হাতিরঝিল লেক থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

এলসি-এনডোর্সমেন্টে বিড়ম্বনা : ডলার সংকটে মূলধনি যন্ত্রপাতি-কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত > বিদেশ যাত্রায় বিপাকে সাধারণ মানুষ

পরের সংবাদ

নানা আয়োজনে জন্মদিন পালন : ‘একটি তারার নাম হুমায়ূন আহমেদ’

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী ছিল গতকাল। নানা আয়োজনে তাকে স্মরণ করেছেন ভক্ত ও পাঠকরা। প্রথম প্রহরে জন্মদিন উদযাপন করেছেন হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা। লেখকের নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান নুহাশ পল্লীতে ছিল নানা আয়োজন। সমাধিতে শ্রদ্ধার ফুল, ঢাকের বাদ্য, হলুদ বেলুন উড়িয়ে, কথামালা, গান, মোমবাতি প্রজ¦ালনে, গুণীজন সম্মাননা, কেক কাটা, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আড্ডা এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে তুমুল জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিককে স্মরণ করা হয়। প্রতি বছরের মতো এবারো এই কিংবদন্তির জন্মদিনে উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করা হলো চ্যানেল আই প্রাঙ্গণের চেতনা চত্বরে ঐক্যডটকমডটবিডি ‘হুমায়ূন মেলা’। নতুন ধারা ইন এসোসিয়েশন উইথ মেট্রোসেমের সহযোগিতায় বেলা ১১টা ৫ মিনিটে শুরু হয় ‘চ্যানেল আই হুমায়ূন মেলা’। এতে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরসহ বক্তব্য রাখেন হুমায়ূন আহমেদের বন্ধু, স্বজনসহ গুণীজনরা। এ সময় স্বাগত বক্তব্যে ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, আজকের দিনে, হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তিনি কোথায় আছেন আমরা জানি না। তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমরা হুমায়ূন মেলা শুরু করছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী দিলারা জামান, নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, অন্যপ্রকাশের প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহীনা আক্তার রেনিসহ বিশিষ্টজনরা। দিলারা জামান বলেন, হুমায়ূন আহমেদ একটি তারার নাম, নক্ষত্রের নাম। যে মানুষটির জন্য আজকে আমি দিলারা জামান। আমার জনপ্রিয়তা, আমার অর্জন, তার পেছনে এই মানুষটি। তাকে স্যালুট।
নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, শরৎচন্দ্রের পর বাঙালি মধ্যবিত্তের পাঠাভ্যাস চলে গিয়েছিল। সত্তর এবং আশির দশকে হুমায়ূন আহমেদ এই দায়িত্ব তুলে নিলেন। শুধু তুলে নিলেন বললে ভুল হবে। একেবারে বিপ্লব ঘটালেন। তার বই ছাড়া সেই সময়ে তরুণদের চলতোই না। তাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের বড় উত্থান ঘটে। মাজহারুল ইসলাম বলেন, চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের ছিল আত্মিক সম্পর্ক। তিনি সবসময় বলতেন আমরা একই পরিবারের মানুষ। শাহীনা আক্তার রেনি জানান, হুমায়ুন আহমেদ আমাদের মাঝে বিচরণ করছেন। তিনি আমাদের প্রাণে চিরজীবন থাকবেন।
আলোচনা শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় হলুদ বেলুন উড়িয়ে

উদ্বোধন ঘোষণা করা হয় হুমায়ূন মেলার। মেলা প্রাঙ্গণে এ সময়ে হলুদ পাঞ্জাবি আর নীল শাড়ি পরে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য হিমু ও রূপা। ঢাকের শব্দে জমে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। বিভিন্ন অঙ্গনের হুমায়ূন ভক্ত ও বিশিষ্টজনরা উপস্থিত হন হুমায়ূন মেলায়। জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিশেষ উন্মুক্ত মঞ্চে চলে হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান ও গানের তালে নাচ। গান করেছেন রফিকুল আলম, সেলিম চৌধুরী, অণিমা রায় প্রমুখ। আরো ছিল হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকে আবৃত্তি পরিবেশনা। হুমায়ূন স্মরণে চিত্রাঙ্কন করেছেন শিল্পী মনিরুজ্জামান ও আবদুল মান্নানের সঙ্গে বিভিন্ন বয়সি শিশুশিল্পীরা। মেলাতে হুমায়ূন আহমেদের বই, তার নির্মিত চলচ্চিত্র ও নাটকের ভিডিও সিডিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবার পসরা দিয়ে সাজানো হয় স্টলগুলো। ছিল ঐক্যডটকমডটবিডির স্টল। মেলা পরিচালনা করেন লেখক আমীরুল ইসলাম।
আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি এম নজরুল ইসলাম জানান, হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত নুহাশ পল্লীতে তার পরিবারের সদস্য, নুহাশ পল্লীর কর্মী ও ভক্ত-পাঠকরা মোমবাতি প্রজ¦ালন, সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দুপুর ১২টায় ম্যুরালের সামনে কেক কাটার মধ্য দিয়ে প্রিয় লেখকের জন্মদিন উদযাপন করেছেন। রাতে লেখকের সমাধিতে ১০৭৪টি মোমবাতি প্রজ¦ালন করা হয়। এতে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও তার দুই ছেলে এবং ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
নেত্রকোনা থেকে প্রতিনিধি ম. শফিকুল ইসলাম জানান, নেত্রকোনা হিমু পাঠক আড্ডার উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, কেক কাটা, গুণীজন সম্মাননা প্রদান, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বেলা ১১টায় র‌্যালির উদ্বোধন করেন দেশবরেণ্য ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশসহ অন্যরা। পরে হিমু-রূপাদের নিয়ে র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মোক্তারপাড়া মুক্তমঞ্চে এসে শেষ হয়। সেখানে কেক কাটেন জেলা প্রশাসক। পরে পাবলিক হলে পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এবং হিমু পাঠক আড্ডার সভাপতি আলপনা বেগমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক। অনুষ্ঠানে সমাজসেবা ও নারী উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য হিমু পাঠক আড্ডার পক্ষ থেকে বেগম রোকেয়াকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট দেয়া হয়।
এ সময় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফজাল রহমান, লেখক হায়দার জাহান চৌধুরী ও সম্মাননাপ্রাপ্ত বেগম রোকেয়া। এদিকে লেখকের পিতৃভূমি কেন্দুয়ার কুতুবপুরে তার নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান শহিদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে কোরআন খতম, র‌্যালি ও প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সন্ধ্যায় জেলা পাবলিক হল মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়