স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি কারাগারে

আগের সংবাদ

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ : চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে, ছয়টিতে উন্নতি, তিনটি অপরিবর্তিত, দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

পরের সংবাদ

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে না

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইতিহাসের তো পুনরাবৃত্তি ঘটে না। তাহলে আশা করা যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও গতবারের মতো ভোটারবিহীন ও একতরফা হবে না। আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলো প্রশ্নহীন ছিল না বলেই সব রাজনৈতিক দলের প্রচেষ্টায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান সংশোধন করে প্রবর্তিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হওয়ার পর ওই ব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত হয়। বর্তমান সরকার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা লাভের পর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকেই বাতিল করে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন সাংবিধানিক উপায়ে নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে বিরোধীপক্ষ টানা আন্দোলন করেও সরকারকে টলাতে পারেনি। সরকার নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমন করতে পেরেছে। আসছে নির্বাচনে দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে জয়-পরাজয়। এক. আসন্ন নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। দুই. ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে পক্ষপাত। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে যেটির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে সেটিই জয়ী হবে। অর্থাৎ কোন জোট নির্বাচনে বিজয়ী হবে সেটা নির্ভর করছে ওই দুটি বিষয়ের ওপরই।
শাসক দলের মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ সব প্রকার নির্বাচনে দেখা গেছে। নিজ দলেরই পরস্পর পরস্পরের চরম প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে পড়েছে। কর্মীরাও চরমভাবে বিভক্ত। নিজ দলের পরস্পর পরস্পরের প্রতিদ্ব›দ্বী রূপে মাঠ কাঁপিয়েছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই সরকারি দল এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থিতার ইঁদুর দৌড় ততই তীব্র হচ্ছে। বিভক্ত কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। দলীয় ঘোষণায় প্রার্থী নির্ধারণের পর প্রার্থিতা পাওয়া না পাওয়াদের মধ্যে দ্ব›দ্ব-সংঘাত যে বৃদ্ধি পাবে না সেটা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যাবে না। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়ার চেয়ে নিজেদের মধ্যেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। তেমন আলামত নানা ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে।
আমাদের দেশে যেমন দ্বিদলীয় ব্যবস্থা পাকা-পোক্তভাবে দৃশ্যমান। বিশ্বের তাবৎ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক দেশেও দ্বিদলীয় ব্যবস্থা বিরাজমান। পার্থক্যটি হচ্ছে বুর্জোয়া ব্যবস্থাধীনে উন্নত দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুফলভোগী হলেও আমরা ঠিক বিপরীত। গণতান্ত্রিকতার ছিটেফোঁটাও আমরা ভোগ করতে পারি না। ব্যক্তি স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্তবুদ্ধির স্বাধীনতা আমাদের দেশে শৃঙ্খলিত। যেটি অনিবার্যভাবে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি। আসন্ন নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী জোটের মধ্যেই লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে। সেটা গণতান্ত্রিক পন্থাবলম্বনে হলে ভালো। অর্থ, পেশিশক্তি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের যুক্ততায় যদি হয় তার পরিণাম শুভ হবে না। এই দ্বিদলীয় ব্যবস্থার একচ্ছত্র আধিপত্যে তৃতীয় বিকল্প সব দেশেই তুলনামূলক দুর্বল। তৃতীয় বিকল্পতে প্রকৃত দেশ ও জনপ্রেমীরা সর্বাধিক রয়েছেন। তাদের অর্থ-বিত্ত নেই। টাকাওয়ালারা নিজেদের আর্থিক লাভ-ক্ষতির বিবেচনায় দুই দলেই ভাগ হয়ে আছে। বাম বিকল্প শক্তি সব মানুষের সমঅধিকার, সমমর্যাদা, সুযোগের সাম্য চায়। চায় শোষণ-বঞ্চনার থেকে সমষ্টিগত মানুষের মুক্তিও। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায় তারা কোণঠাসা এবং ব্রাত্য। এদের একাংশ শাসক দুই দলে ভাগবাটোয়ারায় সরকারের পদ-পদবি লাভে নীতি-আদর্শ ত্যাগ করে বিলোপবাদী বনে গেছে। অপরদিকে বামপন্থিরা নিজেদের মধ্যে ঠুনকো বিষয়ে বহুধা বিভক্ত। এদের অনৈক্যের মোক্ষম সুযোগটি শাসকশ্রেণির দল হাতিয়ে নিয়েছে, মহানন্দে।
আমাদের দেশে নির্বাচন মাত্রই এক ধরনের উৎসব বটে। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা-আতঙ্ক বিরাজ করছে। নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ এবং জনরায় বাস্তবায়িত হবে কিনা এ নিয়ে জনমনে যেমন শঙ্কা রয়েছে, তেমনি আশঙ্কা করছে বিরোধী জোটও। নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতায় থাকা শাসক দলের প্রতি চরম অবিশ্বাস-শঙ্কার কথা নানা সমাবেশে বিরোধীপক্ষ বলে যাচ্ছে। যদি গত নির্বাচনের অনুরূপ ঘটনা ঘটে তাহলে দেশে স্থিতিশীলতা ব্যাহত হবে। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার উদ্ভব ঘটার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যাবে না। শাসক দল শক্তি প্রয়োগে সর্বদাই যে সফল হবে সেটাও নিশ্চিত নয়। কেননা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে না। এবারের নির্বাচন নিয়ে কেবল রাজনীতি-সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ যেমন নির্বিকার তেমনি নির্লিপ্ত। তাদের মধ্যে তেমন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নেই। তারা মূলত শঙ্কা-আতঙ্কে ভুগছে, দেশের খাদ্য, পণ্য, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানির অবিশ্বাস্য মূল্যবৃদ্ধিতে। তারা ভোটার হিসেবে ভোট দিতে পারবে কি-পারবে না সেটা নিয়ে নিশ্চিত নয় এবং চিন্তিতও নয়। কাজেই সঙ্গত কারণে দেশবাসীর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে মাতামাতি দেখা যাচ্ছে না। আর এটা তো সত্য নির্বাচনে কে জিতল, কে হারল তাতেও তাদের যায়-আসে না। নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে সমষ্টিগত মানুষের ভাগ্যবদলের একটি দৃষ্টান্তও স্বাধীন দেশে এ পর্যন্ত দেখা যায়নি। শাসক বদলের নির্বাচনে কেবল শাসকেরই বদল ঘটেছে, তাদের ভাগ্যের বদল ঘটেনি। জীবন-জীবিকার অন্বেষণে তাদের নিত্যদিন কাটে চরম অনিশ্চয়তায়। ক্ষমতার হাত-বদলের নির্বাচন সঙ্গত কারণে তাদের প্রভাবিত করতে পারে না। আশাবাদীও না। ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে ভোট দেয়, প্রত্যাশিত আশায়। কিন্তু শাসক বদলের নির্বাচন তো কখনোই তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তাদের ভোটে কেবল নির্ধারিত হয়ে এসেছে তারা কোন দলের দ্বারা শাসিত হবে। নির্বাচন নিয়ে শাসক এবং বিরোধী দল কোনো পক্ষই শঙ্কামুক্ত নয়। গত দুবারের নির্বাচন নিয়ে শাসক দল দেশে-বিদেশে যেমন সমালোচিত হয়েছে, তেমনি আগামী নির্বাচন নিয়ে একপ্রকার চাপের মধ্যেই রয়েছে। আগামী নির্বাচনের ওপর দাতা দেশগুলোর কঠোর নজরদারি ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিরোধীরা সঙ্গত কারণে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রবর্তনে। সরকারের দশা দাঁড়াবে শ্যাম রাখি না কুল রাখি। সে কারণেই আগামী নির্বাচন নানা ঘটন-অঘটনের জন্ম দেবে।
এছাড়া দুই বড় দলে ছোট দলগুলোর মধ্যে জোট বদল, জোট গঠনের বহুবিধ সম্ভাবনা তো রয়েছেই। কোন দল যে কোন জোটভুক্ত হবে, জোট ছাড়বে, সেটা এই মুহূর্তে বলা কঠিন হলেও তার সম্ভাবনা কিন্তু রয়েছে। আমাদের দেশের ইসলামপন্থি দলগুলো এমনিতেই বড় দলে ভাগবাটোয়ারা হয়ে আছে। তাদেরও সুযোগ ঘটবে দলের সঙ্গে দর কষাকষির মাধ্যমে সুযোগ হাতাতে। বামপন্থিদের দুটি দলসহ ডান ও মধ্যপন্থিদের একটি জোট সম্প্রতি ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। তারা বিএনপি জোটভুক্ত হবে সেটা জোট গঠনকালেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। তবে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির অভিপ্রায়ীদের মধ্যে জোটে যোগ, বিয়োগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কোন পাল্লা ভারি অর্থাৎ কোন বড় দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, ওই বিবেচনায় চূড়ান্তে নির্ধারিত হবে জোটভুক্তির বিষয়টি।
সরকারে থাকা দলের প্রতি এমনিতেই মানুষ বিরূপ ধারণা পোষণ করে। বিরোধী দলের প্রতি অনেকটা সহানুভূতিশীল থাকে। সম্প্রতি বিএনপির এক সমাবেশে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির ঘৃণ্য সেøাগান জনমনে ধিক্কারের সৃষ্টি করেছে। ‘নারায়ে তকবির-আল্লাহু আকবর’ রণহুঙ্কার দেখে বুঝার উপায় ছিল না ওটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটনে না- বিএনপির সমাবেশ? ধর্মান্ধদের সমাবেশের আদলে যে রূপ ধর্মীয় সেøাগান উঠেছে তাতে মানুষ উদ্বিগ্ন তো বটেই পাশাপাশি আতঙ্কগ্রস্তও। ওই সেøাগান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়, একাত্তরের গণহত্যা সংঘটনে দেখা গেছে। সম্প্রতি দেখা গেল বিএনপির সমাবেশে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বড় দুই দল বা জোটের মধ্যেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে। এক দল হারবে, অপর দল জিতবে কিন্তু আখেরে হারবে কিন্তু জনগণই। এ পর্যন্ত আমাদের ইতিহাসে কোনো নির্বাচনেই জনগণের বিজয় ঘটেনি। আগামী নির্বাচনে ঘটবে সেটাও সুদূর পরাহত।

মযহারুল ইসলাম বাবলা : নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়