বাংলা একাডেমির তিনটি পুরস্কার ঘোষণা

আগের সংবাদ

মহাসড়কে পদে পদে মরণফাঁদ :

পরের সংবাদ

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে ফের জেলে পাঠানো হবে খালেদাকে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন : তাদের নেতা কই ** লাঠিসোটা নিয়ে ভাবসাব দেখালে আর ছাড় দেয়া হবে না **

কাগজ প্রতিবেদক : বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবারো জেলে পাঠানো হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ। তার বোন, ভাই, বোনের জামাই আমার কাছে এসেছে। আবেদন করেছে। আমরা তার সাজা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার সুযোগ দিয়েছি। মানবিক কারণেই দিয়েছি। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে পুনরায় জেলে নেয়ার দাবি তোলেন। প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাত উচিয়ে নেতাকর্মীদের থামান। এরপর তিনি বলেন, বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব।
আওয়ামী লীগ আয়োজিত জেলহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় গতকাল বুধবার এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বীর বিক্রম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা সৈয়দ জাকিয়া নুর লিপি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জেল হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই মামলা আমাদের দেয়া নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ফখরুদ্দিন

আহমেদ ও সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ বিএনপির প্রিয় লোক ছিল। তাদের দেয়া মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছিল।
বিএনপির নেতৃত্বের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নেতৃত্ব কোথায়? বিএনপি লাফালাফি করে, তাদের নেতা কই? জিয়া অরফারেজ মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। এফবিআইয়ের করা মামলায় তারেকের ৭ বছরের জেল হয়। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তার জেল হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত। ওয়ান ইলেভেনে তারেক মুচলেকা দিয়েছিল- আর কোনোদিন সে রাজনীতি করবে না। মুচলেকা দিয়ে বিদেশে চলে যায়। সেই যে চলে গেছে…। এখন বিএনপি এত লম্ফজম্ফ করে। তাদের দুই নেতা, দুইজনেই তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বিএনপির গঠনতন্ত্রে আছে কেউ যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়- সে দলের চেয়ারম্যান হতে পারবে না। খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত দেখে সেই চেয়ারম্যানশিপ দিয়েছে তারেকের হাতে। সেও তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাহলে বিএনপি দলের মাথা কোথায়? তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন, তোমরা যে এত লাফাচ্ছ, তোমাদের মাথা কই? সবই তো দুর্নীতিগ্রস্ত বা পলাতক আসামি। সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা যদি এই দেশে ক্ষমতায় আসে, তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? সেটা কি ভেবে দেখেছে এই দেশের মানুষ। একবার চিন্তা করে দেখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে সরকার ছিল প্রধানমন্ত্রীর অফিস আর হাওয়া ভবনে। কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। ৯৬ সালে সরকার গঠন করি। তখন ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। বিএনপি কোনো ফসল উৎপাদন করতে পারেনি। মাত্র ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। গ্রামে-গঞ্জে তো বিদ্যুৎ নাই-ই। ঢাকা শহরেও একই অবস্থা, লোডশেডিং। ওয়াসার পানি গাড়িতে করে কিনতে হয়। বাড়িতে পানিই পাওয়া যায় না। পানির জন্য হাহাকার, বিদ্যুতের জন্য হাহাকার। এই বিদ্যুতের দাবি করতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে মানুষকে গুলি করে হত্যা করে খালেদা জিয়া। একদিকে খাদ্যের জন্য হাহাকার। ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে খাদ্যের জন্য দুর্ভিক্ষ হয়নি। অথচ এরশাদ, জিয়া ও খালেদা জিয়ার আমলে সেখানে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। শুধু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেখানে দুর্ভিক্ষ হয় না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অবৈধ সরকারে থেকে অবৈধভাবে তৈরি দলগুলো আজকে খুবই লাফালাফি করে, ভালো কথা। আমরা বলেছি শান্তিপূর্ণ মিছিল মিটিং করো- আমরা কিচ্ছু বলব না। কিন্তু লাঠিসোটা নিয়ে এসে ভাবসাব দেখানো……। আর যদি একটা মানুষের গায়ে হাত দেয়, আমরা ছাড়ব না। কারণ এরা কী করেছে। তাদের আন্দোলন মানে জ¦ালাও পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস। আজকে সেই বিএনপি বলে…..গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। যে দলের জন্ম মিলিটারি ডিকটেটরদের পকেট থেকে অবৈধভাবে। তারা আবার গণতন্ত্র উদ্ধার কী করে করবে- সেটাই আমার প্রশ্ন। আবার সেই কথা শুনে কিছু লোক তাদের সঙ্গে তাল মিলায়। এদের জ্ঞান-বুদ্ধি কোথায় থাকে? তারা কি বাস্তবতা বুঝতে পারে না?
বিএনপির তাণ্ডব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে কী তাণ্ডব তারা করেছে সারাদেশে। তারা যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর, সেইটাই তারা প্রমাণ করেছে। সে সময় তারা ৩ হাজার ৩৬ জন মানুষকে অগ্নিদগ্ধ, ৫০০শ মানুষ নিহত, ২৭ জন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে হত্যা, ৩ হাজার ২৫০টা গাড়ি, ২৯টা রেল, ৯টা লঞ্চ পুড়িয়েছে। ৬টা ভূমি অফিস জ¦ালিয়ে দিয়েছে। আমি বললাম যেখানে ভূমি অফিস পুড়িয়েছে, সেখানে যেন বিএনপি-জামায়াত আর কোনো পর্চা না পায়। তাদের জমি সরকারি খাতে চলে যাবে। এরপর তারা থেমেছে। মানে যেমন কুকুর, তেমন মুগুর না হলে সোজা হয় না। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার গাছ কেটে ফেলেছে রাস্তার ওপর। যাতে গাড়ি চলাচল করতে না পারে। রাস্তা কেটেছে। যত রকমের ধ্বংসাত্মক কাজ বিএনপি করেছে। এদের এই অত্যাচারের কথা কি দেশবাসী ভুলে যাবে? হাওয়া ভবন, খাওয়া ভবনের কথা কি মানুষ ভুলে যাবে? তাহলে কেন দেশের মানুষ তাদের পাশে থাকবে?
৩ নভেম্বরের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩ নভেম্বর চার নেতাকে হত্যার পর মানুষ বুঝে ফেলেছিল এটা বাংলাদেশের ইতিহাসকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র। জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে পাকিস্তানের যোগসাজশে হত্যাকারীদের লিবিয়ায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্ত্র নিয়ে ঢোকা যায় না। কিন্তু, তারা অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল। সরকার থেকে সেই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যেভাবে ঢুকতে চায়, সেভাবেই যেন ঢুকতে দেয়া হয়। জেলার তাদের ঢুকতে না দিলে তাকেও হত্যার হুমকি দেয়া হয়। মিটিংয়ের কথা বলে তারা ঢুকতে চায়। কিন্তু তাদের সঙ্গে অস্ত্র ছিল। জিয়া এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বলেই মোশতাক যখন রাষ্ট্রপতি হলো, নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েই জিয়াউর রহমানকে বানাল সেনাপ্রধান। কাজেই মোশতাকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে জিয়ার হাতে সমস্ত ক্ষমতা চলে এলো। তাহলে ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বরের হত্যার সঙ্গে বিএনপি জড়িত নয়- তারা কীভাবে সেটা বলবে?
নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আজ পর্যন্ত যে উন্নয়নগুলো আমরা করেছি, সে বিষয়গুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে। সামনে নির্বাচন। আমরা মানুষের মন জয় করলে, মানুষের জন্য কাজ করলেই আবার নৌকা মার্কায় মানুষ ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ এলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। আর বিএনপি এলে লুটপাট, দুর্নীতি, বোমাবাজি, খুন-খারাবি আবার ফিরে আসবে। কাজেই এই অশান্তির পরিবেশ মানুষ চায় না। মানুষ শান্তি চায়। আওয়ামী লীগকেই মানুষ চায়। জানে যে আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ মানেই মানুষের জীবন পরিবর্তন, মানুষের জীবন উন্নত হওয়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়