে এমন প্রশ্নের জবাবে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন শত শত মানুষ। পৌরসভার নিজস্ব জমি না থাকায় হঠাৎই পুনর্বাসন সম্ভব নয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীনে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া আর কিছুই করার নেই।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, তিনি উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রকৃত ভূমিহীন তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। পর্যায়ে ক্রমে পুনর্বাসন করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়