রিমান্ড শেষে মহিলা দল নেত্রী সুলতানা কারাগারে

আগের সংবাদ

দেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না > সোহরাওয়ার্দীর জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী : যারা বলেছিল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে, তাদের মুখে ছাই পড়েছে

পরের সংবাদ

বান্ধবী বুশরা ৫ দিনের রিমান্ডে : চনপাড়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে পরশ হত্যার রহস্য!

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যার ঘটনায় এখনো সুস্পষ্ট কোনো কারণের কথা জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে সিসিক্যামেরা বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সামনে আসা বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে বান্ধবী বুশরাকে রামপুরা নামিয়ে দেয়ার পর তাড়াহুড়ো করে কেন তিনি বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছিলেন, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় তার সর্বশেষ অবস্থান ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সূত্রের দাবি, সেখানেই একটি চক্রের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে খুন হন পরশ। পরে তার লাশ গুম করতে পাশের শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
পুলিশের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র জানিয়েছে, ৪ নভেম্বর রাতে বুশরার সঙ্গে রিকশায় করে রামপুরা ব্রিজের কাছে পৌঁছানোর কিছু সময় আগে থেকেই ইফাত জাহান মম (প্রেমিকা নয়) নামে এক বান্ধবীর সঙ্গে মোবাইলে চ্যাটিং করছিলেন। বুশরা রিকশা থেকে নেমে যাওয়ার পর একটি মোটরসাইকেলে করে কেরানীগঞ্জ ও জনসন রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান তিনি। সর্বশেষ জনসন রোড থেকে চনপাড়া এলাকায় যান। এ সময়ের মধ্যে মমর সঙ্গে চ্যাটিং চালিয়ে গেছেন পরশ। মম তাকে দুটি ফানি ভিডিও পাঠান। সেগুলো দেখে, ‘আই সি দ্য ভিডিও’ লিখে রিপ্লাইও দিয়েছেন। রাত ১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত মমর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন পরশ। রাত ২টা ৩৫ মিনিটে তার অবস্থান পাওয়া যায় চনপাড়ায়। সেখানে গিয়ে মাদকের গডফাদার শাহিনসহ মাদক কারবারিদের

সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। তাদের মারধরেই খুন হন পরশ।
এ ঘটনায় শাহিনকে টার্গেট করে গ্রেপ্তার করতে চনপাড়া যায় পুলিশের একটি টিম। তার আগেই র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত হন ২৩ মামলার আসামি কুখ্যাত সন্ত্রাসী শাহিন ওরফে ছিপি শাহিন। বন্দুকযুদ্ধে শাহিনের মৃত্যুর ঘটনা স্বীকার করা হলেও র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বুয়েট ছাত্র পরশ খুনের সঙ্গে শাহিনের কোনো সংশ্লিষ্টতার কথা জানে না র‌্যাব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোনেম ভোরের কাগজকে বলেন, শাহিন দুটি হত্যা মামলাসহ ২৩টি মামলার আসামি। তাকে আগে থেকেই চোখে চোখে রেখেছিল র‌্যাব। সর্বশেষ গতকাল তাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব গুলি চালালে শাহিন গুরুতর আহত হয়। আর তার অন্য সহযোগীরা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। পরে শাহিনকে উদ্ধার করে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-১ অধিনায়ক আরো বলেন, র‌্যাবের এ অভিযানের পেছনে বুয়েট ছাত্রের ঘটনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। শাহিন ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিনা তাও আমরা জানি না।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার নিহত পরশের বান্ধবী বুশরার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এদিন দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে রামপুরা থানা পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে হত্যা করে লাশ গুম করার অভিযোগে গতকাল সকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ায় বুশরাকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্যদিকে পরশের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার এজাহার আদালতে আসে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত মামলাটি তদন্ত করে আগামী ১২ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ সম্পর্কে এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে দুটি বিষয় নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি দ্রুতই রহস্য উন্মোচন হবে। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। দ্রুতই সবকিছু সামনে আসবে। তদন্ত কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের তিন দিন পর গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের বনানী ঘাটসংলগ্ন ল²ীনারায়ণ কটন মিলের পেছন দিক থেকে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র পরশের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ৪ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হন তিনি। এ ঘটনায় রামপুরা থানায় একটি জিডি করেন তার পরিবার। নিখোঁজ হওয়ার আগে তার বান্ধবী সঙ্গে ছিলেন বলে জিডিতে উল্লেখ করেন ফারদিনের বাবা কাজী নুরুউদ্দিন। পরে বুশরার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েক আসামির নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়