বুয়েটে কর্মচারীর লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

প্রোটিয়াবধে সিডনিতে টাইগাররা

পরের সংবাদ

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন : কম উৎপাদন করায় চিনির সংকট

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতির কথা বলে হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের চিনির বাজার। সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, আবার কোনো কোনো এলাকায় চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চিনি নিয়ে কারসাজি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের ধরতে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানের সময় চিনির মিলগুলোতে মজুতকৃত চিনি পাওয়া যায়নি। তবে সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন, সাপ্লাই অর্ডারে মূল্য না লেখাসহ কয়েকটি অসঙ্গতির বিষয় পাওয়া গেছে।
মেঘনা সুগার রিফাইনারির ৩ হাজার মেট্রিক টন সক্ষমতা থাকলেও ২০ অক্টোবর তারা ১ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করেছে। সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ উৎপাদনের সক্ষমতার প্রায় ৫০ শতাংশ কম উৎপাদন করেছে। আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারির সক্ষমতা ৭০০ মেট্রিক টন হলেও ২২ অক্টোবর ৬৮৫ মেট্রিক টন উৎপাদন ও সরবরাহ করেছে। এস আলম সুগার রিফাইনারি প্রতিদিন ৮০০-৯০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করছে। তাদের উৎপাদিত চিনির ৫০ কেজির বস্তায় ক্রয় মূল্য লেখা থাকলেও বাজারে তা পাওয়া যায়নি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের একটি প্রতিবেদনে গতকাল সোমবার এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। চিনির সরবরাহ এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার থেকেই বাজারে চিনির সংকট কেটে যাবে বলে বৈঠকে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন বেসরকারি চিনি সরবরাহকারী মিলমালিক ও চিনি ব্যবসায়ীরা।
বৈঠকের শুরুতে ট্যারিফ কমিশনের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে র-সুগারের (অপরিশোধিত চিনি) কোনো ঘাটতি নেই। যে পরিমাণ চিনি মজুত রয়েছে, তাতে তিন থেকে চার মাসের চাহিদা পূরণ সম্ভব। কিন্তু হঠাৎ করে এমন সংকটে কোনো অসাধু চক্র চিনি মজুত করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে সুপারিশ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তদন্ত প্রতিবেদনে মিল পর্যায়ে এবং খুচরা, পাইকারি ও ডিলার পর্যায়ে কিছু অসঙ্গতির কথা বলা হয়। চিনির মিলগুলোতে মজুতকৃত চিনি পাওয়া যায়নি, তবে সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন, সাপ্লাই অর্ডারে মূল্য না লেখাসহ কয়েকটি অসঙ্গতির বিষয় পাওয়া গেছে। মেঘনা সুগার রিফাইনারির ৩ হাজার মেট্রিক টন সক্ষমতা থাকলেও ২০ অক্টোবর তারা ১ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করেছে। সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ উৎপাদনের সক্ষমতার প্রায় ৫০ শতাংশ কম উৎপাদন করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারির সক্ষমতা ৭০০ মেট্রিক টন হলেও ২২ অক্টোবর ৬৮৫ মেট্রিক টন উৎপাদন ও সরবরাহ করেছে।
বাজার তদারকি করে সংস্থাটি জানতে পারে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে না, আর সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ কম এবং কোথাও কোথাও প্যাকেটজাত চিনি খুলে বিক্রি করা হচ্ছে বেশি দামে। এ সময় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের

মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এমন পরিস্থিতির পরও চিনি নিয়ে মহাসংকট হয়েছে। এর আগে ভোজ্যতেল নিয়েও এমন করা হয়েছিল। পরে সেখানে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছি। চিনির ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা হতে পারে। সেটা দেখছি। কিন্তু তার মানে এই নয়, ৯০ টাকার চিনি রাতারাতি ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হবে। তিনি বলেন, আমরা গত তিন দিন বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছি। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা চিনি পাচ্ছেন না। কিন্তু আদতে তারা ঠিকই বেশি দামে বিক্রি করছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, মিলগুলো তাদের চিনি দেয় না। কিন্তু তারা যে চিনি বিক্রি করছে তাতে তাদের কোনো ভাউচার নেই। তাহলে নিশ্চয়ই অনৈতিকভাবে বেশি দামে কেনাবেচা হচ্ছে।
সফিকুজ্জামান বলেন, দেশে প্রতিদিন চিনির চাহিদা ৫ হাজার টন। বড় একটি গ্রুপ একাই প্রতিদিন এ পরিমাণ চিনি পরিশোধন করতে পারে। এমন ৫টি কোম্পানি রয়েছে চিনির বাজারে। তারপরও তারা কেন পারছেন না? চিনির সংকট কেন হলো? তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেকোনো মূল্যে উৎপাদন ঠিক করতে হবে। এজন্য যা যা দরকার সেটা করা হবে। সাপ্লাই চেইনের ঘাটতি ঠিক করা হবে।
এ সময় রিফাইনারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং দেশবন্ধু সুগার রিফাইনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান বলেন, আমরা একে অপরের সঙ্গে ব্লেম গেইম খেলছি। আমরা যদি এটাকে বিশ্লেষণ করি, তাহলে সবাইকে দায়ভার নেয়া উচিত। তিনি বলেন, এ নিয়ে এ পর্যন্ত আমরা সরকারের বিভিন্ন মহলে কথা বলেছি। ফলে আমাদের যেগুলো সমস্যা ছিল, সেটা এখন সমাধান হচ্ছে। রাত থেকে মিলগুলোর সাপ্লাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তারপর যদি কেউ চিনি না পান তবে আমাদের বলবেন, আমরা ব্যবস্থা করে দেবো। যেখানে চিনি নেই বলবেন, সরকার নির্ধারিত দামে দিয়ে দেবো। সমস্যা আর হবে না।
গোলাম রহমান বলেন, আমাদের গ্যাসের সমস্যা আছে, র-সুগারের দাম এই মুহূর্তে ৫০০ ডলারের ওপরে। আমাদের ডিউটি বেশি, এক কেজিতে ৩১-৩২ টাকা দিতে হয়। এখন ডলারের দাম বেশি, ৮৫ টাকার ডলার কিনছি ১০৫ টাকায়। অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালুও বেড়েছে। সেগুলোর দিকে সরকার দৃষ্টি দেবে, সেটা আমাদের জানিয়েছে। সেগুলো সমাধান হলে ভবিষ্যতেও আর সমস্যা হবে না।
এস আলম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু মিলে সমস্যা হলেও আমাদের তরফ থেকে কিন্তু এতদিন শতভাগ সরবরাহ দিয়েছি। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে তেমন সমস্যা হয়নি। সেজন্য আমরা কোনোভাবে সরকার নির্ধারিত দামের বেশি বিক্রি করছি না। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমরা চাই সবাই পর্যাপ্ত পণ্য পাক। সমস্যা হয়েছে, সেটা এখন কথা বলে সমাধান হচ্ছে। ডিউটি কমানো হলে সেটা আরো ভালো হবে। কারণ প্রতিটি ক্রেতাকে ৩২ টাকা চিনিতে ডিউটি দিতে হচ্ছে। এটা চিনির দাম অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, সব থাকার পরও চিনি নেই। সেটা গ্যাসের সমস্যার কারণে। চিনি পরিশোধনে স্ট্রিম করতে গেলে গ্যাসের চাপ পাচ্ছি না। সিটির দিনে উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার টন। কিন্তু চিনি হচ্ছে ১৩০০-১৪০০ টন। মেঘনাসহ সবার এ অবস্থা। এখন গ্যাসের সমস্যা সমাধান হলে বাজারে চিনির অভাব হবে না।
এসব বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না তা নয়। আপনাদের যে গ্যাসের চাপ প্রয়োজন সেটা সবসময় নেই। আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আর গ্যাস নিয়ে সমস্যা হবে না। আলাদা করেই সরকারের গ্যাস সরবরাহকারীদের সঙ্গে কথা বলব। তিনি বলেন, আমরা চিনির সমস্যা সমাধানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দেবো। শুল্ক কমালে তার প্রভাব বাজারে পড়বে কি না, সেটা দেখতে হবে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর বাজার নিয়ন্ত্রণে ২২-২৩ অক্টোবর ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী ১০৩টি তদারকি অভিযান পরিচালনা করে। একই সঙ্গে দেশব্যাপী অভিযান ও তদারকিকালে চিনির দাম বেশি রাখা এবং মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৭৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়