জাহাঙ্গীর কবির নানক : বিএনপির মানবতার শিক্ষা নেয়া দরকার

আগের সংবাদ

এপার ওপার সুড়ঙ্গ সংযোগ : কর্ণফুলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের অপেক্ষায়

পরের সংবাদ

ন্যাপের অফিস ও প্রতীক দুই-ই বিএনপির দখলে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আয়েন উদ্দীন : স্বাধীনতার আগে থেকেই ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নির্বাচনী প্রতীক ছিল ধানের শীষ। দলের প্রধান নেতা ছিলেন বিপ্লব ও শোষিত মানুষের মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই প্রতীকেই প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয় ন্যাপ (ভাসানী)। লাল মাওলানার মৃত্যুর পর ন্যাপের তৎকালীন মহাসচিব মশিউর রহমান যাদু মিয়ার হাত ধরে প্রতীকটি দখলে নেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রতীক বেদখল হওয়ার পর রাজধানীতে ন্যাপের কার্যালয় ভাসানী ভবনটিও বিএনপির দখলে।
নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনটি এখনো আছে। লোকজনও ভবনটিকে ভাসানী ভবন নামে চেনে। তবে ন্যাপের কার্যালয় নেই। গতকাল সরজমিন দেখা যায়, ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিএনপির ঢাকা মহানগরীর কার্যালয়। ঠিকানা লেখা আছে- ৮০ নয়াপল্টন, ভাসানী ভবন, ঢাকা। এই অফিসের কোথাও ভাসানীর স্মৃতিচিহ্ন নেই। ভবনটির নিচতলায় চারপাশে হোটেল আর চায়ের দোকান। পুরো ভবনের চারপাশে ভাসানীর চিহ্ন খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় এক কোণে ভাসানী স্মৃতি সংসদ নামে ছোট একটি কক্ষ। পুরনো স্যাঁতসেঁতে কক্ষটিতে প্রবেশ করতেই সাক্ষাৎ হয় ভাসানীর শিষ্য জিয়াউল হক মিলুর সঙ্গে। ৭৫ বছর বয়সি জিয়াউল হক ভাসানী স্মৃতি সংসদের বর্তমান সভাপতি। ন্যাপের অফিস কীভাবে ঢাকা মহানগর বিএনপির কার্যালয় হয়ে গেছে সেই ইতিহাস শোনা গেল তার কাছে। তার ভাষ্য, ১৯৬৭-৬৮ সালে ন্যাপ (ভাসানী) মহানগরী নামে এই ভবনটি ভাড়া নেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিত্যক্ত সম্পদ হিসেবে সরকার নিয়ে নেয়। কিন্তু আমাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করেনি। পরবর্তী সময়ে এরশাদ সরকারের আমলে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার আমাদের ভাসানী স্মৃতি সংসদ নামে ভবনটি অস্থায়ীভাবে লিজ দেয়। তখন ভবনটি ছিল দুই তলা। সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় এটি বিএনপি ভাড়া নেয়। প্রথমে ভাড়ার টাকা দিলেও এখন আর দেয় না। এমনকি বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করেনি দীর্ঘদিন। ২৭ লাখ টাকা বিল বকেয়া হয়েছে। কিন্তু এই বকেয়া বিলের দায়ভার স্মৃতি সংসদ বহন করে। ন্যাপের অবস্থা ও ভবনটি নিয়ে দলটির বর্তমান মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা হয় এক মাস আগে। তিনি বলেন, তেমন অবস্থান দলের নেই। ৩৫টি জেলায় কমিটি থাকলেও অনেক জেলার নেতারা করোনায় মারা গেছেন। আদি কার্যালয় নিয়ে আলাপে জানা গেল বিএনপিতে একীভূত হওয়ার পরই সাদেক হোসেন খোকা ভাইয়ের নেতৃত্বে অফিসটি বিএনপি দখলে নেয়। এখন তারাই আছে।
ধানের শীষ প্রতীকও দখলে : গ্রামবাংলার জনসাধারণের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকটি বেছে নিয়েছিলেন ভাসানী। জনগণও তা গ্রহণ করেছিল। তার মৃত্যুর পর ন্যাপের তৎকালীন মহাসচিব মশিউর রহমান যাদু মিয়াসহ তার অনেক রাজনৈতিক শিষ্য বিএনপিতে যোগ দেন। সঙ্গে করে নিয়ে যান দলের প্রতীক ধানের শীষ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধানের শীষ প্রতীক এখন বিএনপিরই

সমার্থক হয়ে উঠেছে।
তবে প্রতীককে আঁকড়ে ধরলেও মওলানা ভাসানীর রাজনীতির আদর্শ ও প্রভাব দেখা যায়নি দলটিতে। এ বিষয়ে রাজনীতিবিদরা মনে করে,

শুরুতে খাল কাটাসহ কৃষিকেন্দ্রিক কর্মসূচি হাতে নিলেও পরে দলটিতে আর এ ধরনের উদ্যোগ দেখা যায়নি। এর পরিবর্তে দলটির রাজনীতিতে প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। পরে রাজনৈতিক এলিট ও বুর্র্জোয়ারাই দলটিতে প্রভাব বিস্তার করে। এ বিষয়ে জিয়াউল হক বলেন, ১৯৭৮ সালের ১ মে ৬টি দল মিলে জাতীয়তাবাদী জোট গঠন করা হয়। দলগুলো হলো- জাস্টিস আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানের জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জাগদল), মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ন্যাপ (ভাসানী), শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুসলিম লীগ, ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি), মাওলানা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি এবং রসরাজ মণ্ডলের নেতৃত্বে তাফসীল জাতীয় ফেডারেশন। দলটির গঠন প্রক্রিয়াকালীন আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে বিএনপি থেকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। তিনি ভাসানীর নির্ভরযোগ্য সহযোগী ছিলেন। কোনো সম্মেলন বা অনুষ্ঠানে মওলানা ভাসানী যেতে অপারগ হলে তার প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকতেন তিনি। ভাসানীর মৃত্যুর পর দল পরিচালনার দায়িত্ব তার কাঁধেই পড়ে। পরে দলের অন্য অনেক নেতাকর্মীকে নিয়ে তিনি যুক্ত হন বিএনপির গঠন প্রক্রিয়ায়। ন্যাপ বিলীন হয় এই দলে। পরে বিএনপি ন্যাপের প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। সেই থেকে প্রতীকটি তাদের দখলে।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, স্বাধীনতার পর ন্যাপ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। পরবর্তীতে যাদু মিয়ার হাত ধরে জাগদলের মাধ্যমে বিএনপিতে যুক্ত হয়ে যায়। এই বিলীন হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, মওলানা ভাসানীর চিন্তাভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠেনি। ভাসানীর চিন্তা ছিল জনকল্যাণমুখী, যুদ্ধবিরোধী, সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী। কিন্তু এরকম চিন্তার কোনো দল তৈরি হয়নি। বিভিন্ন চিন্তার মানুষ ভাসানিকে কেন্দ্র করে একত্রিত হয়। যাদু মিয়া ছিল এরকম একজন। তেভাগা আন্দোলনের সময় কৃষকদের পক্ষে অবস্থান নেন ভাসানী। কিন্তু যাদু মিয়া ও তার পরিবার এই আন্দোলনের বিপক্ষে গিয়ে কৃষকদের অত্যাচার করেছে। সেই হিসেবে ভাসানীর শিষ্য যাদু মিয়ার বিএনপির সঙ্গে গিয়ে দল ও প্রতীক বিলীন করে দেয়া তো স্বাভাবিক।
নিভু নিভু করতে থাকা ন্যাপের পুনর্জন্ম ঘটে ২০০৬ সালে। তখন পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল। সেই জোট থেকে ন্যাপ বের হয়ে যায় ২০১৮ সালে। এরপর জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। সেবার ‘গাভী’ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে হয় ন্যাপকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়