কাগজ প্রতিবেদক : জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে নারী ও শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই আমাদের উপকূল অঞ্চলের নারী ও শিশুরা রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। তবে এ অবস্থা থেকে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সেই কথাই উঠে এলো ইউএন উইমেন আয়োজিত প্রদর্শনীতে। বাংলা একাডেমির ভাস্কর নভেরায় চলছে এ প্রদর্শনী।
প্রদর্শনীর ছবিতে উঠে এসেছে উপকূলের নারীদের লড়াইয়ের কথা। সেই সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় নারী নেতৃত্ব বিকাশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ নিয়ে আপদকালীন মানুষকে জোটবদ্ধ করে আশ্রয় নিতে সহায়তা করার গল্প। পাশাপাশি নারীর আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবার কাহিনীচিত্রও ফুটে উঠেছে প্রদর্শনীতে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে নারীদের অসামান্য অবদানের প্রতি সম্মাননা জানাতে ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ‘ফ্রম হোয়্যার আই স্ট্যান্ড’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান এবং তিন দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। উপকূল অঞ্চলে নারীদের সংকটাপন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলার দক্ষতা তৈরি, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা, যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়ানো এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নারীদের ভূমিকা জোরদার করা। দুর্যোগে ভিক্টিম থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ যোদ্ধা হয়ে ওঠা প্রান্তিক নারীদের গল্পগুলোকে তুলে ধরার একটি প্রয়াস ‘ফ্রম হোয়্যার আই স্ট্যান্ড’ বইটি।
মূলত বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যগুলোকে বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণ নিঃস্ব হয়ে পড়ে এবং নারী, শিশু এবং অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এই ধরনের সংকটাপন্ন মুহূর্তে দারিদ্র্যতার হার বেড়ে যায়, ফলে এই সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারে না। বিগত

পাঁচ বছর ধরে, ইউএন উইমেন ন্যাশনাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রামের অধীনে সরকারের সঙ্গে দুর্যোগ সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে

সরকারের নীতিগত পর্যায়ের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে নারী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেছে ইউএন উইমেন। এই প্রকল্পের সাফল্যই উঠে এসেছে বইটিতে এবং প্রদর্শনীতে।
এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ছবির প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ম্যাট ক্যানেল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, ইউএন উইমেন ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ দিয়া নন্দা ধন্যবাদ জানান, ইউএন উইমেনের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হলেন দিলরুবা হায়দার।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কামরুল হাসান বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় হলো জলবায়ু পরিবর্তন। বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ইউএন উইমেন এনআরপি প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে নারীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যেই কাজ করছে। এ ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ দুর্যোগ বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নারীদের আরো দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করছে।
আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএন উইমেনের এ ধরনের কার্যক্রমকে সুইডেন সরকার সব সময় সমর্থন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
প্রদর্শনী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।