আপিল খারিজ : মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলবে

আগের সংবাদ

শর্ত নয়, সংস্কারের পরামর্শ : আইএমএফের ঋণ পেতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ, দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

শিক্ষকদের উন্নয়নের কথা শোনাবেন শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়ানো ও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে সরকার দেশে সাড়ম্বরে শিক্ষক দিবস পালন করতে যাচ্ছে। ‘শিক্ষকদের হাত ধরেই শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর শুরু’- এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে আজ বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) শিক্ষক দিবসের আয়োজন করা হয়েছে।
মাউশি এক আদেশে বলেছে, ঢাকা মহানগরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ১০ জন করে শিক্ষককে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে। এতে শিক্ষামন্ত্রী, গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেবেন।
প্রসঙ্গত, ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। কিন্তু দেশে এবারই প্রথমবারের মতো ২৭ অক্টোবর সাড়ম্বরে শিক্ষক দিবস পালন হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ৯টায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব জেলা ও উপজেলায় বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বিশেষ অতিথি থাকবেন। দিবসটি পালনে ঢাকা মহানগরের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান সফল করতে অন্য একটি আদেশে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ জন করে রোভার্স স্কাউট/গার্লস গাইড এবং বিএনসিসি সদস্যকে সকাল সাড়ে ৭টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, গত ৪ বছর ধরে শিক্ষা প্রশাসনে কাজের পর্যাপ্ত গতি নেই। প্রশাসনিক সুবিধা পেতে শিক্ষকদের নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। দিনের পর দিন বহু শিক্ষকের কাজ মন্ত্রণালয় এবং মাউশিতে আটকে থাকে। উপরন্তু কোনো শিক্ষক চাইলে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে দেখা করে কথা বলারও সুযোগ পান না। এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে শিক্ষা প্রশাসন শিক্ষক দিবসের নামে মাউশিতে শিক্ষকদের নিয়ে সমাবেশ করতে চায়। এতে শিক্ষামন্ত্রী, গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এবং শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত ৪ বছরে শিক্ষকদের জন্য কী কী করেছেন তার ফিরিস্তি বর্ণনা করবেন। তাদের এই ফিরিস্তি শোনানোর জন্য শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক হাজির থাকতে বলা হয়েছে অনুষ্ঠানে।
জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্বব্যাপী ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালন হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নির্ধারিত দিনে দিবসটি পালন করতে পারে না। এবারই প্রথম বাংলাদেশ ২৭ অক্টোবর সাড়ম্বরে শিক্ষক দিবস পালন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুরু করলাম।
শিক্ষক দিবসের মূলবার্তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্ত শিক্ষক একসঙ্গে হবেন, একে অন্যের বার্তা আদানপ্রদান করবেন, শিক্ষকদের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠবে- এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক। কিন্তু এ পেশায় যুগোপযোগী বেতন কাঠামো ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় মেধাবীরা আকৃষ্ট হচ্ছে না। এ অবস্থায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো তৈরি এবং মর্যাদা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা পান। স্কেলভিত্তিক পূর্ণ বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা, উৎসব বোনাসের পাশাপাশি বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও পান। আর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্কেলও সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সমানই।
এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পেলেও গ্রেড অনুযায়ী পাচ্ছেন না। এ নিয়ে তাদেরও ক্ষোভ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা বেতনের স্কেল পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন।
শিক্ষানীতি-২০১০ এর সুপারিশগুলো এখনো কাগজেই সীমাবদ্ধ- মন্তব্য করে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শিক্ষানীতি-২০১০ এ শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এগুলো শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। তিনি বলেন, ১০ বছরের মধ্যে শিক্ষানীতির সুপারিশগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু যারা বাস্তবায়নের দায়িত্বে, তাদের গাফিলতির কারণেই এগুলো আলোর মুখ দেখছে না।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, মানসম্মত শিক্ষক পেতে হলে অবশ্যই সময়োপযোগী বেতনভাতা ও মর্যাদার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি জানান, কোভিডের ক্ষতি পোষাতে শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া বাবদ অতিরিক্ত ভাতা দেয়ার দাবি পূরণ হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, মানসম্মত শিক্ষক নিতে গেলে অবশ্যই বর্তমান বেতন স্কেল পরিবর্তন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার ফরিদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাজমা পারভিনেরও একই কথা। তিনি বলেন, যে বেতনভাতা আমরা পেয়ে থাকি, সেটার ওপর নির্ভর করে একটা চার সদস্যের পরিবার চলে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়