হাতিরঝিল লেক থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

এলসি-এনডোর্সমেন্টে বিড়ম্বনা : ডলার সংকটে মূলধনি যন্ত্রপাতি-কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত > বিদেশ যাত্রায় বিপাকে সাধারণ মানুষ

পরের সংবাদ

তিন লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেয়ার আহ্বান সৌদির : জ¦ালানি তেল চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেরিতে অর্থ পরিশোধ বা ডেফার্ড পেমেন্টের সুযোগ রেখে সৌদি আরবের কাছে জ্বালানি তেল চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা সফরে আসা দেশটির উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদ গতকাল রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এই প্রস্তাব রাখেন। পাশাপাশি সৌদি আরবে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশির পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সামনে এনে পাসপোর্ট নবায়নে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেন দেশটির উপমন্ত্রী। এ বিষয়ে সম্মতি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সফররত সৌদি আরবের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এদিন সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে সচিবালয়ে আসেন। সেখানে পৌঁছালে তাদের গার্ড অব অনার ও লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে অংশ নেন জন নিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সৌদি স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ড. নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দুই দিনের সফরে শনিবার বাংলাদেশে আসেন। প্রথম দিন শনিবার রাতে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বাংলাদেশ ও সৌদিআরবের মধ্যে দুটি এমওইউ সই হয়েছে। একটি হলো ‘নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি, আরেকটি হলো ‘রুট-টু-মক্কা সার্ভিস এগ্রিমেন্ট’।
হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন হবে ঢাকায়, এমওইউ সই : শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ও লাগেজ তল্লাশির কাজ ঢাকায় শেষ করার জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে এমওইউ সই করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দু-দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরো একটি এমওইউ সই হয়েছে। বাংলাদেশ সফররত সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এদুটি এমওইউ সই হয়। রবিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক হয়। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সৌদি আরবের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ঢাকা সফররত দেশটির উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদ। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার পর আমরা দুটি এমওইউ সই করেছি। এর মধ্যে

প্রথমটিতে দুদেশের নিরাপত্তা আরো কীভাবে উন্নতি করা যায়, সেই বিষয় আছে। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। ‘রুট-টু-মক্কার’ মধ্যে রয়েছে, আমাদের হজযাত্রীদের আরো কীভাবে সহযোগিতা দেয়া যায়। এ সুবিধাগুলো আগে পরীক্ষামূলকভাবে ছিল, এখন সমঝোতা হলো। এখান থেকে ইমিগ্রেশন ও সবকিছু ঠিকঠাক করে তারা উড়োজাহাজে উঠে যাবেন। অর্থাৎ ইমিগ্রেশন, ব্যাগেজ চেকিং সবকিছু বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে হয়ে যাবে। এটাই হলো রুট-টু-মক্কা সার্ভিস এগ্রিমেন্টের বিষয়। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ২০১৯ সাল থেকে মৌখিকভাবে রুট-টু-মক্কা বাস্তবায়ন হচ্ছিল। এখন আনুষ্ঠানিকতা মেনে সমঝোতা হলো। এরপর থেকে যারা হজে যাবেন, ইমিগ্রেশন আমাদের এখানে হবে। ওখানে বিমানবন্দরে নেমে গাড়িতে উঠে যাবেন। লাগেজও হোটেল চলে যাবে।
সাইবার সন্ত্রাস মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ-সৌদি আরব : প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। সেই বদলে যাওয়া বিশ্বে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই প্রযুক্তি। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে, এই আশঙ্কায় যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। দেশটির সঙ্গে এমনই একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ঢাকায় সফররত সৌদি আরবের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজ নিজ দেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। সিকিউরিটি কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট নামের সমঝোতা স্বাক্ষরের আওতায় বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ নেয়া, তথ্যের আদান-প্রদান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দিন দিন সাইবার চ্যালেঞ্জ বড় হয়ে যাচ্ছে। সে চ্যালেঞ্জ কী করে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে কাজ করবে এই এমওইউ। সে জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ হবে। একই রকম কমিটি সৌদি সরকারের পক্ষ থেকেও হবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সাইবার মাধ্যমে যে টেররিস্ট এক্টিভিটিগুলো হতে পারে- তা নিয়ে কী করে এক সঙ্গে কাজ করা যায়, সে জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত করতে দুই দেশের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
৩ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে সৌদির আহ্বান : সৌদি আরবে থাকা প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দিতে বা নবায়ন করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এনআইডিসহ যা যা লাগবে, সেগুলো দেখিয়ে যারা পাসপোর্ট পাওয়া ও নবায়নের যোগ্য, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সৌদি আরবে রোহিঙ্গারা তিন প্রজন্ম ধরে অবস্থান করছেন। পাকিস্তান আমল থেকে তারা সেখানে আছেন। বাংলাদেশ থেকে যেসব রোহিঙ্গা নিজেদের ম্যাকানিজমে বিশেষ বিবেচনায় গিয়েছিলেন তাদের বিষয়ে কী করা যায় সেটা তারা খতিয়ে দেখবেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আরো জোরদার করতে সৌদি আরবের সহযোগিতা চেয়েছি আমরা। সৌদি আরবে ২৭ লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন পেশায় তারা নিয়োজিত, আবার ব্যবসা-বাণিজ্যও করেন। সেই ব্যবসায় যাতে একটু সুবিধা পায় সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সবকিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আশা করি আমাদের সম্পর্ক আরো গাঢ় হবে, আরো উন্নত হবে এ সফরের পর। নতুন করে শ্রমিক নেয়া ও সৌদি আরব থেকে এলএনজি আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, এলএনজির কোনো বিষয় আলোচনায় আসেনি। শ্রমিকদের ই-পাসপোর্ট তাড়াতাড়ি দেয়ার বিষয়ে তারা অনুরোধ করেছেন। আমরা বলেছি আমরা তাড়াতাড়িই করব, কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি অসুবিধাগুলো আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়