জিএম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

আগের সংবাদ

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে ফের জেলে পাঠানো হবে খালেদাকে

পরের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ নিতে চায়

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে বিশ্বব্যাপাী একটা সংকট চলছে। এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তাদেরও একটু দাম বাড়ে, কদর পায়। এটাই বাস্তবতা। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মুজিবুল হক চুন্নু প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান ‘বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় ৭১ এর মতো রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে কিনা? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যরা সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আমার একটা প্রশ্ন- দেশ যখন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন আমাদের যারা বিরোধী দলে আছেন, আমি সবার কথা বলছি, তাদের মাঝে কিন্তু আমি ওই উদ্বেগ দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগটা নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায়- সেটাই যেন তারা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এটা করা মোটেই সমীচীন হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের এই প্রবণতা পরিহার করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না, নিজের থেকেই পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা সবাইকে নিয়েই কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়ন করি কোন এলাকার মানুষ আমাদের ভোট দিল আর কোন এলাকার মানুষ দিল না সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন, গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা উন্নয়নে কাজ করি। ঠিক তেমনি এই দুর্যোগ মোকাবিলায়ও আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছে, বক্তৃতা করে যাচ্ছে কিন্তু এক মুঠো চাল দিয়ে বা হাত ধরে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি। আমরা সব সময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারাই আসবে আমরা এক সঙ্গে কাজ করব এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, যুদ্ধের ভয়াবহতা, ভবিষ্যৎ- এ বিষয়ে আমি খোলামেলা মানুষের কাছে কথা বলেছি। অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। এখানেও কেউ কেউ বলেছেন, আমি এ ধরনের কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। মানুষকে ভয় পাওয়ার জন্য নয়, সতর্ক করার জন্য বলেছি। বাংলাদেশ পারে এটা আমরা কিন্তু বিশ্বে বুঝিয়ে দিয়েছি অনেক ক্ষেত্রেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে আমরা সার, তেল কিনতাম সেখানে যুদ্ধের কারণে আমরা কিনতে পারছি না। আমরা বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। বিকল্প দেশ খুঁজে বের করছি সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্যপণ্য আনতে পারি। সারের ব্যবস্থা, ডিজেলের, এলএনজির ব্যবস্থা সেক্ষেত্রেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং তার পরপরই স্যাংশন দেয়া, এই স্যাংশনের পরেই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারাবিশ্বের অবস্থা টালমাটাল। বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে। ইউরোপ আমেরিকায় প্রতিটি জায়গায় জ¦ালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে লোডশেডিং

দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম গ্রেট ব্রিটেনে ৮০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। বাজারের সবকিছু রেশনিং করে দেয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, মাঝে মাঝে বাজার থেকে পণ্য হাওয়া হয়ে যায়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের একটু লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে না। অনেক সময় তারা এগুলো লুকিয়ে রাখে এবং জিনিসের দাম কৃত্রিম উপায়ে বাড়ায়। আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের খুঁজে বের করা হয়, ধরা হয়, ইতোমধ্যে অনেক পণ্য কিন্তু খুঁজে বের করা হয়েছে এবং বাজারজাত করা হয়েছে।
প্রথম আলোসহ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় দ্রব্যমূল্যের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপির সদস্য রুমিন ফারহানার এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু মানুষ থাকে এবং সেইসব লোকের কথাই কিন্তু সংসদ সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম তিনি দিয়েছেন তার মধ্যে কিন্তু একটা পত্রিকা আমি পড়িই না। পড়ি না এই কারণে, তারা সব সময় উল্টো দিকে থাকে। এরা কখনো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাক চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সব সময় তারা পছন্দ করে, পছন্দ করে এই কারণে যে, তাদের একটু কদর বাড়ে। আর যে প্রতিষ্ঠানটির নাম বলেছেন এই প্রতিষ্ঠানটি কোন জায়গা থেকে হিসাব পায় জানি না, তাদের কখনোই সঠিক হিসাব হয় না। সারাবিশ্বে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে যা বেড়েছে সেটা অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্প মূল্যে দরিদ্রদের দিচ্ছি। তারা যাতে সচ্ছলভাবে চলতে পারে। কিন্তু হেডলাইন দিয়েছে সব দেশের থেকে বাংলাদেশের পণ্য মূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা-টা দিয়েছে সেখানে কিন্তু বাংলাদেশ নাই, হিসাবেও আসেনি। বাংলাদেশ কিন্তু কয়েকটা দেশ থেকে বেশ ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। কিছু ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিমূলক। আর যে প্রতিষ্ঠানটির (সিপিডি) কথা উনি উল্লেখ করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের তো গণতান্ত্রিক কোনো কিছুই ভালো লাগে না। সেনাশাসন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে তাদের ভালো লাগে। তখন তাদের কদরও একটু বাড়ে। কদরটা বাড়বে এই আশায় তারা বসে থাকে। আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ, কষ্ট যাতে না হয় তার জন্য যা যা করণীয় আমাদের সাধ্যমতো আমরা করে যাব। এই ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আমি বারবার বলেছি, হ্যাঁ দুর্ভিক্ষ- এটা আমরা কেন, এটা তো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও বলেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন দেয়ার সাথে সাথে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। কাজেই এই স্যাংশন প্রত্যাহার করা এবং যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি তো আমি জাতিসংঘেও বসে করে এসেছি।
তিনি বলেন, এখানে আমাকে অনেকে বলেছে একথা বললে কোনো কোনো দেশ নারাজ হবে। কে নারাজ হলো জানি না, আজ সারাবিশ্বের মানুষ ভুক্তভোগী। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, আমি ইংল্যান্ডের কথা বলতে পারি, সেখানে আমাদের অনেক লোক আছে। বহু মানুষ, অধিকাংশ মানুষ আজকে কয়েক মাস মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই, তারা কিনে খেতে পারে না। তারা তিন বেলার খাবার কিনতে পারে না, এক বেলার খাবার তাদের বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এইভাবে ইউরোপ, আমেরিকায়, সেখানে যে হারে দরিদ্র বেড়েছে এবং কোনো কোনো জায়গায় দেখবেন সেখানে কোনো মানুষ খাবার পাচ্ছে না। থাকার ঘর নেই, রোগের চিকিৎসা নেই, গৃহহীন মানুষের ভিড়। ইউরোপের অবস্থা এই ধরনের, শীত এসে যাচ্ছে সেখানে তারা ঘর গরম করতে পারছে না, ঘর গরমের বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। জার্মানিতে কিন্তু গরম পানি ব্যবহার করতে দিচ্ছে না কারণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। এই যখন বিশ্বব্যাপী অবস্থা। আর যে পত্রিকা, যে প্রতিষ্ঠান, এ প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আমার ভালো চেনা আছে। অর্থাৎ একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে, কদর পায়। এটা বাস্তবতা। আমরা জনগণের পাশে আছি, থাকব। তারা যেটা বলছে বলতে দিন, আমি যা আমার কাজ করার করে যাব। আমি জনগণের পাশে আছি, জনগণের সহায়তা দেয়া সেটা আমি দিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উস্কানিমূলক ও বানোয়াট বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী/অভিবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তিগণ সংশ্লিষ্ট দেশে তাদের মেধা, শিক্ষা ও কাজের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর পাশাপাশি স্বাগতিক দেশে তাদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের নাম ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। স্বাগতিক দেশে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণেও তারা অনেক সময় ভূমিকা রাখতে পারেন। দুঃখজনক হচ্ছে, ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রবাসী/অভিবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে কিছু লোক দেশের বাইরে অবস্থান করে বাংলাদেশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত হন। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উস্কানিমূলক ও সম্পূর্ণ বানোয়াট বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির/বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়