জিএম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

আগের সংবাদ

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে ফের জেলে পাঠানো হবে খালেদাকে

পরের সংবাদ

খাস্তগীর স্কুল থেকে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’র প্রচার শুরু

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনের উপর কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’ অবলম্বনে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ এ মাসেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতিবিজড়িত স্কুল ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে এই চলচ্চিত্রের জাতীয় প্রচার কার্যক্রম শুরুর অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রটির পরিচালক প্রদীপ ঘোষ ও সংশ্লিষ্টরা এমন তথ্যই জানালেন। এক ঘণ্টা পয়তাল্লিশ মিনিটের এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, মনোজ প্রামানিক, কামরুজ্জামান তপুসহ অনেকে। সংগীত পরিচালনা করেছেন বাপ্পা মজুমদার।
চট্টগ্রামের জামালখানে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা মাস্টারদা সূর্যসেন, বীরকন্যা প্রীতিলতাসহ দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে ছাত্রী ও নারীদের এক্ষেত্রে সব বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে মুক্তিযদ্ধের চেতনায় সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তারা। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে প্রচার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও বীরকন্যা প্রীতিলতার পরিবারের সদস্য এডভোকেট রানা দাশগুপ্তের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্রটির পরিচালক প্রদীপ ঘোষ, নির্বাহী প্রযোজক রিফাত মোস্তফা, প্রীতিলতা ট্রাষ্টের সভাপতি পংকজ চক্রবর্তী, সহায়তাকারি প্রতিষ্ঠান এইচএম স্টিলের নির্বাহী পরিচালক মো. সামসুদ্দোহা, ডা. খাস্তগীর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সাহেদা আক্তার। অনুষ্ঠানে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শওকত বাঙ্গালী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক

সম্পাদক প্রদীপ দাশ, খাস্তগীর স্কুলের শিক্ষার্থীরাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে খাস্তগীর স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক মূল্যে চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য বিশেষ টিকেট হস্তান্তর করেন মেয়র রেজাউল করিম, এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ও উপাচার্য শিরীন আখতার।
মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, প্রীতিলতাও তোমাদের মতো ছাত্রী ছিলেন। যে যুগে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন করেন সে যুগে মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ ছিল সীমিত। সে যুগে যুদ্ধ করে আত্মাহুতি দিয়ে দুঃসাহস দেখিয়েছেন। সমগ্র পৃথিবীকে জানান দিয়েছেন এ শহর চট্টগ্রাম। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। আমরা সব ভুলে যেতে বসেছি। চট্টগ্রামের গর্ব সূর্যসেন, প্রীতিলতা। প্রীতিলতাদের আমরা স্মরণ করি বা না করি কিছু আসে যায় না। এদেশের মাটি প্রকৃতি সমুদ্রের গর্জন সূর্যসেন প্রীতিলতার গর্জন। একে কেউ থামাতে পারবে না। তিনি পরিচালক-প্রযোজকদের উদ্দেশে বলেন, আরো বীর সন্তান আছে তাদের নিয়ে ছবি বানান। প্রীতিলতাদের চেতনায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে হবে।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রীতিলতা ৯০ বছর আগে আত্মাহুতি দেন। তার বাড়ি সম্পতির দখল অন্যের হাতে। আজকের বাংলাদেশে নেলী সেনগুপ্তা, প্রীতিলতা ও ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি শত্রæ সম্পতি। এখনো তা থেকে মুক্তি মেলেনি। সেই বাস্ততায় এ চলচ্চিত্র নির্মাণকে একটি ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হবে ভবিষ্যতে। ব্রিটিশ আমলের চট্টগ্রাম বীরত্বের খেতাব পেল। যখন আজ বীরদের বাড়ি ঘর স্মৃতি দেখতে মানুষ আসে তখন বিফল মনোরথে ফিরতে হয়। রাষ্ট্র-সরকার-রাজনৈতিক দল -জনপ্রতিনিধি তাদেরই ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন-লেখাপড়ার মাধ্যমে দেশ গড়তে তোমাদেরই তৈরি হতে হবে।
উপাচার্য ড. শিরীন আকতার বলেন, স্বাধীনতা পেলেও বীরদের যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। প্রীতিলতা কখনো জীবনের ভয় করেননি। ব্রিটিশদের শোষণের প্রতিবাদে জীবনের মায়া ত্যাগ করে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন প্রীতিলতা। এই চলচ্চিত্রের জয়যাত্রা কামনা করি। এই চলচ্চিত্রটির প্রচারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহায়তা দেবে বলেও ঘোষণা দেন উপাচার্য।
চলচ্চিত্রের পরিচালক প্রদীপ ঘোষ বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদানের ভিত্তিতে ২০২০ সাল থেকে কাজ শুরু করি। বাস্তবভিত্তিক করতে চেয়েছি। ইউরোপিয়ান ক্লাব, ধলঘাট এসব স্থানে শুটিং করেছি। চট্টগ্রামে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি গঠন হয় আজাদ হিন্দ ফৌজের আগে। এটা উপমহাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রীতিলতার আত্মাহুতির ৯০ বছর পর এ চলচ্চিত্র। এই ইতিহাসকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস হবে না।
এইচএম স্টিলের নির্বাহী পরিচালক মো. সামসুদ্দোহা বলেন, এইচ এম স্টিলের চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র মনজুর আলম প্রীতিলতার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তিনি মেয়র থাকাকালে প্রীতিলতার আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রের কার্যক্রমে অংশ নিতে পেরে আমাদের প্রতিষ্ঠান গর্বিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়