হাজারীবাগের বিস্ফোরণ : পা হারানো দিলীপসহ শঙ্কাজনক অবস্থায় ২

আগের সংবাদ

পাঁচ কারণে বাড়ছে ডেঙ্গু!

পরের সংবাদ

তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই কর্মকর্তার ধারণা : রহিমা বেগম অপহৃত হননি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাবুল আকতার, খুলনা থেকে : আলোচিত মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে অপহরণ মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এসআই আ. মান্নান গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভোরের কাগজকে এ কথা বলেন। এদিকে রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। অবিলম্বে মরিয়ম ও তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন ও নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানান তারা।
পিবিআই কর্মকর্তা আ. মান্নান জানান, গতকাল মঙ্গলবার তিনি মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে যান। সেখানে কুদ্দুসের বাড়ির লোকজনসহ আশপাশের বাড়ির মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। ৫নং বোয়ালমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হক শেখ ও সৈয়দপুর গ্রামের স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারের কাছ থেকে তিনি কিছু তথ্য পেয়েছেন। সেই তথ্যে প্রমাণ হয় যে, রহিমা বেগমকে কেউ অপহরণ করেনি। তিনি সম্পূর্ণ প্রতারণা করেছেন, মনে হচ্ছে তিনি নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন।
নতুন কী তথ্য পেয়েছেন- এ প্রশ্নের জবাবে আ. মান্নান জানান, ২২ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় রহিমা বেগম ফরিদপুর জেলার ৫নং বোয়ালমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান। সেখানে চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হক শেখকে তার নতুন জন্ম নিবন্ধন করার কথা বলেন। এ সময় চেয়ারম্যান হক রহিমার নাম ও পরিচয় জানতে চাইলে তিনি আসল পরিচয় গোপন করে বলেন, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে তার জন্ম হয়েছে। ছোট থাকতে বাগেরহাট চলে যান এবং সেখানেই স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। তখন চেয়ারম্যান রহিমা বেগমকে বলেন, তিনি যেন স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বরকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় মেম্বারসহ সৈয়দপুর গ্রামের লোকজন চেয়ারম্যানকে জানান, রহিমা বেগম

বাইরে থেকে এসেছেন। তিনি আদৌ এই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন না।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ২৭ আগস্ট রাত থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর- খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা এলাকার মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম এ ২০ দিন কোথায় ছিলেন, এ নিয়ে তদন্ত করছে পিবিআই। এসব তথ্য বের করতে পারলেই রহিমা বেগমের আত্মগোপনের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
এদিকে খুলনা প্রেস ক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে গতকাল সকাল ১১টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান রহিমা বেগম অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার মো. মহিউদ্দীনের নবম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে মালিহা মহিউদ্দিন মাহি। উপস্থিত ছিলেন- গ্রেপ্তার হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার, তার ২১ দিনের মেয়ে, ছেলে আরাফাত শরীফ, বড় মেয়ে আনতারা মাহমিদা, গ্রেপ্তার নূর আলম জুয়েলের বাবা আনসার উদ্দিন এবং গ্রেপ্তার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, মো. মহিউদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম ওরফে পলাশের পরিবারের সদস্যরা। তারা সবাই খুলনা পৌর শহরের দৌলতপুরের থানাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, রহিমা বেগম ও তার সন্তানরা এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছেন। ওই পরিবার ‘মামলাবাজ পরিবার’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। প্রতিবেশীদের ঘায়েল করার জন্য অপহরণের মামলা করা হয়েছিল। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা প্রতিবেশীদের শায়েস্তা করছেন। কয়েক বছর আগে ৮ থেকে ৯ বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করেছিলেন রহিমা বেগম। এছাড়া বিভিন্ন সময় তারা প্রতিবেশীদের মামলার ভয় দেখান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মরিয়মের বাবা মান্নান ৩টি বিয়ে করেছিলেন। এর মধ্যে মান্নানের প্রথম পক্ষের ছেলে মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ভুক্তভোগী হেলাল শরীফ ও গোলাম কিবরিয়া জমি কিনেছিলেন। কিন্তু রহিমা বেগম ও তার পরিবারের লোকজন সেই জমির দখল নিতে দেননি। উল্টো এ ঘটনায় মানহানির মামলা করেছিলেন রহিমা বেগম। মামলায় হেলাল শরীফসহ ৫ জন আসামি ছিলেন। ওই মামলায় আসামিরা সবাই আগাম জামিন নেন। পরে সেই ৫ জনের নামেই অপহরণ মামলা করা হয়। আগের মামলায় জামিন হওয়ার পরই নতুন করে ফাঁসানোর জন্য রহিমা বেগমের পরিবার অপহরণের ঘটনা সাজায়।
সংবাদ সম্মেলনে মালিহা মহিউদ্দিন বলেন, রহিমা বেগমের কাছ থেকে ব্যাগ, কাপড়চোপড়, ওষুধ, প্রসাধনী উদ্ধার করা হয়। তিনি ফরিদপুরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এটা কোনোভাবে অপহৃত ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, রহিমা বেগমের কাছে কোনো মুঠোফোন ছিল না। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে খুলনা না এসে ফরিদপুর গেছেন তিনি। রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজকে ফরিদপুর থেকে মুঠোফোনে তার মায়ের বিষয়ে জানানো হলেও মিরাজের স্ত্রী এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তারা বিষয়টি প্রশাসনকেও জানাননি। এসব দেখে স্পষ্টই বোঝা যায়, পুরোটা একটা নাটক। আর এই নাটক সাজানোর মূল কারণ তাদের বিপাকে ফেলা।
সংবাদ সম্মেলনে দীঘলিয়া উপজেলার ৮নং যোগীপল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বর মো. মামুন শেখ অভিযোগ করেন, রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম তাকেও হুমকি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনরা বলেন, তাদের স্বজনদের অন্যায়ভাবে জেল খাটতে হচ্ছে। তারা মানুষগুলোর দ্রুত মুক্তি চান। আর্থসামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির কারণে রহিমা বেগম ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়