স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

সরকারি ওষুধ সিন্ডিকেটের পেটে : রোগীর ভাগ্যে জোটে যৎসামান্য, বিনামূল্যে মিলে কোন ওষুধ জানেন না রোগী, তিন স্তরে পাচার হয়

পরের সংবাদ

প্রকাশনা শিল্পে সংকট : উপকরণের দাম চড়া বাড়বে বইয়ের দাম

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : কাগজসহ আনুষঙ্গিক ?উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকাশনা শিল্প মালিকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। উপকরণ কিনতে বাড়তি ব্যয় হলে বইয়ের দাম বেড়ে যাবে। আর তাতে বইয়ের বিক্রি কমে গিয়ে লোকসান গুণতে হবে প্রকাশকদের। এমন শঙ্কার পরিস্থিতিতে কাগজের দাম কমাতে সরকারের পদক্ষেপ চেয়েছেন সৃজনশীল প্রকাশকরা। তারা বলছেন, নতুন বছরের বইমেলাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে কাগজসহ অন্যান্য প্রকাশনা উপকরণ কিনতে হচ্ছে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে থমকে গেছেন অনেক প্রকাশক।
সূত্রমতে, দেশের বিভিন্ন কোম্পানির মিলে উৎপাদিত সৃজনশীল প্রকাশনাগুলোর অন্যতম প্রধান উপকরণ ‘প্রিন্টিং পেপারের’ দাম গেল কয়েক মাসে দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। প্রকাশনায় সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ৮০ গ্রামের প্রিন্টিং পেপারের দাম গত দুই মাসে প্রতি রিমে প্রায় এক হাজার টাকা বেড়েছে। আগে যে কাগজ খুচরায় বিক্রি হতো ১৮০০ টাকা রিম, সেই একই কাগজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত।
প্রিন্টিং শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু কাগজের দামই নয়, বোর্ড পেপার, কালি, প্লেট, বাঁধাইয়ের দামও বেড়ে গেছে। গত কয়েক মাসে কালির দামও বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। কাভার বাঁধাইয়ের বোর্ডের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। প্রকাশকরা বলছেন, প্রকাশনা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগে যে বইয়ের দাম ২০০ টাকা রাখা যেত, আগামী বইমেলায় সেই একই বইয়ের দাম রাখতে হবে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। না হলে নির্ঘাত লোকসান গুণতে হবে।
জানতে চাইলে কাঁটাবনের হাজী আলীম পেপার হাউজের ম্যানেজার মো. মামুনুর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে মাল না আসার কারণেই কাগজের দামের এভাবে ঊর্ধ্বগতি। গত দুদিন আগেও ৮০ গ্রাম অফসেট কাগজের দাম ছিল ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা। আজ (বুধবার) সেই কাগজের দাম ৫২০ টাকা বেড়ে ৩৩২০ টাকা হয়ে গেছে। এছাড়া গত দেড় মাস আগেও দেশে প্রস্তুত হওয়া দুই ধরনের ৮০ গ্রাম অফসেট কাগজের দাম ছিল টন প্রতি ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা। আর সেটা এখন ১ লাখ ২৬ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা টন বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ দেড় মাসের ব্যবধানে টনে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেড়েছে। এ দাম বৃদ্ধিকেও মিল মালিকেরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চলমান যুদ্ধ ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে। যদিও এটা খোড়া যুক্তি।
দেশের অন্যতম সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি ভোরের কাগজকে বলেন, যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে দেশের কাগজের মিল মালিকরা স্বেচ্ছাচারিতায় নেমেছে। প্রতি বছর একুশে বইমেলার আগে কাগজের মিল মালিকরা সম্মিলিতভাবে এই সময় কাগজের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই সময়টাতে বোর্ডের বইও ছাপা হয়ে থাকে। তবে এ বছর কাগজের দাম যা বেড়েছে তার ‘নজীরবিহীন’। যে কাগজের দাম ছিল ১৬০০ টাকা, সেটা দফায় দফায় বাড়তে বাড়তে এখন ৩৩০০ টাকা।
তিনি বলেন, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে সম্মিলিতভাবেই এ

কাজ করছে। যখনই সুযোগ পাচ্ছে কাগজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এদের কাছ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হচ্ছে কাগজ আমদানির ওপর ট্যাক্স কমানো। যদি কমানো হয়, তাহলে কাগজের দাম কমাতে বাধ্য হবে এবং তাদের মাতব্বরি, একচ্ছত্র আধিপত্য এবং সিন্ডিকেট কমে যাবে। এছাড়া উত্তরণের কোনো পথ নেই। তারা এতই ঐক্যবদ্ধ।
লুটপাট বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই জ্যেষ্ঠ প্রকাশক আরো বলেন, হয় ট্যাক্স ফ্রি করুন, নয় তো কাগজ আমদানির ওপর ট্যাক্স কমান। নইলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং শিক্ষিত জাতি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ কাগজের মিল মালিকরা পরোক্ষভাবে সরকারের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের চিন্তার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। এ জন্য কাগজের মূল্য সহজলভ্য করা উচিত। পুঁজিপতিদের রক্ষার্থে নয়, সাধারণ মানুষের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে, এটা চিন্তা করতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, রিডিং সোসাইটি গঠন না করলে আমরা উন্নত জাতি কী করে হব? লেখাপড়ায় আগ্রহ সৃষ্টি করতে উন্নত জাতি তৈরি করতে হলে কাগজের দাম আররো কমানো দরকার।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির রাজধানী শাখার আহ্বায়ক ও ম্যাগনাম ওপাসের স্বত্ত্বাধিকারী আনোয়ার ফরিদীও বইয়ের দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিলেন। তিনি বলেন, এমনিতেই বইয়ের ব্যবসা লাভজনক নয়, তার ওপর কাগজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মতোই হলো। এতে করে প্রকাশনা জগতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বাধ্য হয়ে এখন যে বইগুলো করছি তার ওপর সমন্বয় করে দাম বাড়াচ্ছি।
কাগজের দাম বাড়ার ফলে বইয়ের দাম বাড়ালে ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ হবে এমন আশঙ্কা করে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ বললেন, বইয়ের দাম বাড়াবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এমনিতেই আমাদের দেশে বইয়ের ক্রেতা নেই। এরপরও বই বানালাম, দাম বাড়ালাম, আমার ঘরে আমার বই রেখে দিলাম। এর কোনো মানে হয় না। এক্ষেত্রে বইয়ের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বাড়ালে তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়